বিজ্ঞাপন

সৌরভ, কলিন গ্রেভস নাকি বার্কলে?

July 6, 2020 | 3:50 pm

মহিবুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

টানা দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন শেষে ১ জুলাই আইসিসি’র চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন শশাঙ্ক মনোহর। তার চলে যাওয়ায় অন্তবর্তীকালীন দায়িত্ব পালন করছেন ডেপুটি ইমরান খোয়াজা। শশাঙ্ক আইসিসি’র মসনদ থেকে এমনই এক সময়ে সরে দাঁড়ালেন যখন কিনা করোনাভাইরাসের দাপটে গোটা বিশ্বই নাকাল। সঙ্গত কারণেই আইসিসি’র সদস্যভুক্ত দেশগুলো চাইছে সংকটকালীন সময়ে কেউ একজন বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ামক এই সংস্থার হাল শক্ত হাতে ধরুক। অতীব গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি আমলে নিয়ে জুলাইয়ের মধ্যেই পরবর্তী চেয়ারম্যান নির্বাচনের প্রক্রিয়া সেরে ফেলতে চায় আইসিসি।

বিজ্ঞাপন

তার মানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বোর্ড কর্তাদের হাতে সময় থাকছে সাকুল্যে পনেরো দিন মতো। কিন্তু তিনি কে যিনি আইসিসি’র মসনদে বসতে যাচ্ছেন, হতে যাচ্ছেন শশাঙ্কের উত্তরসূরী?

এক্ষেত্রে অবশ্য ঘুরেফিরে তিনটি নাম আসছে। অর্থাৎ আইসিসি’র চেয়ারম্যানের দৌঁড়ে তারাই এগিয়ে আছেন।

প্রথম বহুল উচ্চারিত নামটি হচ্ছে হচ্ছে সৌরভ গাঙ্গুলি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মাধ্যমগুলোর খবর হলো, বোর্ডের অন্দরমহলে এ নিয়ে নাকি বেশ তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এবং এমনও শোনা যাচ্ছে সৌরভের মনোনয়ন প্রসঙ্গে বিভিন্ন বোর্ডকে বাজিয়েও দেখা হয়েছে। এবং সেখান থেকে নাকি উল্লেখযোগ্য সাড়াও পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

তবে সাড়া পেলেই তো আর হবে না, সৌরভের আইসিসি’র চেয়ারম্যান হওয়া, না-হওয়া নির্ভর করছে একাধিক বিষয়ের উপর। চলতি মাসের ২৭ তারিখ সৌরভের প্রশাসক হিসেবে ছয় বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী এরপর তাঁর কুলিং অফে যাওয়ার কথা। সম্পাদক জয় শাহেরও এমাসেই ছয় বছর শেষ হচ্ছে। যদিও ভারতীয় বোর্ড ইতোমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে সৌরভ এবং জয় শাহের মেয়াদ ২০২৫ পর্যন্ত বাড়ানোর আবেদন করেছে।

কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট এখনও শুনানির দিন জানায়নি। হিসাব মতো, গত সেপ্টেম্বরে বিসিসিআই’র সভাপতির পদে বসা সৌরভ-সম্পাদক জয়ের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা জুলাইয়ে। কিন্তু লোঢা কমিটির সুপারিশকে উল্টে যদি কোর্ট সৌরভদের পক্ষে রায় দেয় এবং তাদের মেয়াদ বাড়ে তাহলে আবার আইসিসি চেয়ারম্যানের দৌড়ের চিত্রও পাল্টে যেতে পারে। তখন সৌরভ হয়ত আইসিসি’র চেয়ারম্যান পদের চেয়ে ভারতীয় বোর্ড প্রেসিডেন্টেরর পদকেই অগ্রাধীকার দিবেন। কেননা তিনি নিজে ভারতীয় বোর্ড নিয়ে যতটা আগ্রহী, ততটা আইসিসি প্রধানের পদ নিয়ে নন।

অবশ্য ভারত ক্রিকেট বোর্ডের প্রশাসক প্রধান বিনোদ রাই মনে করছেন, আইসিসি’র চেয়ারম্যান হিসেবে এখন সেরা পছন্দ হতে পারেন সাবেক এই ভারত কাপ্তান। ভারতীয় বোর্ডের কর্তারাও এই সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছেন। সে ক্ষেত্রে সৌরভ যাবেন আইসিসিতে, আর বিসিসিআই প্রধান হতে পারেন ব্রিজেশ প্যাটেল।

বিজ্ঞাপন

সৌরভের পরেই যে নামটি শোনা যাচ্ছে সেটা ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড প্রধান কলিন গ্রেভস। জানা গেছে আইসিসি’র মসনদে বসতে নাকি তিনি খুবই আগ্রহী। সেজন্য তিনি ৩১ আগস্ট বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরে দাঁড়াতেও দ্বিধা বোধ করবেন না। জনশ্রুতি আছে আইসিসি’র চেয়ারম্যান হতে অন্যূন যে দুই তৃতীয়াংশ ভোট প্রয়োজন সেই কাজটিও অনেকখানিই এগিয়ে রেখেছেন কলিন। এবং কৌশলে পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের সমর্থনও ইতোমধ্যে নিয়ে নিয়েছেন। চেয়ারম্যানশিপের ভোট নিশ্চিত করতেই নাকি বিপুল পরিমাণ পাউন্ড ঢেলে দেশ দুটিকে সিরিজ খেলার আমন্ত্রণ জানিয়েছে। বাদ বাকি দেশগুলোর ভোট নিশ্চিত করণে তার সর্বোত্তম প্রচেষ্টা এখনো অব্যাহত আছে।

তৃতীয় যে নামটি শোনা যাচ্ছিল সেটি পিসিবি চেয়ারম্যান এহসান মানি। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, আইসিসি চেয়ারম্যানের দৌড়ে তিনি পিছিয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবর, আইসিসি’র ফিন্যান্স অ্যান্ড কমার্শিয়াল কমিটির প্রধানের দায়িত্বরত সাবেক আইসিসি সভাপতি ও বর্তমান পিসিবি সভাপতি নাকি চেয়ারম্যানের প্রার্থীতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন!

শোনা যাচ্ছিল সিঙ্গাপুরের ইমরান খোয়াজার নামও। যদিও তা আর জোরালো নয়। অনুরাগ ঠাকুরের নামও বিভিন্ন মহলে শোনা যাচ্ছে। তবে ভারতের করোনাভাইরাসের উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে অর্থ-প্রতিমন্ত্রীকে ক্রিকেটের প্রশাসনিক পদের জন্য পার্টি হাইকম্যান্ড ছাড়বে কি না তা নিয়ে আছে ঘোর সন্দেহ।

কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে এই দৌঁড়ে ‘ডার্ক হর্স’ হয়ে উঠতে পারেন নিউজিল্যান্ডের গ্রেগ বার্কলে। ২০১২ সাল থেকে কিউইদের বোর্ড ডিরেক্টর এখন নিজেই আইসিসি-তে নিউজিল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করেন।

বিজ্ঞাপন

অবশ্য বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাবেক অধিনায়ক, ম্যাচ রেফারিদের রেফারি ও ২০০৪ অনূর্ধ্ব- ১৯ বিশ্বকাপের পরিচালক রকিবুল হাসানের মতে, এবারের আইসিসি চেয়ারম্যানও উপমহাদেশের কাউকে দেখা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে সৌরভ গাঙ্গুলির নামটিই তার কাছে অগ্রগণ্য। তবে উপমহাদেশের দেশগুলো যদি ঠেলাঠেলির রাজনীতি অনুসরণ করে সেই সুযোগে কলিন গ্রেভস বেরিয়ে আসতে পারেন বলে মত তার।

‘আমরা জানি পাকিস্তান আইসিসি’র চেয়ারম্যান হতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এহসান মানি আগেও একবার আইসিসি’র সভাপতি ছিলেন। এবারও হয়ত হতে চাইবেন। তবে সৌরভকে (সৌরভ গাঙ্গুলি) যদি ওর বোর্ড সমর্থন দেয় তিনিই এগিয়ে থাকবেন। আমার বিশ্বাস এবারও উপমহাদেশ থেকেই কেউ হবে। তবে কলিন গ্রেভসও হতে পারে। আমার মনে হয় না এই পদটাকে উপমহাদেশ ছাড়তে চাইবে। তাছাড়া আইসিসি’র বেশিরভাগ রাজস্বই উপমহাদেশ থেকে এসে থাকে। কাজেই এখানে তাদের একটা শক্ত অবস্থান আছে। আবার উপমহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে যদি ঠেলাঠেলি শুরু হয়ে যায় তাহলে কলিন গ্রেভসকে দেখা যেতেও পারে।’

সারাবাংলা/এমআরএফ/এসএস

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন