বিজ্ঞাপন

আগস্ট হত্যায় জিয়ার সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখতে কমিশন গঠনের প্রস্তাব

August 20, 2020 | 2:27 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডে কেবল খন্দকার মোশতাক ও কয়েকজন সেনা কর্মকর্তাই জড়িত ছিলেন না, বরং বিদেশি অনেক ষড়যন্ত্রও জড়িত ছিল। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশেষ এক ওয়েবিনারে আলোচকদের বক্তব্যে এমনটাই প্রতিফলিত হয়েছে। পাকিস্তান, লিবিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ঘটনায় জড়িত ছিলও বলে জানিয়েছেন বক্তারা।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১৯ আগস্ট) রাত সাড়ে ৮টায় প্রচারিত এই ওয়েবিনারের শিরোনাম ছিল ‘৭৫-পরবর্তী বাংলাদেশ: বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুনর্বাসন’।

ওয়েবিনারে কলামিস্ট ও সাবেক ছাত্রনেতা সুভাষ সিংহ রায় বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ বন্ধ করতে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল সংসদে জিয়াউর রহমান ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করেছিলেন। এরপরে ১৯৯৬ সালে জনগণের সরকার আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে, তখন আইনমন্ত্রী যখন ইনডেমিটি আইন বিলটি পেশ করেছিলেন, তখন বিএনপি ওয়াকআউট করেছিল। তিনি বলেন, ‘ইনডেমনিটি দেওয়ার যে বজ্জাত অভ্যাস, এটা বিএনপির জন্মলগ্ন থেকেই।’

সুভাষ সিংহ রায় বলেন, ‘আমার বলতে কষ্ট হয়, জিয়াউর রহমান তার সাঙ্গপাঙ্গ দিয়ে ১৫ আগস্টকে নাজাত দিবস পালন করতে উৎসাহ দিত। এমন কি তার স্ত্রী বেগম জিয়ার ভুয়া জন্মদিন ১৫ আগস্ট পালনের নামে যা চলছে, তা ন্যাক্কারজনক।’

বিজ্ঞাপন

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে কখনো সফল পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দাবি করতে পারব না, যতদিন পর্যন্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেষ খুনিকে আইনের আওতায় আনতে না পারব। জাতি হিসেবে এটা যত বড় গ্লানি, তার চেয়ে বড় গ্লানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের।

গবেষক ও কলামিস্ট সৈয়দ বদরুল আহসান বলেন, অনেকে মনে করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট সরকার ১৫ আগস্টের ঘটনাটি জানত।  তখন অ্যাম্বেসিতে ফিলিপ চেরির সঙ্গে খুনি চক্র কয়েকবার দেখা করেছে। গাদ্দাফির সঙ্গে ফারুক রহমান দেখা করেছিল। ১৯৭৩ সালেই তার পরিকল্পনা ছিল একটা কিছু ঘটাবে। তারা লিবিয়ায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। লিবিয়ার কানেকশনটা বজায় রেখেছিল।

গাদ্দাফির সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর কথোপকথনের সূত্র উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গাদ্দাফি কিন্তু শেখ মুজিবকে বলেছিল, তোমরা ইসলামি রাষ্ট্র করো না কেন? বঙ্গবন্ধু উত্তর দিয়েছিলেন, আমরা বাঙালি মানুষ, আমরা ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র, এটা আমরা করব না।’

বিজ্ঞাপন

বদরুল আহসান বলেন, জুলফিকার আলী ভুট্টো কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সকালে তার অফিসে লোকজনকে জিজ্ঞাসা করল, ঢাকা থেকে কোন খবর আছে কি না? তার মানে সে আগে থেকে জানত এমন কিছু একটা ঘটবে। এরপরে তারা পাকিস্তান রেডিওতে খবরটি প্রচার করল, বিশ্ববাসী জানল সেই ক্যু-এর কথা।

লেখক ও গবেষক হাসান মোর্শেদ বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর খুনি সামরিক অফিসাররা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ১ সপ্তাহের মধ্যে জিয়াউর রহমানকে সেনাবাহিনীর প্রধান করে সামরিক গোষ্ঠী। বঙ্গবন্ধুর খুনিরা দেশ থেকে চলে যেতে চায় যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তাদের আশ্রয় না দিলে তারা ব্যাংকক হয়ে লিবিয়া চলে যায়।

তিনি বলেন, ১৯৮৭ সালের ৩ আগস্ট ফ্রিডম পার্টি নামের একটি রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধুর খুনিরা। এই দলের প্রধান হলেন বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল সৈয়দ ফারুক, সাথে বজলুল হুদা, রশিদ এরা ছিল। এরশাদ এই খুনিদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে এসে দল গঠনের সুযোগ দেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে যখন আওয়ামী লীগ ফ্রন্ট লাইন থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে, তখন আওয়ামী লীগকে সামলাতে একটা পেটোয়া বাহিনী হিসেবে ফ্রিডম পার্টি করতে জায়গা ছেড়ে দেন সে সময়ের সেনাশাসক জেনারেল এরশাদ।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের একটি বক্তব্যের জবাবে অস্ট্রেলিয়ার আরএমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শামস রহমান বলেন, ১৯৭৫ পরবর্তী সময় থেকে ইতিহাস যেভাবে বিকৃত হয়ে আসছে এবং যারা এই বিকৃতির সঙ্গে জড়িত, তাদের মুখ থেকে এ ধরনের কথা শোনাটা সমীচীন নয় বলে আমি মনে করি। আমার মনে হয় তিনি কোনো ধরনের তথ্য উপাত্ত জানেন না বা জানার চেষ্টা করেন না বলেই তিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যায় জিয়ার জড়িত থাকার বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা একটা নীলনকশার অংশ। এই নীলনকশায় জেনারেল জিয়া যেমন জড়িত ছিলেন, ঠিক তেমনই মোস্তাক জড়িত ছিলেন, ছিল উচ্চাকাঙ্ক্ষী কিছু সামরিক কর্মকর্তা। এরই মধ্যে প্রকাশিত বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল।

তিনি আরও বলেন, সাংবাদিক ও গবেষক লরেন্স লিফশ্যুলৎজ তার একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুকে কিসিঞ্জার ঘৃণা করতেন এবং মুজিবকে হত্যার জন্য ষড়যন্ত্রে তিনিও যুক্ত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে যে যার মতো ভূমিকা পালন করে গেছে বলেই তাকে হত্যা করা সহজ হয়ে গেছে। আর বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়া জড়িত ছিলেন, সেটা বোঝার জন্য ধারাবাহিকভাবে গবেষণা করলেই সত্যতা প্রমাণ হবে বলেও তিনি মত প্রকাশ করেন।

সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) সহযোগিতায় ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদ।

আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব ছাড়াও অনুষ্ঠানটি সরাসরি প্রচারিত হয় বিজয় টিভি, সারাবাংলা ডটনেট, বিডিনিউজ২৪, বাংলা নিউজ২৪, বার্তা২৪, সমকাল, যুগান্তর, ইত্তেফাক, ভোরের কাগজ, জাগো নিউজ২৪ ও বাংলাদেশ জার্নালের ফেসবুক পেজে।

সারাবাংলা/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন