বিজ্ঞাপন

পানি মিলল পৃথিবীর পরই সবচেয়ে ‘বাসযোগ্য’ গ্রহে

September 12, 2019 | 10:26 am

বিচিত্রা ডেস্ক

পৃথিবী থেকে ১১১ আলোকবর্ষ (৬৫০ মিলিয়ন-মিলিয়ন মাইল) দূরত্বে নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে প্রায় পৃথিবীর অনুরূপ ও দ্বিগুণ আকারের একটি গ্রহ। যেটির নাম কে২-১৮বি। কয়েক বছর আগে  গ্রহটির খোঁজ প্রথম জানা গেলেও বিজ্ঞানীরা এই প্রথম নিশ্চিত হয়েছেন সেখানে পানির অস্তিত্ব রয়েছে। এছাড়া, কে২-১৮বি এর তাপমাত্রা প্রাণী কিংবা অণুজীব টিকিয়ে রাখার জন্য যথেষ্ট। যেমনটি আগে কখনোই অন্যকোনো গ্রহের ক্ষেত্রে ঘটেনি। সম্প্রতি নেচার অ্যাস্ট্রোনমিতে প্রকাশিত প্রবন্ধে বলা হয়েছে, আগামী ১০ বছরের মধ্যে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব দূরবর্তী সেই গ্রহে কোনো প্রাণের বসবাস রয়েছে কি না। তাই কে২-১৮বি’কে দেওয়া হচ্ছে পৃথিবীর পরই সবচেয়ে ‘বসবাসযোগ্য’ গ্রহের তকমা।

বিজ্ঞাপন

কে২-১৮বি কেন অন্য সব গ্রহের চেয়ে ভিন্ন?

২০১৫ সালের নাসার কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ প্রথম খুঁজে পায় কে২-১৮বি গ্রহটিকে। গ্রহটি পৃথিবীর চেয়ে দ্বিগুণ বড় ও এটির ভর ৮গুন বেশি। এটি যে নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরছে সেটি সূর্যের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম উত্তপ্ত, আকারে অর্ধেক ও সচরাচর ‘লাল বামন’ নামে পরিচিত। মাত্র ১৪ মাইল দূরত্বে অবস্থিত গ্রহটি ৩৩ দিনে একবার নিজ নক্ষত্রকে পরিভ্রমণ করে। কে২-১৮বি’তে পানি রয়েছে আয়তনের শতকরা ৫০ ভাগ জুড়ে।

গ্রহটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য এটির তাপমাত্রা। এর আগে অনেক গ্রহে পানির অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও সেসব গ্রহের তাপমাত্রা প্রাণের টিকে থাকার অনুকূলে ছিল না। তবে কে২-১৮বি এর তাপমাত্রা খুব গরম বা ঠাণ্ডা নয়; ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বলে নিশ্চিত হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। প্রাণ বহনে সক্ষম কোনো গ্রহকে ঘিরে যে ধরনের গ্যাসীয় আবরণ থাকে এই গ্রহটির ক্ষেত্রেও তেমনটি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আর তাই এই গ্রহের বিস্তারিত তথ্যে বিতর্কটা উসকে দিয়েছে। পৃথিবীর বাইরে এই মহাবিশ্বে অন্য কোথাও প্রাণের বিকাশ হওয়াটা কি অসম্ভব কিছু? আমরা কি সত্যিই একা নই?

বিজ্ঞাপন

শিল্পীর কল্পনাচিত্র

বিজ্ঞানীরা কতটুকু আশাবাদী

বিজ্ঞাপন

এই মুহূর্তে পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব অনুসন্ধানে সবচেয়ে এগিয়ে কে২-১৮বি। বিজ্ঞানীরা এই গ্রহটি নিয়ে বেশ আগ্রহী হলেও বিস্তারিত অনুসন্ধানে তাদের নির্ভর করতে হচ্ছে উন্নতর প্রযুক্তির ওপর। আগামীতে নতুন স্পেস টেলিস্কোপ এ ব্যাপারে তথ্য দিতে পারবে বলে মন্তব্য জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের। তবে এজন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও অন্তত ১০ বছর।

ট্রিটিনি ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) বিজ্ঞানীরা পরিচালনা করেছেন এই গবেষণা। গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া বিজ্ঞানী প্রফেসর গিভোনা এই আবিষ্কারকে ‘মাথা ঘুরিয়ে’ দেওয়ার মতো বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, এবারই প্রথমবারের মতো আমরা এমন একটি গ্রহে পানির অস্তিত্ব পেয়েছি, যেটির তাপমাত্রা বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করে এবং প্রাণের অস্তিত্ব বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ।

ইউসিএল’র বিজ্ঞানী ইঙ্গো ওয়াল্ডম্যান জানান, দূরবর্তী গ্রহ হওয়ায় সেখানে মহাকাশযান পাঠিয়ে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। তবে আগামী দশকে যখন পরবর্তী প্রজন্মের টেলিস্কোপ কাজ শুরু করবে তখন সেখানে গ্যাসীয় পদার্থ বিশ্লেষণ করতে হবে। প্রাণের অস্তিত্ব থাকলে সাধারণত যে ধরনের গ্যাসের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। সেসব পেলে গ্রহটি সম্পর্কে আরও ধারণা পাওয়া যাবে।

তিনি বলেন, বিজ্ঞানের জগতে এটা সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। আমরা কি মহাবিশ্বে একা? আগামী দশ বছরে সেখানের বায়ুমণ্ডল বিশ্লেষণ করে আমরা তা জানতে পারব।

বিজ্ঞাপন

ইউসিএল’র আরেক বিজ্ঞানী ডক্টর অ্যাঞ্জেলস তাসিরাস বলেন, এটা অবিশ্বাস্য উত্তেজনার বিষয়। একটা মৌলিক প্রশ্ন আরও সামনে চলে এসেছে। পৃথিবীই কি এ ধরনের একমাত্র গ্রহ?

এখনো পাড়ি দিতে হবে বহুদূর

তবে কোন ধরনের গ্যাসীয় পদার্থের উপস্থিতি প্রাণের অস্তিত্বের নিশ্চয়তা দিবে সে ব্যাপারে একমত হতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। আমাদের সৌর জগতে অক্সিজেন, পানি ও ওজনের উপস্থিতি পৃথিবীকে ভিন্ন করে তুললেও অন্য একটি সৌর জগতের ব্যাপারে একই কথা নিশ্চিত হয়ে বলতে নারাজ তারা।

তবে এডিনবার্গ ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোনমির বিজ্ঞানী ডক্টর বেথ বিলার বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন। দূরবর্তী কোনো গ্রহে একসময় ঠিকই জীবনের দেখা মিলবে। যা হবে মানবজাতির জন্য দৃষ্টান্তস্বরূপ। হয়ত এটা অতিকায় এলিয়েন বা অন্যকিছু নয় তবে খুব সাধারণ খুব অণুজীবও হতে পারে।

মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা ২০২১ সালে উন্নত প্রযুক্তির জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (জেডিব্লউএসটি) ব্যবহার করে দূরের গ্রহসমূহ পর্যবেক্ষণ শুরু করবে। এরও ৭ বছর পরে ইউরোপিয়ান স্পেস অ্যাজেন্সি মহাকাশে তাদের অনুসন্ধান সম্প্রসারিত করবে। আর তাই কে২-১৮বি নিয়ে আগামী দিনে আরও তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রতিবেদনে ব্যবহৃত তথ্যসমূহ বিবিসি ও দ্য গার্ডিয়ান থেকে সংগৃহীত।

সারাবাংলা/এনএইচ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন