বিজ্ঞাপন

দুর্যোগের সময় কেউ কারও পেছনে লেগে থাকা ঠিক নয়: প্রধানমন্ত্রী

April 16, 2020 | 3:13 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: করোনা সংকটে ত্রাণ অনিয়মে জড়িতদের প্রতি আবারও কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কিছু জায়গায় কিছু কিছু আশপাশের লোক তারাই ষড়যন্ত্র করে একজন আরেকজনকে ফাঁসিয়ে দেয়। তদন্ত করতে গেলে দেখা যায় যে সেখানে এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এই দুর্যোগের সময় কেউ কারও পেছনে এভাবে লেগে থাকবেন, সেটি কিন্তু ঠিক না। বরং সবাইকে সাহায্য করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে কোনো দুর্নীতি বা অনিয়ম হলে সেটি আমরা কিন্তু কখনো বরদাশত করব না। যে পরিমাণে আমরা ত্রাণ দিচ্ছি সে পরিমাণে মামলা তেমন না, তারপরও বলব যে এই ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে।’

বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) গণভবনে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সমন্বয় কার্যক্রমের অংশ হিসাবে তিনি ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে সূচনা বক্তব্যে এ সব কথা বলেন। এরপর ঢাকা বিভাগের ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকদের কার্যালয়ে সংযুক্ত হয়ে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন।

করোনা ভাইরাসের সংক্রামণ থেকে রক্ষা থেকে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কিন্তু জীবন চলার জন্য অবশ্যই কাজ করতে হবে। শুধু বসে থাকলে চলবে না। আপনারা নিজেদেরকে সেভাবে সুরক্ষিত করে আপনাদের আর্থসামাজিকভাবে যা কাজ করার করবেন। সেই সঙ্গে সঙ্গে বারবার অনুরোধ করব, নিজেকে সুরক্ষিত রাখেন।’

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এ পর্যন্ত দেখেছি বাংলাদেশে ১৪ হাজার ৮৬৮ জনের পরীক্ষা করা হয়েছে। তার মধ্যে রোগ শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ২৩১ জনের। আর এই পর্যন্ত ৫০ জন মারা গেছে। কিন্তু বাকি অনেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। সেটাও প্রায় ৫০ জনের ওপরে সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে গেছেন। কিন্তু বিশ্বের অবস্থাটা যদি দেখি সেটা আরও ভয়াবহ অবস্থা। বিশ্বব্যাপী যে হিসাবটা আসছে, ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। সারাবিশ্বে ১৮ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬৩ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। তার মধ্যে মারা গেছে ১ লাখ ১৭ হাজার ২১ জন। কাজেই সারাবিশ্বের অবস্থা কিন্তু আরও ভয়াবহ। সেই ক্ষেত্রে আমরা আগে থেকে ব্যবস্থা নিয়েছি বলে আমরা মনে করি, আমরা যথেষ্ট এখনও নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। তবু কেউ মারা যাক, এটি আমরা চাই না। সবাই সুস্থ থাকুক সেটাই আমরা চাই।

তাই রোগটা যেন আর না ছড়াতে পারে, তার জন্য যা যা করণীয় তা তা করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এখানে সুরক্ষার সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। এখন পর্যন্ত ১৪ লাখ ১৬হাজার ৬১৬পিপিপি সংগ্রহ করা হয়েছে। তার মধ্যে ৯লাখ ৫৮হাজার ২৯৪ বিতরণ করা হয়েছে।আর মজুদ আছে ৪লাখ ৫৮ হাজার ৩২২পিস এবং প্রতিনিয়ত এটা আমরা সংগ্রহ করে যাচ্ছি।’

বিজ্ঞাপন

জনগণের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করার জন্য সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও ঘোষিত বিভিন্ন প্রণোদনায় কথা এ সময় উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সারা দেশে এই খাদ্য সাহায্যটা দিয়ে যাচ্ছি। আমরা যদি হিসাব করি, আমাদের ৩৫০জন সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে একেবারে ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং সদস্য সব মিলিয়ে আমাদের প্রায় ৬১ হাজার ৫৭৯ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। যাদের মাধ্যমে এই বিতরণ হচ্ছে। সেই সাথে আমাদের প্রশাসনের এবং আমাদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সকলে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু খবর আসে, যেটা সত্যিই খুব আমাদের দুঃখ দেয়। আমরা এই দুর্যোগের সময় মানুষ ঘরে বসে আছে, কাজ করতে পারছে না, তাদের খাদ্য সহযোগিতা দিচ্ছি। কিন্তু এই সাহায্যের মধ্যেই কেউ থাবা দিক, সেটা আমরা চাই না। এরকম যদি কখনো কোন ঘটনা ঘটে সঙ্গে সঙ্গে আমরা কিন্তু ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

‘তবে এই ব্যবস্থা নিতে যেয়ে আমরা কোথাও কোথাও দেখেছি, কিছু জায়গায় দেখা যায় যে কিছু কিছু আশপাশের লোক তারাই ষড়যন্ত্র করে একজন আরেকজনকে ফাঁসিয়ে দেয়। তদন্ত করতে গেলে দেখা যায় যে সেখানে এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। সে রকমও অবস্থা আছে’ বলেন প্রধানমন্ত্রী

‘এই দুর্যোগের সময় কেউ কারও পেছনে এভাবে লেগে থাকবেন, সেটাও কিন্তু আসলে ঠিক না। বরং সবাইকে সাহায্য করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

আমাদের বিত্তবানদের আমি আহ্বান করেছি এগিয়ে আসতে, তারা সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি বা স্বায়ত্বশায়িত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তারাও এগিয়ে এসেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু তারপরও আমি বলব যে, এই ক্ষেত্রে কোনো দুর্নীতি বা অনিয়ম হলে সেটা আমরা কিন্তু কখনো বরদাশত করব না। এরইমধ্যে আমরা দেখেছি বেশ কিছু মামলা হয়েছে, তবে যে পরিমাণে আমরা দিচ্ছি সে পরিমাণে মামলা তেমন না, তারপরও আমি বলব যে, এই ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে।’

প্রধানমন্ত্রী জানান, ‘১১টা ডিলারশিপ বা জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, আর প্রায় ৪০টার মতো সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে; এ ধরনের ঘটনার পর পরবর্তীতে আবার যখন তদন্ত করতে গিয়েছি তখন দেখেছি যে, এটা খুব বেশি একটা অনিয়ম দেখা যাচ্ছে না। যা দেখা যাচ্ছে সেটুকুও দেখা যাক, সেটাও আমরা চাই না। কাজেই সবাই আপনারা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেন। আর আমরা যে ৫০ লাখ রেশন কার্ড আরো অতিরিক্ত দেব, সেখানে আমাদের সামাজিক সুরক্ষা পাচ্ছে বা যাদের ইতোমধ্যে রেশন কার্ড আছে তাদের বাদ দিয়ে যারা সত্যিকার মানে প্রয়োজন তাদের নামটা যেন তালিকায় থাকে।’

‘আমি ইতোমধ্যে আমাদের দলের সকল নেতাকর্মী, প্রত্যেকটা জেলা উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড কমিটিতে সব জায়গায় আমরা কমিটি করতে বলে দিয়েছি। সেখানে নামগুলো তালিকা করতে যেয়ে যারা সত্যিকার দুঃস্থ দরিদ্র যার ঘরে খাবার নাই, তাদের খুঁজে বের করা, এবং তাদের হাতে যেন সাহায্যটা পৌঁছায় সেই ব্যবস্থাটা করবার জন্য আমরা নির্দেশ দিয়েছি। দলের পক্ষ থেকেও আমরা করে যাচ্ছি কিন্তু তারপরও আমরা যে সহযোগিতা দেবো, সরকারি হোক বা বেসরকারি হোক বা বিত্তবান যারাই করুক, সেগুলো যেন সঠিক লোকদের হাতে পৌঁছায়।’

সেটি যেন কেউ অনিয়ম করতে না পারে, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। সেই সঙ্গে আমাদের প্রশাসন থেকে যারা আছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাসহ প্রত্যেককে বলব, এ ব্যাপারে আপনারা সবাই সজাগ হবেন এবং কাজ করবেন।’

প্রধানমন্ত্রী সকলকে আল্লাহ আব্বুলামিনের কাছে দোয়া করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এই ভাইরাসের থাবা থেকে যেন বাংলাদেশের জনগণ মুক্তি পায়, যে যেখানে আছেন দেশে-প্রবাসে। কারণ আপনারা যদি দেখেন প্রবাসে আমাদের বাঙালিরা সব থেকে বেশি মারা গেছে। এটা সব থেকে বেশি দুর্ভাগ্যজনক। দেশে আমরা যতটা সুরক্ষিত করতে পেরেছি বিদেশে কিন্তু আমাদের বাঙালিরা ততটা সুরক্ষা পায় নাই। বরং অনেক বেশি সংখ্যায় তারা মৃত্যুবরণ করেছে। এটা সব থেকে কষ্টকর।’

প্রধানমন্ত্রী সবার ভালো ও সুস্থতা কামনা করে বলেন, ‘এ অবস্থা অবশ্যই কেটে যাবে। অবশ্যই আবার প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে। আবার আমরা এগিয়ে যাব। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে।’

গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। এ ছাড়াও গণভবন প্রান্তে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এনআর/একে

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন