বিজ্ঞাপন

করোনাকালে সাইবার হুমকি, সচেতনতা প্রয়োজন সবারই

May 18, 2020 | 12:00 pm

সারাবাংলা/এসবিডিই/

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) একটি বৈশ্বিক মহামারী। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে প্রথম প্রাদুর্ভাব ঘটে। পরবর্তীতে পৃথিবীব্যাপী মহামারীরূপ নেয়। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২১৫ দেশে প্রায় ৪০,২৭, ১১০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ২,৭৬,৩৮৬ জন।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ কোভিড-১৯ সনাক্ত হয় এবং সর্বশেষ তথ্য মতে, ১৩,৭৭০ জন আক্রান্ত এবং ২১৪ জন মারা গেছেন। বিশ্ব করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থা অনেক ভাল। এটি সম্ভব হয়েছে প্রাজ্ঞ ও দূরদর্শী রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের ফলে দেশে কোভিড-১৯ মহামারী রূপ নিতে পারেনি।

জানুয়ারি থেকেই এই ভাইরাসের সংক্রমন প্রতিরোধ কল্পে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। বিমানবন্দর, স্থলবন্দর এবং সমুদ্রবন্দরে আসা যাত্রীদেরকে থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে স্ক্যানিং করা হয়েছে এবং ভাইরাসে আক্রান্তদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

করোনাভাইরাস উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুলিশের কাজের মাত্রা এবং পরিধি দুটোই বৃদ্ধি পেয়েছে। একদিকে স্থানীয় প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, খাদ্য, ত্রাণ ও দুর্যোগ সংস্থার সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা, লকডাউন, আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা সম্ভাব্য ব্যক্তিদের সনাক্ত করা এবং তাদের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতকরা ইত্যাদি দায়িত্ব পালন করছে। পাশাপাশি পুলিশের মৌলিক দায়িত্ব জনশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা এবং অপরাধ দমন ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করছে।

বিজ্ঞাপন

করোনাভাইরাস যাতে সংক্রমিত না হয় সে লক্ষ্যে জনসচেতনতামূলক বিভিন্ন বিজ্ঞাপন এবং মিডিয়ায় সারাক্ষণ সম্প্রচার করা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাস্থ্য বিধির সাথে সমন্বয় রেখে স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন নির্দেশনা জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানুষ স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলছে।

একটি বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করছি। তা হলো- কোভিড-১৯ পরিস্থিতিকে ব্যবহার করে সাইবার অপরাধী চক্র সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত তদন্ত সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) এর ইন্টারনেট ক্রাইম কমপ্লেইন্ট সেন্টার (আইসি৩) এর মতে, করোনা মহামারীতে ইন্টারনেট ক্রাইম চারগুন বেড়ে গেছে। যেখানে দৈনিক ইন্টারনেট ক্রাইম সংক্রান্ত অভিযোগের সংখ্যাছিল কম বেশি ১০০০; সেটা বেড়ে গত কয়েক মাসে দৈনিক সংখ্যা প্রায় ৩০০০-৪০০০।

সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে দীর্ঘ সময় মানুষকে বাসায় থাকতে হচ্ছে। অনেকে বাসায় বসে অনলাইনে অফিসের কাজ করছেন। অনেকে অনলাইনে শপিং করছেন। অনেকে আবার অনলাইনে বিভিন্ন সেবা নিচ্ছেন। এক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে সর্তকতা অবলম্বন করাটা অত্যন্ত জরুরী।
উদ্ভূত করোনা পরিস্থিতিতে ইন্টারনেটের ব্যবহার প্রায় শতকরা পঞ্চাশ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে মর্মে এক প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহার করে যারা অফিসের কাজ করছেন বা অন্যকোনো জরুরী ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন তাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে যেন কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন কোনভাবেই ভাইরাস আক্রান্ত না হয়। সামান্য ভুলে ঘটে যেতে পারে ভাইরাসের আক্রমন। আপনি যখন কোন ইমেইলে কোন ফাইল অ্যাটাচ করছেন, ইন্টারনেট থেকে কোন ফাইল ডাউনলোড করছেন অথবা ভাইরাস আছে এমন কোন ওয়েবসাইট ভিজিট করছেন ঠিক তখনই আপনার কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোনে ভাইরাস ঢুকতে পারে।

বিজ্ঞাপন

ডিভাইসটি ভাইরাসে সংক্রমিত হলে ইন্টারনেট স্লো হতে পারে, এর মাধ্যমে হ্যাকার আপনার ডিভাইসটিতে প্রবেশ করতে পারে, স্প্যাম মেইল পাঠিয়ে পাসওয়ার্ড চুরি করতে পারে। স্পাইওয়্যার আরেকটি ম্যালওয়্যার যা ডিভাইস ব্যবহারকারীর অজ্ঞাতসারে তার কার্যক্রম মনিটর করে এবং ব্যবহারকারীর অত্যন্ত গোপনীয় ও স্পর্শকাতর তথ্যাদি যেমন- ক্রেডিট কার্ড নম্বর ইত্যাদি চুরি করতে পারে। কাজেই সন্দেহজনক কোন মেইল বা ওয়েবসাইট খোলা অথবা ভিজিট করা থেকে বিরত থাকা উচিত। তাতে আপনার ইমেইল আইডি বা পাসওয়ার্ড বেহাত হওয়ার সম্ভবনা থাকে এবং এতে করে অফিসের অনেক গোপন ও স্পর্শকাতর তথ্য চুরি হতে পারে।

বর্তমানে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বাজারে সুরক্ষা সামগ্রী যেমন- মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, স্যানিটাইজার ইত্যাদির চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান অনলাইনে এসব সুরক্ষা সামগ্রী বিক্রয় করছে। এ পরিস্থিতিতে স্বনামধন্য কোন অনলাইন বাজার প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া ওয়েবসাইট বা অন্যকোন ই-কমার্স প্লাটফর্মের নামে অথবা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে সুরক্ষা সামগ্রী, মাস্ক, গ্লাভস, পিপিই ইত্যাদি বিক্রির নামে অর্থ প্রতারণার চেষ্টা করতে পারে। কাজেই বিশ্বস্ত মাধ্যম ছাড়া অথবা যাচাই না করে অনলাইনে লেনদেনে বিরত থাকা বাঞ্চনীয়।

টেলিফোনেও প্রতারণার চেষ্টা হতে পারে। আপনার মোবাইল নম্বর ক্লোনিং করার মাধ্যমে আপনার নিকট আত্মীয় স্বজনদের কাছে আপনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে কোন বিকাশ অ্যাকাউন্টে জরুরী টাকা পাঠাতে বলতে পারে বা আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্ট নম্বর অথবা পাসওয়ার্ড নিশ্চিত করতে বলতে পারে। এভাবে আপনার অ্যাকাউন্টের টাকা চুরির চেষ্টা করতে পারে। করোনা টেস্টের জন্য স্বাস্থ্য সেবার নামে কোন ইমেইল, ভুয়া ওয়েবসাইটে লগইন করার মাধ্যমে আপনার ইমেইল এবং পাসওয়ার্ড চুরি করে অর্থ চুরির চেষ্টাও করতে পারে।
উদ্ভূত করোনা পরিস্থিতিতে অতি গুরুত্বপূর্ণ কোন অবকাঠামো বা স্বাস্থ্য সেবা অথবা হাসপাতালের ওয়েবসাইট হ্যাকিং করার চেষ্টা হতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ কোন অবকাঠামোর বা জরুরী সেবার কোন কম্পিউটার সিস্টেমকে লক্ষ্য করে র্যানসমওয়্যার পাঠানোর চেষ্টা করতে পারে। এতে সিস্টেমটি লক হয়ে যেতে পারে এবং জরুরী সেবার ব্যাঘাত ঘটাতে পারে; এমনকি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে জিম্মি করে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করতে পারে।

যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে অলস সময় কাটাচ্ছেন তাদেরকে বলছি, আপনারা সাবধানতা অবলম্বন করুন। যেকোন সাইট বা ইমেইল আপনার কৌতূহলের কারণ হতে পারে অথবা আপনাকে প্রলুদ্ধ করতে পারে। ভুলেও সেসব ওয়েবসাইটে সন্দেহজনক ফাইল খুলে নিজের ডিভাইসকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবেন না। এ ধরনের সন্দেহজনক সাইট বা ইমেইলে প্রেরণের মাধ্যমে আপনার ডিভাইসটিতে ম্যালওয়্যার ইনজেক্ট করার চেষ্টা হতে পারে। ম্যালওয়্যার ঢুকে গেলে একই ডিভাইসে আপনি যখন আপনার মেইল আইডি এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে আপনার ইমেইলে ঢুকবেন তখন আপনার মেইল আইডি এবং পাসওয়ার্ড অপর প্রান্তে ম্যালওয়্যার ইনজেক্টকারী/প্রেরণকারীর কাছে চলে যাবে। আপনার পরিচয় চুরির মাধ্যমে আপনার কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ চুরি হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

আরেকটা বিষয় হচ্ছে, মিথ্যা বা গুজব ছড়ানো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব ইত্যাদিতে যারা সময়ের একটি বড় অংশ ব্যয় করেন তাদেরকে গুজবের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। করোনা পরিস্থিতিতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে নানারকম গুজব ছড়ানোর চেষ্টা হতে পারে। গুজব ছড়ানোর মাধ্যমে সমাজে ভীতির সঞ্চার করা বা কোন ধরনের অস্থিরতা তৈরী করার দূরভিসন্ধিমূলক অপচেষ্টা হতে পারে। এ ধরণের যেকোন পোষ্ট শেয়ার করা বা লাইক দেয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ তা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এমন পরিস্থিতিতে, ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে কতিপয় সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরী। যেমন- অনাকাঙ্খিত, সন্দেহজনক কোন মেইল খোলা থেকে বিরত থাকা, বহু বৈশিষ্ট বিশিষ্ট শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা। প্রয়োজন ছাড়া আপনার কম্পিউটার/ল্যাপটপ/মোবাইল আপনার অনুপস্থিতিতে খোলা না রাখা এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের বিষয়ে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সচেতন করা প্রয়োজন। ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপনার অসতর্কতা বা অসাবধানতা আপনাকে সাইবার অপরাধের শিকারে পরিণত করতে পারে। কাজেই নিজে সচেতন হোন এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে সচেতন করুন। আপনার সচেতনতাই পারে সাইবার স্পেসের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে।

লেখক: বিপিএম, ডিআইজি, ময়মনসিংহ রেঞ্জ

প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

ব্যারিস্টার মো. হারুন অর রশিদ

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন