বিজ্ঞাপন

সবজি প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়তে পারলে লাভ হবে: প্রধানমন্ত্রী

January 22, 2020 | 10:17 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সবজি প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়তে পারি, তাতে অনেকেরই লাভ হবে। কারণ আজকাল তো আমাদের ছেলেমেয়ে সকলেই চাকরি করে, কাজ করে। আমাদের মহিলারা ঘরে-বাইরে কাজ করে। কাজেই এগুলো যদি প্রক্রিয়াজাত করা থাকে। অর্থাৎ রান্নার জন্য প্রস্তুত, রেডি টু কুক; এভাবে যদি করা যায় তাতে সব থেকে বেশি কিন্তু সুবিধা হবে আমাদের মেয়েদের।’

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২২ জানুয়ারি) বিকেলে একাদশ জাতীয় সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু (বরগুনা-১) সম্পূরক প্রশ্ন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে আসলে ছেলেরা তো কাজটাজ করতে চায় না। হয়ত দুইজন একসঙ্গেই অফিসে যায়, অফিস থেকে ফিরলে দেখা যাবে যিনি পুরুষ; যে নিজেকে সব থেকে শক্তিশালী মনে করে সেই টায়ার্ড। তখন বলে এক কাপ চা দেও তো, আর যিনি মহিলা তার হচ্ছে, চা বানানো খাবার বানানো; সব কাজ তাকেই করতে হবে। এটিই হলো বাস্তবতা। তবে আস্তে আস্তে মানসিকতা… আমি এ কথাগুলো বলছি দেখে, মনে হয় কিছুটা পরিবর্তন হচ্ছে। দুইজন যদি একসঙ্গে কাজ করে তাহলে কিন্তু তাড়াতাড়ি হয়ে যায়।’

শম্ভু বলেন, আমাদের সংবিধানের সমবায় মালিকানার কথা বলা আছে এবং কৃষক শ্রমিকের মুক্তির কথাগুলো গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে। আমাদের সরকারের প্রধান কাজই হচ্ছে, কৃষক এবং শ্রমিকের অর্থনৈতিক মুক্তি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে পথে এগুচ্ছেন, তিনি সকল রকম সুবিধা কৃষককে দিয়েছেন, ব্যবসায়ীদের দিয়েছেন এবং ভোক্তাদের দিয়েছেন। কিন্তু তারপরেও মাঝে মধ্যে আমাদেরকে এই খোলাবাজার অর্থনীতির কারণে এদেশের জনগণকে বারবার ধাক্কা দেয়া হচ্ছে? এই জায়গাটাকে সঠিকভাবে মোকাবিলা করার জন্য কি ধরনের জাতীয় নীতি অনুসরণ করবেন? বঙ্গবন্ধু যেখানে সমবায় মালিকানাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন, সেই পথে প্রধানমন্ত্রী হাঁটবেন কি না?

বিজ্ঞাপন

সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সংবিধানে ১৩ অনুচ্ছেদে যে অর্থনৈতিক নীতিমালা রয়েছে। সেখানে সরকারি, সমবায় এবং বেসরকারি; তিনটি খাতকে সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং সমবায় পদ্ধতি কিন্তু আমাদের দেশে আছে এবং এখনো চলছে। তবে জাতির পিতা ঠিক যেভাবে বহুমুখী গ্রাম সমবায় গড়ে তুলে দেশের অর্থনীতিকে আরও উন্নতি করতে চেয়েছিলেন। সেই ক্ষেত্রে তিনি তার দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচিও ঘোষণা দিয়েছিলেন। জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলেছিলেন। বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ বাকশাল তিনি গঠন করেছিলেন। আমাদের দুভার্গ্য, জাতির পিতাকে হত্যার পর আর সেটা কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে যারা এসেছে তারা সেদিকে যায়নি, তারা করেনি।’

সরকার এখন একেবারে দরিদ্র, হতদরিদ্র যারা বা প্রান্তিক চাষী তাদের জন্য সমবায় করা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেমন-আমার বাড়ি আমার খামার। সেখানে আমরা কিন্তু সমবায় করে দিচ্ছি। তাদের অল্প পরিমাণ উৎপাদিত পণ্য সেটা বাজারজাত করার সুযোগটা, সেটা আমরা সমবায়ের মাধ্যমেই করে দিয়েছি। কাজেই এখানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমবায় গড়ে উঠছে।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সবজি প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়তে পারি, তাতে অনেকেরই লাভ হবে। কারণ আজকাল তো আমাদের ছেলেমেয়ে সকলেই চাকরি করে, কাজ করে। আমাদের মহিলারা ঘরে-বাইরে কাজ করে। কাজেই এগুলো যদি প্রক্রিয়াজাত করা থাকে। অর্থাৎ রান্নার জন্য প্রস্তুত, রেডি টু কুক; এভাবে যদি করা যায় তাতে সব থেকে বেশি কিন্তু সুবিধা হবে আমাদের মেয়েদের। কারণ আমাদের দেশে আসলে ছেলেরা তো কাজটাজ করতে চায় না। হয়ত দুইজন একসঙ্গেই অফিসে যায়, অফিস থেকে ফিরলে দেখা যাবে যিনি পুরুষ; যে নিজেকে সব থেকে শক্তিশালী মনে করে সেই টায়ার্ড। তখন বলে এক কাপ চা দেও তো, আর যিনি মহিলা তার হচ্ছে, চা বানানো খাবার বানানো; সব কাজ তাকেই করতে হবে। এটিই হলো বাস্তবতা।’

বিজ্ঞাপন

‘তবে আস্তে আস্তে মানসিকতা… আমি এ কথাগুলো বলছি দেখে, মনে হয় কিছুটা পরিবর্তন হচ্ছে। দুইজন যদি একসঙ্গে কাজ করে তাহলে কিন্তু তাড়াতাড়ি হয়ে যায়।’

ঘরবাড়ির কাজ মেয়েরাই বেশি করে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আমরা এটাই চাচ্ছি ভবিষ্যতে এ সমস্ত তরি-তরকারি ফলমূল যাই আমরা উৎপাদন করি, সেগুলোকে প্রক্রিয়াজাত করা, প্রক্রিয়াজাত করতে পারলে সংরক্ষণ করা যাবে।

সবজি সংরক্ষণাগার গড়ে তোলার লক্ষ্যে চিলিং সেন্টার বা কুলিং চেম্বার করার দিকটি তুলে ধরে প্রধানরমন্ত্রী বলেন, ‘সেভাবে যদি আমরা রাখতে পারি, তাহলে আমাদের কিন্তু কৃষকরা দামও পাবে, আর কৃষকদের নিয়ে সমবায় করে তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার সুযোগটা, এই উদ্যোগটা অব্যাহত আছে। আবার বেসরকারি উদ্যোক্তাও আমাদের সৃষ্টি করতে হবে। সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করলে হবে না। এ জন্যই জাতির পিতা আমাদের সংবিধানে অর্থনৈতিক নীতিতে তিনটি ব্যবস্থাকেই তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি সরকারিও দিয়েছেন, বেসরকারিও দিয়েছেন, আবার সেই সঙ্গে সমবায়কে গুরুত্ব দিয়েছেন। কাজেই সমবায় এটা আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য। কারণ আমাদের দেশে লোকসংখ্যা অতি বেশী। আমাদের জমি যখনি পরিবার বাড়ে অথবা পরিবারের মধ্যে ভাগ হয়, ওই জমিও ভাগ হতে থাকে। কাজেই এখন কিন্তু ব্লক করে চাষাবাদ হয়। সমবায় করে চাষবাস হয়। আমরা যদি সমবায়ের মাধ্যমে চাষ করে বাজারজাত করতে পারি, তাতে আমাদের কৃষকরা আরও বেশী লাভবান হবে, এতো কোন সন্দেহ নাই। সেই ক্ষেত্রে আমরা সমবায়কে গুরুত্ব দিচ্ছি এবং কিছু কিছু উদ্যোগ নিচ্ছি।’

আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ এড়াতে প্যাডি সাইলো যেগুলো স্থাপন করা হচ্ছে; এগুলো কৃষক সমবায়ের মাধ্যমে পরিচালনা করা হবে কি না সম্পূরক প্রশ্নে করেন সরকারি ১৪ দলীয় জোটের শরিক সংসদ সদস্য বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।

বিজ্ঞাপন

সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, ‘এটি ঠিকই বলেছেন তিনি। আমরা যে সাইলোগুলো করব, যেখানে সমবায় গড়ে উঠবে, সেই সমবায়ের মাধ্যমে করা, সেই ব্যবস্থাও আমরা নিতে পারব। আবার সরকারিভাবেও থাকবে আর বেসরকারি খাতেও যদি কেউ এটা করতে চায়। বড় বড় যারা কৃষক তারা করতে পারেন, সেটিও করা সম্ভব। কাজেই সমবায়ের মাধ্যমে করতে পারলে সেটা যদি সঠিকভাবে পরিচালনা করা যায়, তাহলে সকলেই লাভবান হবে।’

‘সমবায় করলে একটা কাজ করতে হবে, জমির যারা মালিক, তাদের একটা অংশ থাকবে উৎপাদিত পণ্যের লভ্যাংশের তাদের একটা থাকতে হবে। শ্রমিক যারা শ্রম দেবে, তাদের থাকবে আর সমবায় চালানোর জন্য অর্থ্যাৎ সরকারের কাছে একটা আসবে হবে। এটাই জাতির পিতা করতে চেয়েছিলেন।এটা যদি সুচারুভাবে করা যেতে পারে, তাহলে বাংলাদেশে কৃষকদের আর কখনো দুঃখ থাকবে না। আর কখনো সমস্যাও থাকবে না। আর সমবায়ের যে আইনটা এই আইনটা সত্যি খুব পুরনো আইন। এই আইনটা যুগোপযোগী করা দরকার। এই আইনটা যুগোপযোগী করতে পারলে যেহেতু আমাদের লোক সংখ্যা বেশী, জমি কম, আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার সাথে সাথে আমরা খাদ্য পুষ্টি নিশ্চিত করতে চাই। আমরা আমাদের রপ্তানি পণ্যে এই খাদ্য প্রক্রিয়াজাতটাকেও গুরুত্ব দিতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রক্রিয়াজাত করতে পারলে ভ্যালুয়েটেড হবে। আমরা দেশের চাহিদা মিটাতে পারব। এ ধরনের বিনিয়োগ যাতে বাংলাদেশে হয়, তার কিছু উদ্যোগ নিচ্ছি এবং বিভিন্ন এলাকায় এক একটা সবজি কত তাপমাত্রায় কতদিন ভাল থাকতে পারবে? কারণ সবজির ব্যাপারে একটা বিষয় আছে। একই টেম্পাচারে, একই তাপমাত্রা দিয়ে সব কিছু সংরক্ষণ করতে পারেন না। প্রত্যেকটার জন্য কিন্তু আলাদা আলাদা চেম্বার লাগে। আলাদা আলাদা তাপমাত্রা দিতে হয়। সেই ধরনের আধুনিক পদ্ধতি আমাদের দেশে গড়ে ওঠেনি। আর গড়ে ওঠে নাই বলেই হয়ত, এখনি সম্ভব হচ্ছে না। তবে এব্যাপারে বেশকিছু উদ্যোক্তা আসছে। আমরাও উৎসাহিত করছি। আমরা এই ধরনের উদ্যোক্তা নিয়ে ওই ধরনের চিলিং সিস্টেমসহ যাতে ব্যবস্থা নিতে পারি, তখন আমরা বলতে পারবে, কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ক্রয় করা।’

‘কাজেই আমাদের রপ্তানি খাতে এই তরিতরকারি রফতানি এটিও যোগ হয়েছে। ভবিষ্যতে এটিকে আরও আধুনিক এবং যুগোপযোগী করার লক্ষ্য আমাদের রয়েছে’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।

সারাবাংলা/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন