বিজ্ঞাপন

‘উৎসুক জনতাই’ সম্রাটের সমর্থক!

October 6, 2019 | 10:53 pm

সাদ্দাম হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দুপুর থেকে সম্রাটের কার্যালয়ের সামনে থাকা ‘উৎসুক জনতাই’ ছিল যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাটের সমর্থক। সারাদিন কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে তারা সম্রাটকে চেনে না বলে দাবি করে আসছিল। তবে সন্ধ্যার পর র‌্যাব যখন সম্রাটকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাচ্ছিল তখন সেই ‘উৎসুক জনতাই’ উত্তেজিত হয়ে ওঠে। এ সময় তারা ‘সম্রাট ভাইয়ের মুক্তি চাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকে। যদিও পুলিশ ও র‌্যাবের বাধায় তারা সম্রাটের কাছেই ভিড়তে পারেনি।

বিজ্ঞাপন

এর আগে দুপুর দেড়টায় র‌্যাবের আটটি জিপ ও দুটি মাইক্রোবাস রাজধানীর কাকরাইলে ঢাকা দক্ষিণ মহানগর যুবলীগের কার্যালয়ে সামনে এসে থামে। মুহূর্তেই চারিদিকে খবর ছড়িয়ে পড়ে, সম্রাটকে আনা হয়েছে। এ সময় সেখানে গণমাধ্যমকর্মীদের পাশাপাশি ভিড় বাড়তে থাকে উৎসুক জনতারও।

দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত উৎসুক জনতার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। এ সময় তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় তারা সম্রাটকে চেনে কিনা। তখন তারা জানায়, সম্রাটকে তেমনে একটা চিনে না। তবে পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশনের মাধ্যমে জানতে পেরেছে যে, সে ক্যাসিনোর সম্রাট। গত কয়েকদিন তার কোনো হদিস না মেলায় হঠাৎ করে তার খবর পেয়ে তাকে দেখতে এসেছে তারা। তবে তারা এমন দাবি করলেও তাদের সকলের চোখেমুখে ছিল এক ধরনের উৎকণ্ঠা। প্রায় ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা তারা কার্যালয়ের সামনেই ছিল। যদিও অভিযানের শুরু থেকেই সড়কের দুই পাশ দিয়ে সাধারণ মানুষের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ কার্যালয়ে সামনে এসে সম্রাটকে দেখার জন্য অপেক্ষা করেছিল।

বিজ্ঞাপন

বিকেলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পান সিগারেট বিক্রেতা সম্রাট সম্পর্কে সারাবাংলাকে বলেন, ‘সম্রাট আটক হইছে। কিন্তু তার নেতাকর্মীরাতো আটক হয়নি। তারাতো ঠিকই এইহ্যানে ঘোরাঘুরি করতাছে। এহুন যদি সম্রাট সম্পর্কে কিছু কই তাইলে ওরা আমারও খবর কইর‌্যা ছাইড়বো।’ এর বেশি আর কোনো কথা বলতে রাজি হননি তিনি।

উৎসুক জনতার মধ্যে যারা বিকেলে বলেছিল সম্রাটকে চিনে না, তারাই হঠাৎ সন্ধ্যার পর সম্রাটের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। র‌্যাব যখন সম্রাটকে গাড়িতে তুলে কারাগারে নিয়ে যাচ্ছিল তখন জনতার একাংশ ‘সম্রাট ভাইয়ের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’, ‘সম্রাট ভাইয়ের মুক্তি চাই, দিতে হবে, দিতে হবে’সহ নানা স্লোগানে বিক্ষোভ করতে থাকে। এসময় র‌্যাব-পুলিশ তাদের ধাওয়া দিলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

তাদের মধ্যে শফিকুল নামের একজনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে। তিনি বিকেলে সারাবাংলাকে বলেছিলেন সম্রাটকে চিনেন না। কিন্তু সন্ধ্যায় পুলিশের ধাওয়া খেয়ে রাজমনি হোটেলের ভেতরে প্রবেশ করেন। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি তিনি বলেন, ‘সম্রাট ভাই নির্দোষ। তাকে ফাঁসানো হচ্ছে। আমরা তার মুক্তি চাই।’বিকেলে কেন বললেন তাকে চেনেন না? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ভয়ে বলি নাই। তারপরও আমাদের নিরাপরাধ ১৫-২০ জন কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইনুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘সড়ক বন্ধ থাকলেও কার্যালয়ের সামনে বিপাশা হোটেল থাকায় উৎসুক জনতা ব্যারিকেডের পাশ দিয়ে হোটেলে যাওয়ার কথা বলতো। যে কারণে তাদেরকে প্রবেশে তেমন বাধা দেওয়া হয়নি। তবে তাদেরকে কড়া নজরদারিতে রাখা হয়েছিল। সন্ধ্যার পর হঠাৎ তারা সম্রাটের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। তাই ওই সময় ধাওয়া দেওয়া হয়েছিল। এসময় পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কির চেষ্টা করায় ১০ থেকে ১২ জনকে আটক করা হয়েছে।’

পাঁচ ঘণ্টার অভিযানে যা পাওয়া গেছে

বিজ্ঞাপন

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে সম্রাটকে আটকের পর দুপুর দেড়টায় তাকে নিয়ে আসা হয় তার কাকরাইল কার্যালয়ে। এরপর দুপুর পৌনে ‍দুইটায় কার্যালয়ের তালা ভেঙে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের নেতৃত্বে একদল র‌্যাব সদস্য ভেতরে প্রবেশ করে। সম্রাটের কার্যালয়ে টানা পাঁচ ঘণ্টা তল্লাশির পর তাদের শেষ হয় অভিযান। অভিযানে সেখান থেকে দুটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া, খাটের তোষকের নিচ থেকে একটি ৭.৬ এমএম পিস্তল, ৫ রাউন্ড গুলি এবং ১১৬০ পিস ইয়াবা ও ১৯ বোতল বিদেশি মদ পাওয়া যায়।

সম্রাটের কার্যালয়ের ভেতরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তৃতীয় তলায় তার কক্ষে একটি খাট সাজানো রয়েছে। এখানেই তিনি মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিতেন। এর পাশের আরেকটি রুমে পাওয়া গেছে দুটি ক্যাঙ্গারু চামড়া। কক্ষটিতে বিভিন্ন সংগঠন থেকে পাওয়া ক্রেস্টগুলোও সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এছাড়া দেয়ালে বিভিন্ন নেতাকর্মীদের সঙ্গে তোলা ছবিও বড় বড় ফ্রেমে ঝুলতে দেখা গেছে।

সম্রাটের কার্যালয়েও টর্চার সেল

র‌্যাবের ৫ ঘণ্টার অভিযানে সম্রাটের কার্যালয়ে টর্চার সেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর আগে গ্রেফতার যুবলীগ নেতা খালেদের কার্যালয়েও টর্চার সেলের সন্ধান পেয়েছিল র‌্যাব। এবার সম্রাটের কার্যালয়েও টর্চার সেলের সরঞ্জামাদি, দুটি লাঠি, ইলেক্ট্রিক শক দেওয়ার দুটি মেশিন উদ্ধার করা হয়েছে। এই টর্চার সেলে চাঁদা আদায়ের জন্য সাধারণ মানুষকে নির্যাতন করা হতো বলে ধারণা করছে র‌্যাব। তবে সম্রাটকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন তারা।

র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘সম্রাটকে আটকের পর কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে ইয়াবা, অস্ত্র, ক্যাঙ্গারুর চামড়া ও মদসহ টর্চার সেলের সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।’

সারাবাংলা/এসএইচ/পিটিএম

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন