বিজ্ঞাপন

একদিনে পেঁয়াজের কেজি ৬০ থেকে ১০০ টাকা

September 15, 2020 | 12:04 pm

গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে। মতিঝিল ও খিলগাঁওসহ রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচা বাজারে এবং মহল্লার দোকানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা পর্যন্ত। অধিকাংশ খুচরা দোকানে পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রাখছে। আবার কোনো কোনো দোকানে আরও দাম বাড়ার আশায় পেঁয়াজের বস্তা ঢেকে রাখছে কিংবা দোকান বন্ধ রাখছে। ফলে বাজারে পেঁয়াজের কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে। ক্রেতারা অনেকটা হুমড়ি খেয়ে পেঁয়াজ কিনছে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মতিঝিল এজিবি কলোনি কাঁচাবাজার, আরামবাগ কাঁচাবাজার, খিলগাঁও কাঁচাবাজার সরেজমিন ঘুরে এই চিত্র পাওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ভারত সরকার পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণার খবরে রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। সোমবার সকালে বিভিন্ন দোকানে পেঁয়াজের কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি হলেও সন্ধ্যার পর তা ৬৫ থেকো ৭০ টাকায় বিক্রি হয়। অন্যদিকে এদিন সকালে বিভিন্ন আড়তে প্রতি কেজি পেঁয়াজের পাইকারি মূল্য ছিলো ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।

এদিকে মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে ঘণ্টায় ঘণ্টায় পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। এদিন সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৮০ থেকে ৯০ টাকা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আড়তে পাইকারি পেঁয়াজের দাম বাড়ার খবরে সকাল ১১টায় প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১১০ টাকা। ফলে গত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে খুঁচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, আর পাইকারি বাজারে বেড়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা।

বিজ্ঞাপন

সোমবার রাত পর্যন্ত বিভিন্ন মহল্লার দোকানগুলোতে এবং বিভিন্ন কাঁচা বাজারে পেঁয়াজ অনেকটা আগের কয়েকদিনের দামেই বিক্রি হচ্ছিল। কারণ তখনো বেশিরভাগ দোকান ও আড়তে ভারত থেকে পেঁয়াজ বফতানি বন্ধের খবর পৌঁছেনি। ফলে সোমবার রাতেও কোনো কোনো দোকানে প্রতি কেজি পেয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। কিন্তু মঙ্গলবার সকাল থেকেই খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা বেড়ে ১০০ থেকে ১২০ টাকায় এলাকাভেদে বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর শ্যামবাজার পেঁয়াজ রসুন আড়তদার সমিতির প্রচার সম্পাদক ও মেসার্স আলহাজ্ব ভান্ডারের মালিক মো. শহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করায় খুচরা ও পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেড়েছে। আজ (মঙ্গলবার) প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ৫৫ টাকা, দেশি পেয়াঁজ ৭৫ থেকে ৮০ টাকা বিক্রি করেছি। সরকার পেঁয়াজ আমদানির বিকল্প উদ্যোগ না নিলে বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখা কঠিন।’

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে মতিঝিল এজিবি কলোনি কাঁচা বাজারের আল্লাহর দান দোকানের মালিক পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজ (১৫ সেপ্টেম্বর) প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। ভারতীয় বড় সাইজের পেঁয়াজ বিক্রি করছে ৭০ টাকা কেজি।’

দাম বাড়ার কারণ প্রসঙ্গে তিনি আজকের পেঁয়াজ কেনার স্লিপ দেখিয়ে বলেন, ‘রাজধানীর শ্যামবাজারে আজ প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ কিনেছি ৮৫ টাকা করে। এর সঙ্গে পরিবহন খরচ ধরা হলে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৯০ টাকা পড়ছে। ফলে বাধ্য হেয়ে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে।’

অন্যদিকে কামাল উদ্দিন নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘কমলাপুর কাঁচাবাজারে সকালে ৯০ টাকা কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম চাইলেও এক ঘণ্টা পর তা বাড়িয়ে ১১০ টাকা কেজি বিক্রি করছে। ফলে সেখান থেকে আর পেঁয়াজ না কিনে, মতিঝিল কলোনি বাজার থেকে ১০০ টাকা কেজি পেঁয়াজ কিনলাম।’

বিজ্ঞাপন

এর আগে, ভারতের মহারাষ্ট্রে বন্যার কারণে পেঁয়াজের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অজুহাতে গত বছর ভারত সরকার প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজের মিনিমাম এক্সপোর্ট প্রাইজ (এমইপি) নির্ধারন করে দেয়। গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজের আমদানি মূল্য ৩০০ মার্কিন ডলার থেকে বাড়িয়ে ৮৫০ মার্কিন ডলার পূর্ণনির্ধারণ করে। পরবর্তীতে একই বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার পুরোপুরি পেয়াঁজ রফতানি বন্ধ ঘোষণা করে। যার প্রভাবে ২০১৯ সালে পেঁয়াজের কেজি ৩০০ টাকায় উঠে যায়। এবছরও সেপ্টেম্বর মাসে (১৪ সেপ্টেম্বর) ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করার ঘোষণা দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পেঁয়াজের কেজি ৬০ টাকা থেকে বেড়ে ১০০ টাকায় উন্নীত হয়।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রতি বছর পেয়াঁজের চাহিদা ২৪ লাখ মেট্রিক টন। উৎপাদন হচ্ছে ২৩ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু ৩০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে বছরে ঘাটতি থাকে ৮ থেকে ৯ লাখ মেট্রিক টন। এই ঘাটতি মোকাবিলায় বছরে ৮ থেকে ৯ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়।

সারাবাংলা/জিএস/এমও

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন