বিজ্ঞাপন

‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণার দাবি বাম গণতান্ত্রিক জোটের

April 13, 2020 | 5:55 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিকে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণা করে এই ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় ‘সমন্বিত উদ্যোগ’ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৩ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির পঞ্চম তলায় ‘সর্বদলীয় পরামর্শক সভা’ থেকে এই দাবি জানানো হয়। সভায় বিএনপি, সিপিবি, গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও কল্যাণ পার্টিসহ বিভিন্ন বাম সংগঠনের শীর্ষ নেতারা স্কাইপের মাধ্যমে অংশ নেন।

সূচনা বক্তব্যে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ করোনাভাইরাস সংক্রামণকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করে তা মোকাবিলায় সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানান।

তিনি বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই সব রাজনৈতিক দল, ছাত্র-যুবকসহ সামাজিক শক্তি, সাংস্কৃতিক সংগঠন, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, বিশেষজ্ঞদের ঐক্যবদ্ধ করে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছিলাম। সবার আকাঙ্ক্ষার অংশ হিসেবেই সমন্বিত উদ্যোগের লক্ষ্যে আজকেরে এই সভা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা আজ এখানে আমাদের সঙ্গে স্কাইপে যুক্ত হয়েছেন। তারা ভবিষ্যত করণীয় নির্ধারণে ভূমিকা রাখবেন বলে আশা রাখি।’

বিজ্ঞাপন

গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আপনাদের বক্তব্য আমি সমর্থন করি। জাতীয় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আমাদের এই করোনাভাইরাস সংক্রামণ মোকাবিলা করতে হবে। এককভাবে এটা সম্ভব না। সম্মিলিতভাবে করতে হলে মতবিনিয়ম করা, ঐক্যমত গঠন করা এবং গোটা জাতিকে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন।’

আরও পড়ুন- ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণা করে সর্বদলীয় বৈঠকের আহ্বান বামজোটের

তিনি বলেন, ‘এখানে কোনো সংকীর্ণ চিন্তা না করে জাতীয় ঐক্যমত সৃষ্টি করতে হবে। যারা ঝুঁকির মধ্যে আছেন, তাদের প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা দিতে হবে। সবাইকে নিয়ে এটা করা সম্ভব। এককভাবে কোনো দল বা সংগঠন পারবে না। আমাদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে সব শক্তি নিয়ে কাজ করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিষয়ে অত্যন্ত সজাগ থেকে সচেতনভাবে কাজ করছি, ভেতরের সমস্যাগুলো তুলে ধরেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকার সেগুলোকে কখনোই গুরুত্ব দেয়নি। যে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে, তা একেবারেই অপ্রতুল।’

তিনি বলেন, ‘এগুলো থেকে ঊর্ধ্বে উঠতে না পারলে এই করোনাভাইরাস মোকাবিলা কোনোভাবে সম্ভব না। ভয়াবহ দিন আসছে সামনে। আমরা সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশপ্রেমকে সামনে রেখে, সততাকে সামনে রেখে যদি হ্যান্ডেল না করি, তাহলে আরও বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়ব। অনেকে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কাও করছেন।’

ফখরুল বলেন, ‘জাতীয় ও বৈশ্বিক মহাদুর্যোগ মোকাবিলায় যেকোনো উদ্যোগে সামিল হতে আমরা প্রস্তুত আছি। এই দুর্যোগম,য় পরিস্থিতিতে দম্ভ, অহংকার ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরিহার করে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী  ভূমিকা পালন করতে হবে সরকারকেই। কারণ, পুরো দায়িত্বটার সরকারের। তারা দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাদের অবহেলার কারণে অনেক বড় সমস্যায় পড়েছি।’

‘আমরা বিশ্বাস করি, জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে সমন্বিত পরিকল্পনা করে বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই মহাদুর্যোগ মোকাবিলা করতে সক্ষম হব,’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিজ্ঞাপন

করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় ৮৭ হাজার কোটি টাকার স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি যে প্রস্তবনা বিএনপির পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছিল, সেটিও  তুলে ধরেন বিএনপির মহাসচিব। ওই প্রস্তাবনার একটি কপি দলের চেয়ারপারসনের প্রেসউইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খানের মাধ্যমে সর্বদলীয় পরামর্শক সভায় হস্তান্তর করেন মির্জা ফখরুল।

জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে জাতীয় দুর্যোগ কমিটি গঠন করতে হবে। সবাইকে নিয়ে, সব শ্রেণির মানুষকে নিয়ে, সব সামাজিক শক্তিসহ সব পেশার মানুষকে নিয়ে এই কমিটি করতে হবে। সরকারের একার পক্ষে এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি না।’

তিনি বলেন, ‘একইসঙ্গে রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করতে হবে। জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে না পারলে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে। সরকারসহ সব মহলকে আমি অনুরোধ করব, আসুন আমরা জাতিগতভাবে একত্রিত হই এবং জাতীয় এই মহাদুর্যোগ মোকাবিলা করি। আমি মনে করি, এখনো সময় আছে সবাইকে একত্রিত করার।’

সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘এই মহাদুযোর্গ একার পক্ষে নয়, ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস দরকার। এটা করতে হবে। আমি এখনো আহ্বান জানাব, সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে সরকারি যন্ত্র-রাষ্ট্রীয় যন্ত্রসহ সবাইকে  একসঙ্গে নিয়ে কাজ করার।’

‘একাত্তরে আমরা যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি, করোনাভাইরাসের এই ক্রান্তিকাল মোকাবিলাতেও আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে,’— বলেন সেলিম।

স্কাইপে যুক্ত হয়ে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান, বাসদের খালেকুজ্জামান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের প্রধান টিপু বিশ্বাস, গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, বাম ঐক্যজোটের আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন আহমেদ নাসু, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মোশরেফা মিশু, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক, ওয়ার্কার্স পার্টির (মাকর্সবাদী) সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, গণসংহতি আন্দোলন প্রধান জোনায়েদ সাকি, ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সভাপাতি এম এ সবুর।

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন