বিজ্ঞাপন

ওয়ার্ক পারমিট জটিলতায় গণস্বাস্থ্য ছাড়তে হচ্ছে ড. বিজনকে

August 30, 2020 | 8:33 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: জন্ম বাংলাদেশে হলেও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অণুজীব বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল এখন মূলত সিঙ্গাপুরের নাগরিক। তাই নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশে কাজ করতে হলে তার ওয়ার্ক পারমিট থাকতে হবে। কিন্তু তিনি বর্তমানে বাংলাদেশে রয়েছেন টুরিস্ট ভিসায়। ফলে ওয়ার্ক পারমিট জটিলতায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের করোনা শনাক্তকরণ কিট উদ্ভাবক দলের প্রধান এই বিজ্ঞানী গণস্বাস্থ্যের সঙ্গে আর কাজ করতে পারবেন না বলে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৩০ আগস্ট) এ সংক্রান্ত কিছু নথি সারাবাংলার কাছে এসেছে। নথিগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীলকে তিন বছরের চুক্তিতে গণবিশ্ববিদ্যালয়ে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি চিঠি দিয়ে জানায় গণস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। পরদিন ১৩ ফেব্রুয়ারি তাকে সংশোধনী চিঠি পাঠিয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, এ নিয়োগ প্রাথমিকভাবে ছয় মাস বহাল থাকবে। তবে সন্তোষজনক কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে নিয়োগের মেয়াদ বাড়ানো হবে বলেও জানানো হয়।

এদিকে ড. বিজন কুমার সীল গণস্বাস্থ্যকে দেওয়া বায়োডাটায় স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ২৮৮বি, বুটিক বাটুক, সিঙ্গাপুর উল্লেখ করেছেন। তাই তিনি প্রকৃত পক্ষে বাংলাদেশের নাগরিক কি না, সেটি যাছাইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দেওয়ার জন্যও বলা হয় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ওই চিঠিতে।

বিজ্ঞাপন

এর পর গত ২১ জুলাই ড. বিজন কুমার গণস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের কাছে কিছু ডকুমেন্ট সংক্রান্ত চিঠি জমা দেন। তাতে ড. বিজন কুমার সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্বের বিষয়টি স্পষ্ট হয়। সেই চিঠিতে ড. বিজন কুমার জানান, তিনি বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করলেও বর্তমানে তিনি সিঙ্গাপুরের নাগরিক। সিঙ্গাপুরের নাগরিক বিধায় ওয়ার্ক পারমিটের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন বলেও জানান তিনি। কিন্তু গণস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ডকুমেন্ট পর্যালোচনা করে দেখতে পান, ড. বিজন কুমার ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদনের কথা জানালেও আবেদন সংক্রান্ত কোনো ডক্যুমেন্ট জমা দেননি। এমনকি গণস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ড. বিজনের দুইটি ভিসা পর্যালোচনা করে দেখতে পান, ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২০ সালের ১ জুলাই পর্যন্ত তার প্রথম ভিসার কোথাও চাকরি করার কোনো অনুমোদন নেই। এরপর ১৫ জুলাই ২০২০ সাল থেকে ১৭ মে ২০২১ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় মেয়ারদের ভিসাতেও কোনো চাকরির অনুমোদন নেই। ভিসাগুলো মূলত টুরিস্ট ভিসা হিসেবে অনুমোদন হয়।

এ অবস্থায় গত ২৭ জুলাই গণস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ড. বিজনকে লিখিত এক চিঠিতে জানায়, ১ জুলাই থেকে ড. বিজনকে বেতন-ভাতা প্রদান ও এর আগের চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। তবে তিনি যদি ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করতে পারে, তবে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে গণস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে ড. বিজন কুমার শীল বলেন, ‘আমার আদি বাড়ি ও জন্ম বাংলাদেশে। তবে আমি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব সমর্পণ করে সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছি। তিন বছরের চুক্তিতে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলাম। গত ১ জুলাই ওই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে। ভিসার মেয়াদ বাড়াতে আবেদন করেছি। তবে বাংলাদেশ সরকার এখনো সেটি বাড়ায়নি। পরে ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে ট্যুরিস্ট হিসেবে বাংলাদেশে অবস্থান করছি। এ অবস্থায় গণবিশ্ববিদ্যালয় বা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারি না। আর গণবিশ্ববিদ্যালয়ও আমার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে।’

বিজ্ঞাপন

সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্বের বিষয়ে বিজন কুমার শীল বলেন, ‘আমি ২০০২ সালে সিঙ্গাপুর সিভিল সার্ভিসে যোগ দেই। সিঙ্গাপুরে চাকরি নেওয়ার পর ওখানকার নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছেড়ে দিয়েছিলাম। তখন সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব নিয়েছিলাম।’

জানতে চাইলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘বিজন কুমার শীলের মতো একজন বিজ্ঞানীকে আমার প্রতিষ্ঠানে রাখার মতো আর্থিক সামর্থ্য ছিল না বলে আগে আমি তাকে রাখতে পারিনি। এবার অ্যান্টিবডি কিট উদ্ভাবনে তিনি সবকিছু করেছেন। তাকে গণস্বাস্থ্য থেকে বাদ দেওয়া হয়নি। তিনি এখনো গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও গণবিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন। আমার সঙ্গে তার কোনো ধরনের বিরোধ বা দূরত্বও তৈরি হয়নি। কোনো মহল হয়তো বিষয়টি অন্যভাবে দেখছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নাগরিকত্ব জটিলতায় গণস্বাস্থ্যের অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেনের কাজ অনেক পিছিয়ে গেছে। এটি করা না গেলে গণস্বাস্থ্যের ১০ কোটি টাকা ক্ষতি হবে। আর সাধারণ মানুষের ক্ষতি হবে আরও অনেক বেশি।’

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, ড. বিজন কুমার শীল ১৯৬১ সালে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়ায় এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নাটোর বনপাড়ার সেন্ট যোসেফ হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং পাবনার সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা শেষে ভর্তি হন ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ভেটেরিনারি সায়েন্স বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি। এরপর এখান থেকেই তিনি অণুজীববিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। ১৯৯২ সালে পিএইচডি সম্পন্ন করতে ইংল্যান্ডে পাড়ি দেন তিনি। সেখানে সারে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন ড. বিজন।

এরপর ২০০৩ সালে সার্স প্রতিরোধ তিনি সিঙ্গাপুর সরকারের বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করেন। তখন তিনি সিঙ্গাপুর গবেষণাগারে কয়েকজন সহকারীকে নিয়ে সার্স ভাইরাস দ্রুত নির্ণয়ের পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এসময় দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় সার্স প্রতিরোধে যে ক’জন বড় ভূমিকা রেখেছেন, ড. বিজন তাদের একজন। ‘র‌্যাপিড ডট ব্লট’ পদ্ধতিটি ড. বিজন কুমার শীলের নামে পেটেন্ট করা। পরে এটি চীন সরকার কিনে নেয় এবং সফলভাবে সার্স মোকাবিলা করে। তিনি সিঙ্গাপুরেই গবেষণা করছিলেন ডেঙ্গু নিয়ে। গবেষণা চলা অবস্থায় তিন বছর আগে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগ দেন ড. বিজন।

সারাবাংলা/এসএইচ/পিটিএম

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন