বিজ্ঞাপন

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় যেভাবে সফল চীন

March 19, 2020 | 2:12 pm

সারাবাংলা ডেস্ক

চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে নভেল করোনাভাইরাস। ওই ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট বিশ্বমহামারি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যাও সবচেয়ে বেশি চীনের মূল ভূখণ্ডে। তারপরও বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে কেউ নতুন করে কেউ এই কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হননি। এই অর্জনকে অভূতপূর্ব সাফল্য হিসেবে দেখছেন স্বাস্থ্যসেবা দানকারী কর্তৃপক্ষ। চলুন, দেখে আসি কিভাবে আসলো চীনের এই সাফল্য –

বিজ্ঞাপন

করোনাভাইরাস সংক্রমণের একেবারে শুরুর দিকে মধ্য জানুয়ারিতেই, এই ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানসহ ১৫টি শহরকে ‘লকডাউন’ করে ফেলে চীনের কর্তৃপক্ষ। ওইসব অঞ্চলে বসবাসরত ৬ কোটি মানুষ অতিজরুরি প্রয়োজন ব্যতীত বাইরে যেনো বের হতে না পারেন, তা কঠোরভাবে নিশ্চিত করেছিল কর্তৃপক্ষ। এমনকি ওইসব অঞ্চলের মানুষ যেনো অন্য কোনো অঞ্চলে যেতে না পারেন এবং অন্য কোনো অঞ্চল থেকে মানুষ যেনো ভাইরাস উপদ্রুত ওইসব অঞ্চলে না ঢুকতে পারে – সেই লক্ষে সকল ধরনের যোগাযোগব্যবস্থাও সঙ্গেসঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

করোনাভাইরাস আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া শুরু করলে সমগ্র চীনের অর্ধেক মানুষকে ‘লকডাউন’ এর আওতায় আনা হয়। নিউইয়র্ক টাইমস জানাচ্ছে, সে সময় ৭৬০ মিলিয়ন মানুষকে কোয়ারেনটাইনে রাখা হয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

‘লকডাউন’ এর নির্দেশনা কঠোরভাবে মানার কারণেই প্রতিদিনের আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার থেকে ১২ জনে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে চীনের কর্তৃপক্ষ – এমন মন্তব্য করেছেন মিন্নেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ মাইকেল ওস্টারহোম।

এমনকি, গত মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চীনের অনন্য ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণে ধন্যবাদ জানিয়েছে।

কিন্তু, ‘লকডাউন’ কি প্রকৃতপক্ষেই করোনাভাইরাস মোকাবিলার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছে – বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘ন্যাচার’ এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে জানতে পেরেছে, প্রাথমিক অবস্থায় একজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে এই ভাইরাস সংক্রমণ ঘটাচ্ছিলেন। কিন্তু ‘লকডাউন’ এর এক সপ্তাহ পার হতেই এই হার কমে দাঁড়ায় ১.৫০ তে।

বিজ্ঞাপন

তবে, যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের রোগতত্ত্ব বিষয়ের গবেষক লাই শেংজি ও অ্যান্ড্রু টাটেম একটি মডেল প্রকাশ করে বলেছেন – যদি চীনের কর্তৃপক্ষ এক সপ্তাহ আগে থেকে এই ‘লকডাউন’ পদ্ধতি গ্রহণ করতেন তবে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনা সম্ভব হতো। এছাড়াও, তিন সপ্তাহ আগে থেকে এই পদ্ধতি গ্রহণ করলে মোট আক্রান্তের মাত্র ৫ শতাংশ মানুষ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হতেন।

অন্যান্য শহরগুলোতে এই ‘লকডাউন’ পদ্ধতি আগেভাগেই গ্রহণ করার কারণে ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত সংক্রমণ কমানো সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন।

এদিকে, চীনের বাইরে এই ভাইরাস এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও অস্ট্রেলিয়ার যেসব অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে সেখানেও ফ্লাইট বাতিল ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করার ফলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়েছে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

নভেল করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চীনের নেওয়া কঠোর ‘লকডাউন’ পদ্ধতি যথাসময়ে অনুসরণ করলে অন্যান্য দেশগুলো এই ভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ ঠেকাতে সক্ষম হবে বলে সংক্রামক রোগ গবেষকরা জানিয়েছেন।

সারাবাংলা/একেএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন