বিজ্ঞাপন

কোভিড পরিস্থিতির পর্যালোচনা: ‘মানবিক লকডাউনে’ই পরিস্থিতির উন্নতি

July 27, 2020 | 1:31 am

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতিতেও সরকার শুরু থেকে কঠোর লকডাউনে যায়নি। বরং সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সীমিত পরিসরে যেমন বাজার ব্যবস্থা সচল রাখার সুযোগ করেছিল, তেমনি কৃষকের সহায়তায় কৃষি শ্রমিক স্থানান্তরে সহায়তা করা হয়েছে। অন্যদিকে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে জরুরি সেবা ছাড়া বাকি সব কার্যক্রম রাখা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে সংক্রমণের তীব্রতা বিবেচনায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ‘স্থানিক লকডাউন’ প্রয়োগ করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তাতেই মিলেছে সাফল্য। কোভিড-১৯ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে দেশে।

বিজ্ঞাপন

দেশে কোভিড সংক্রমণের প্রায় সাড়ে চার মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর এক পর্যালোচনামূলক প্রতিবেদনে এসব কথা বলেছেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম। কোভিড নিয়ন্ত্রণে জীবন ও জীবিকা, সংক্রমণ ও অর্থনীতির মধ্যে ভারসাম্য রাখতে সরকারের এই প্রচেষ্টাকে তিনি ‘মানবিক লকডাউন’ আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলছেন, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সরকারের ‘মানবিক লকডাউনে’র সিদ্ধান্তটি সঠিক ছিল। ফলে দুর্ভিক্ষের মতো দুর্যোগ এড়ানো সম্ভব হয়েছে। অন্যদিকে করোনার সংক্রমণ ও মুত্যুহারও কমেছে।

ড. শামসুল আলমের প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত হয়েছে রোববার (২৬ জুলাই)। এতে বলা হয়েছে, কোভিড সংক্রমণ তীব্রতা হারিয়েছে। মৃত্যুহার কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। এ পরিস্থিতি অর্থনীতিতেও আশার আলো দেখা যাচ্ছে।

পর্যালোচনামূলক প্রতিবেদনটির একটি কপি সারাবাংলার হাতে এসেছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, গত এপ্রিল মাসে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ৫ দশমিক ৮ শতাংশ হারে বেড়েছে। ওই মাসেই সংক্রমণের হার বৃদ্ধি ছিল সর্বোচ্চ। মে মাসে সংক্রমণের হার কমে ২ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়ায়। জুন মাসে এই হার ছিল শূন্য দশমিক ১৮ শতাংশ। অর্থাৎ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংক্রমণের হার কমেছে। আর জুলাই মাসে এই হার প্রায় ‍জুন মাসের মতো থাকলেও তৃতীয় সপ্তাহে গিয়ে সেটি আরও কমতির দিকে নেমে যায় বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মৃত্যুহারের পুরোটা সময় দেখলে বোঝা যায়— এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে মৃত্যুহার নিম্মমুখী হতে শুরু হয়েছে। জুলাই পর্যন্ত এই হার কমেছে। এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মধ্যে মৃত্যুহার কমেছে শূন্য দশমিক ৭৯ শতাংশ হারে, যা পরিসংখ্যানগতভাবে ‘সিগনিফিকেন্ট’। এর অর্থ হচ্ছে আক্রান্তদের মধ্যে কম মানুষই এখন মারা যাচ্ছেন। আগামীতে এই হার আরও কমতে থাকবে।

প্রতিবেদন প্রসঙ্গে ড.শামসুল আলম  সারাবাংলাকে বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও আতঙ্ক নিয়েই অর্থনৈতিক কার্যক্রম ক্রমান্বয়ে উন্মুক্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে নাগরিক সমাজ ও অর্থনীতিবিদদের প্রথম থেকেই ব্যাপক বিরোধিতা ছিল। কিন্তু জীবন ও জীবিকা রক্ষায় সরকারকে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। স্থানিক লকডাউন ও বাজার কার্যক্রম সীমিতভাবে শুরু করে ক্রমান্বয়ে শিথিল করা হয়েছিল। সার্বিকভাবে এতে অর্থনীতি কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি জনসন্তুষ্টিও রয়েছে এতে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা সংক্রমণ প্রাকৃতিকভাবেই স্তিুমিত হয়ে যাচ্ছে। টিকা না আসা পর্যন্ত হয়তো সংক্রমণ পুরোপুরি বন্ধ হবে না, সীমতি পর্যায়ে থেকেই যাবে। আর মৃত্যুহার আরও কমে আসবে। গ্রামের মানুষদের মধ্যে ব্যাপকভাবে সংক্রমণের বিস্তার না ঘটা, দরিদ্র প্রবণ ও বস্তি এলাকায় সংক্রমণ বিস্তারের খবর না পাওয়া, উন্মুক্ত পোশাক কারখানাগুলোতেও তীব্র সংক্রমণের খবর না পাওয়ার ঘটনাগুলোর উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাস্তবতায় হার্ড ইমিউনিটির প্রমাণও মেলে। তবে এ ক্ষেত্রে ড. শামসুল দেশের অণুজীব বিজ্ঞানী ও ভাইরোলজিস্টদের আহ্বান জানান, তারা যেন গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে জানান, মিউটেশনের মাধ্যমে জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে কোভিড-১৯ বাংলাদেশে দুর্বল হয়ে পড়েছে কি না।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনের সুপারিশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ বা ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ সম্পর্কে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপক লঙ্ঘন এবং ব্যাপক জনস্থানান্তর (ঈদের সময়) কিংবা জনসমাবেশ করোনা বাড়িয়ে দিতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হয়েছে। সংক্রমণ প্রবণ এলাকাগুলোতে লকডাউন অব্যাহত রেখে বাধ্যতামূলভাবে মাস্ক-গ্লাভস পরিধান ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।

এতে বলা হয়েছে, এই বিষয়গুলো মেনে অফিস কার্যক্রমসহ অর্থনীতির সব কার্যক্রম চালানো যেতে পারে। মাস্ক-গ্লাভস পরিধান ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলছে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার কথা বিবেচনা করা যেতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আশাবাদ জানানো হয়েছে, অর্থনীতির অভ্যন্তরীণ শক্তিমত্তা ও জনগণের ইতিবাচক সক্রিয়তার কারণে দেশের অর্থনীতি দ্রুতই ঘুরে দাঁড়াবে। বেশি দেরি হলেও ২০২১ সালে হবে বাংলাদেশের অর্থনীতির পূর্ণশক্তিতে পুনরুত্থানের বছর।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেজে/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন