বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের পরে এটিএম জালিয়াত চক্রের টার্গেট ছিল ভারত

June 4, 2019 | 4:31 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বিশেষ এটিএম কার্ড ব্যবহার করে জালিয়াতি করতে মাত্র আট দিনের ভিসা নিয়ে ইউক্রেনের সাত নাগরিক এসেছিলেন বাংলাদেশে। ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে দুই লাখ টাকাও তুলে ফেলেছিলেন তারা। পরে ওই ব্যাংকেরই আরেক এটিএম বুথ থেকে আরও সাড়ে চার লাখ টাকা তুলতে গিয়ে ধরা পড়েছেন হাতেনাতে। জিজ্ঞাসাবাদে এই জালিয়াত চক্রের সদস্যরা জানিয়েছেন, এর আগেও বিভিন্ন দেশে এটিএম জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তারা। আর বাংলাদেশের পর তাদের টার্গেট ছিল ভারত।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৪ জুন) দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন এসব তথ্য জানান।

আরও পড়ুন- এটিএম বুথ জালিয়াতি: ইউক্রেনের ৬ নাগরিক রিমান্ডে

গত ১ জুন রাজধানীর খিলগাঁওয়ে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের একটি এটিএম বুথ থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা তোলার সময় এই জালিয়াতি চক্রের এক সদস্যকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে অভিযান চালিয়ে আরও পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় আদালতে উপস্থিত করা হলে আদালত তাদের প্রত্যেকের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

বিজ্ঞাপন

অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মূলত টাকা লুট করার জন্যই এই চক্রটি বাংলাদেশে এসেছে। তারা এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে বিশেষ ধরনের কার্ড ব্যবহার করত। এটিএম বুথে প্রবেশের পর ইউক্রেন থেকে একটি ফোন কল আসত তাদের কাছে। তাদের মোবাইলের সিমগুলো ইউক্রেনের, রোমিং করে সেই সিম ব্যবহার করা হতো। তারা সেই ফোনের নির্দেশনা অনুযায়ী মেশিনে কার্ড প্রবেশ করাত। এরপরই মেশিন থেকে টাকা বেরিয়ে আসত।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইসরাইলি ব্যাংকের একটি ক্রেডিট কার্ডের তথ্য পাওয়া গেছে। ইউক্রেনের নাগরিক হয়ে কেন তারা ইসরাইলের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার করত, তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। কিন্তু এই হ্যাকাররা ভালো ইংরেজি বলতে পারে না। আর বাংলা তো বোঝেই না। সে কারণে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে একটু সমস্যা হচ্ছে। দোভাষী দিয়ে তাদের ভাষা বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাংলাদেশকে নিয়ে তাদের কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে কি না, তা জানার চেষ্টা করছি।

বিজ্ঞাপন

ডিবি কর্মকর্তা আবদুল বাতেন বলেন, এই চক্রটি এর আগেও কয়েকটি দেশের এটিএম বুথে ঢুকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। মূলত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সব ব্যাংকের এটিএম বুথে আমেরিকার একটি কোম্পানির সফটওয়্যারই ব্যবহার করা হয়। ফলে তাদের কাছে যে ধরনের কার্ড রয়েছে, তা দিয়ে এই এলাকার সব দেশে হ্যাকিং করা সম্ভব। তাদের পরিকল্পনা ছিল, বাংলাদেশ থেকে টাকা তুলে নিয়ে তারা ভারতে যাবে।

আরও পড়ুন- অভিনব কায়দায় এটিএম বুথ জালিয়াতি, ইউক্রেনের ৬ নাগরিক গ্রেফতার

জিজ্ঞাসাবাদে জালিয়াত চক্রের সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তাদের ব্যবহৃত কার্ডটি কোনো নিয়মিত ডেবিট বা ক্রেডিট কর্ড নয়, ‘বেস্ট ডিসকাউন্ট’ নামের এটি বিশেষ ধরনের কার্ড। এটিএম মেশিনে এই কার্ড দেওয়ামাত্রই মেশিনটি কেন্দ্রীয় সার্ভার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত। ফলে তাদের টাকা তোলার রেকর্ড থাকত না ব্যাংকের কাছে। আবার কোনো গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকেও টাকা কাটা যেত না।

এক প্রশ্নের জবাবে আবদুল বাতেন বলেন, বাংলাদেশে যারা এসেছে তারা হয়তো কর্মী ধরনের। এরা তথ্যপ্রযুক্তিতে ততটা দক্ষ না। দেখা গেছে, এটিএম বুথে প্রবেশের পর তারা ইউক্রেনে একটি কল করত। এরপর তারা টাকা তুলে নিত। বর্তমানে গ্রেফতার ছয় জন রিমান্ডে রয়েছে। বাকি একজনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এছাড়া বাংলাদেশি কেউ এই চক্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান ডিবির এই কর্মকর্তা।

বিজ্ঞাপন

ডিবির এই কর্মকর্তা জানান, আট দিনের টুরিস্ট ভিসা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার (৩০ মে) হ্যাকার চক্রটি বাংলাদেশে এসে রাজধানীর পান্থপথে হোটেল অলিও ইন্টারন্যাশনালে ওঠে। পরদিন শুক্রবার (৩১ মে) বাড্ডায় ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে দুই লাখ টাকা তুলে নেয় তারা। এর পরদিন তারা খিলগাঁও তালতলা রোডের এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে যায়। দু’জনে সেই বুথে প্রবেশ করার পর অনেকক্ষণ পেরিয়ে গেলেও বের না হওয়ায় নিরাপত্তাকর্মীর সন্দেহ হয়। তিনি আশপাশের লোকজনকে ডেকে জড়ো করে তাদের ধরতে গেলে একজন পালিয়ে যায়। আরেকজনকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। পরে তার কাছ থেকে তথ্য নিয়েই বাকিদের আটক করা হয়।

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন