বিজ্ঞাপন

জিদানের হাত ধরে রিয়ালের ৩৪তম লিগ শিরোপা জয়

July 17, 2020 | 3:04 am

স্পোর্টস ডেস্ক

ঘরের মাঠ আলফ্রেড ডি স্টেফানো স্টেডিয়ামে ভিয়ারিয়ালকে ২-১ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে লা লিগায় নিজেদের ৩৪তম শিরোপা জয় করে রিয়াল মাদ্রিদ। বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) রাতটাই নিজেদের করে নিল লস ব্ল্যাঙ্কোসরা, এর আগে অবশ্য ভুলবশত এক কাণ্ড ঘটিয়ে বসেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। স্প্যানিশ লা লিগার শিরোপা উদযাপনের জন্য বিশেষ জার্সি বানিয়েছে মাদ্রিদের ক্লাবটি। তা বানাতেই পারে। কিন্তু কাগজে-কলমে শিরোপা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তো আর প্রকাশ করা যায় না। বৃহস্পতিবার সেটাই করে দেখাল রিয়াল।

বিজ্ঞাপন

নিজেদের ওয়েবসাইটে শিরোপা উদযাপনের জার্সির ছবি পোস্ট করে ক্রয়ের আহ্বান জানায় রিয়াল। মাদ্রিদের ক্লাবটির শিরোপা নিশ্চিতে তখনও দুই পয়েন্ট বাকি। ভুল বুঝতে পেরে কয়েক মিনিটের মধ্যেই পোস্ট মুছে ফেলে লস ব্ল্যাঙ্কোসরা। তার কয়েক ঘণ্টা পরই লা লিগা শিরোপা নিশ্চিত করেছে জিনেদিন জিদানের দল।

এবারের লিগ শিরোপা নিশ্চিতে রিয়ালের লাগত দুই পয়েন্ট। ঘরের মাঠে প্রতিপক্ষ ভিয়ারিয়াল ছিল বলে অনেকেই রিয়ালের শিরোপা উদযাপনের পক্ষে বাজি ধরেছেন। তাদেরই জয় হলো, নিজেদের ঘরের মাঠ ২-১ গোলের ব্যবধানে ভিয়ারিয়ালকে এক ম্যাচ হাতে রেখেই লা লিগার শিরোপা নিশ্চিত করেছে রিয়াল।

বিজ্ঞাপন

এস্তাদিও সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে সংস্করণের কাজ চলছে আর তাই তো অনুশীলন স্টেডিয়াম আলফ্রেড ডি স্টেফানো খেলছে রিয়াল মাদ্রিদ। আর লা লিগার ৩৭তম রাউন্ডে ভিয়ারিয়ালকে আতিথ্য দেয় রিয়াল মাদ্রিদ। ঘরের মাঠে শুরু থেকেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণে ব্ল্যাঙ্কোসরা।

ম্যাচের ২৯ মিনিটে লুকা মদ্রিচের দুর্দান্ত এক অ্যাসিস্ট থেকে গোল করেন করিম বেনজেমা। প্রথমার্ধ শেষ হয় ১-০ তে ব্ল্যাঙ্কোসদের এগিয়ে থাকার মাধ্যমেই। এরপর ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের ধার বাড়ায় রিয়াল। তবে গোলের দেখা মিলছিল না।

ম্যাচের ৭৬ মিনিটে মধ্য মাঠে বল জেতেন রামোস। আর বল নিয়ে ঢুকে পড়েন ভিয়ারিয়ালের ডি বক্সে। তবে সেখানেই ফাউলের শিকার হন রামোস। রেফারি দেখিয়ে দেন পেনাল্টি স্পট। সেখানে আরেক নাটক অপেক্ষা করছিল। পেনাল্টি শট নিতে গিয়ে তা ডি বক্সের ভেতরে ঢুকে পড়া বেনজেমার দিকে বাড়িয়ে দেন রামোস। পরে দেখা যায় ভিয়ারিয়ালের খেলোয়াড়ও ডি বক্সের ভেতরে ঢুকে পড়েন।

বিজ্ঞাপন

রেফারি জানান পুনরায় পেনাল্টি নিতে হবে। এরপর করিম বেনজেমা পেনাল্টি স্পট থেকে গোল করে দলকে ২-০’তে এগিয়ে বেনজেমা। আর তাতেই অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায় রিয়ালের ৩৪তম লিগ শিরোপা। অন্যদিকে ম্যাচের ৮৩ মিনিটে ভিসেন্তে ইবোরার দুর্দান্ত এক গোলে ম্যাচের ফেরার ইঙ্গিত দেয় ভিয়ারিয়াল। এর মিনিট খানেক পরে থিবো কোর্তোয়ার ডাবল সেভে আবারও গোল হজমের হাত থেকে রক্ষা পায় রিয়াল।

এর মিনিট খানেক পরে রিয়ালের হয়ে তৃতীয় গোল করেন মার্কো অ্যাসেন্সিও তবে গোলের বিল্ড আপে করিম বেনজেমার হ্যান্ডবল হওয়ায় গোল বাতিল হয়। আর শেষ পর্যন্ত করিম বেনজেমার জোড়া গোলে ২-১ ব্যবধানের জয় তুলে নেয় রিয়াল। আর সেই সঙ্গে সঙ্গে স্প্যানিশ লা লিগার ৩৪তম শিরোপাও জিতে নেয় রিয়াল।

স্পেনে করোনা পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেকটাই উন্নত। তবুও এখনো কোথাও লোক সমাগমের অনুমতি দেয়নি দেশটির সরকার। ফলে লা লিগা জয়ের উল্লাসটা ঠিকমতো হচ্ছে না রিয়াল মাদ্রিদের সমর্থকদের। এক জায়গায় জড়ো হয়ে উল্লাস করা হবে না, আগের মতো রঙ ছোড়াছুঁড়ি করা হবে না। তারপরও উদযাপন নিশ্চয় থেমে থাকবে না। অর্জনটা যে বাঁধভাঙা উল্লাস করার মতোই। স্প্যানিশ লা লিগায় রিয়াল মাদ্রিদের ৩৪তম শিরোপা এটি। ইউরোপের সেরা পাঁচটি লিগের হিসেব ধরলে রিয়াল মাদ্রিদের চেয়ে বেশি লিগ শিরোপা জিততে পেরেছে কেবল জুভেন্টাস, সিরি ‘আ’ লিগে ৩৫ শিরোপা জিতেছে ইতালিয়ান ক্লাবটি।

বিজ্ঞাপন

অবস্থাগত দিকটাও সহজ ছিল না রিয়াল মাদ্রিদের। জিনেদিন জিদান আড়াই বছরে মাদ্রিদের ক্লাবটিকে তিনটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, একটি লিগ শিরোপা জিতিয়ে কোচিং ছেড়ে দিলে মাঝিহীন নৌকা হয়ে পড়ে রিয়াল। ২০১৮-১৯ মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, লা লিগায় মুখ থুবড়ে পড়ে স্পেনের ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি। ২০১৯ সালে দশ মাস পর জিদান যখন আবারও রিয়ালের ডাগআউটে ফিরে এলেন ততক্ষণে সেই মৌসুমের লিগ শিরোপা থেকে অনেকটাই ছিটকে পড়েছে ক্লাবটি। নতুন করে দায়িত্ব নিয়ে থিতু হতেই ক্লাব ছাড়লেন দলের সেরা ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।

রোনালদোহীন রিয়াল গোল পাচ্ছিল না। এক করিম বেনজেমা ছাড়া আক্রমণভাগে কেউই সুবিধা করতে পারেননি। এবারের মৌসুমে ফ্রি-কিক নেওয়া লোক খুঁজে পাচ্ছিল না রিয়াল। তার ওপর চোট হাজির হয়েছিল ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’ হিসেবে। বহু জলঘোলার পর এডেন হ্যাজার্ডকে চেলসি থেকে উড়িয়ে নিয়ে আসে রিয়াল। কিন্তু চোটের কারণে মৌসুমের বেশিরভাগ সময়ই মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছে বেলজিয়াম তারকাকে। ধারাবাহিকতার অভাবে পয়েন্ট টেবিলেও সুবিধাজনক স্থানে ছিল না রিয়াল। টেবিলের শীর্ষস্থানটা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার নামেই বরাদ্দ থেকেছে বেশিরভাগ সময়। এতো প্রতিবন্ধকতা জয় করে স্বপ্নের শিরোপা জেতা কী চাট্টিখানি কথা?

জিদানের দল আসল দাওটা মেরেছে করোনাভাইরাসের মধ্যে পুনরায় ফুটবল শুরু হওয়ার পর। করোনাকালের ফুটবলে প্রথম পাঁচ ম্যাচের মধ্যে তিনটিতেই পয়েন্ট হারায় শীর্ষে থাকা বার্সেলোনা। এতে নিজেদের জয়ের ধারা অব্যহত রাখা রিয়াল মাদ্রিদ এগিয়ে যায়। অল্প কয়েক দিনের এই উত্থান-পতনেই বার্সাকে দর্শক বানিয়ে রিয়াল মাদ্রিদকে লা লিগা চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছে।

সারাবাংলা/এসএইচএস/এসএস

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন