বিজ্ঞাপন

জাককানইবি’র অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় ৪৯১ কোটি থেকে বেড়ে ৮৪০ কোটি

October 5, 2020 | 8:14 am

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) অবকাঠামো উন্নয়নে পরামর্শক ব্যয় দ্বিগুণ হচ্ছে। মূল অনুমোদিত প্রকল্পে এই খাতে দুই কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও এবার প্রথম সংশোধনীতে প্রস্তাব করা হয়েছে চার কোটি টাকা। তবে এরই মধ্যে পরামর্শকের পেছনে খরচ হয়েছে এক কোটি টাকা।

বিজ্ঞাপন

কেবল পরামর্শক ব্যয় নয়, সার্বিকভাবেও প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে। তার পরিমাণ প্রায় ৭১ শতাংশ। মূল অনুমোদিত প্রকল্পের ব্যয় যেখানে ছিল ৪৯১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, সেখানে প্রথম সংশোধনীতে এই ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৮৪০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ ব্যয় বাড়লে ৩৪৯ কোটি ২২ লাখ টাকা।

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক সূত্র সারাবাংলাকে জানায়, প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবটি প্রক্রিয়াকরণ শেষ করা হয়েছে।

আগামীকাল মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রস্তাবনাটি উপস্থাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শেষ করবে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্পটি সংশোধনের তিনটি কারণ তুলে ধরা হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের পক্ষ থেকে। বলা হয়েছে— ভূমি অধিগ্রহণের মূল্যবৃদ্ধি, পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সমীক্ষার আলোকে ভৌত অবকাঠামোর ডিজাইন ও প্রাক্কলনে পরিবর্তন এবং পিডব্লিউপি’র রেট শিডিউল-২০১৮ অনুসরণের ফলে প্রকল্পের কিছু অংশে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্পটি সংশোধন করতে হচ্ছে।

এদিকে প্রকল্পে বিরাজ করছে ধীর গতি। ২০১৮ সালে শুরু হলেও এখন পর্যন্ত প্রকল্পটিতে ব্যয় হয়েছে ১২৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রকল্পের অগ্রগতি ২৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ১৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রথম প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। ২০০৭ সালে সেই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। এরপর সীমিত আকারে দু’টি ফ্যাকাল্টির অধীনে চারটি বিভাগ নিয়ে ২০০৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়।

বিজ্ঞাপন

এরপর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন শীর্ষক একটি আমব্রেলা প্রকল্পের আওতায় ৪২ কোটি ৪২ লাখ টাকার একটি প্রকল্পে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়কে যুক্ত করা হয়। ওই প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন, ভবনগুলোর ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ, লাইব্রেরি ভবন নির্মাণ, ছাত্রী হল, মেডিকেল সেন্টার, আবাসিক ভবন ও শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়।

পরে ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন’ নামে আরও একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ২৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন মেয়াদে সেটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। ওই প্রকল্পটির আওতায় একাডেমিক ভবন, ডরমিটরি ও ছাত্র/ছাত্রী হল নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। সর্বশেষ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক এই ৪৯১ কোটি ৩৪ লাখ টাকার প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। বাস্তবায়নের দুই বছরের মাথায় এসে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।

প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে— ভূমি অধিগ্রহণ, দ্বিতীয় প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, পাঁচটি ইনস্টিউট, আর্ন্তজাতিক ছাত্র/ছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষ ও আইটি স্পেস ভবন নির্মাণ। এছাড়া অতিথি ভবন, একাডেমিক ভবন, স্কুল ও কলেজ ভবন, একটি ছাত্র ও একটি ছাত্রী হল নির্মাণ, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য ইউটিলিটি ভবন নির্মাণ করা হবে এই প্রকল্পের আওতায়।

এর বাইরে এর আওতায় আরও যেসব কাজ করা হবে সেগুলো হলো— শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবন, ১১-২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য টাওয়ার নির্মাণ, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের আবাসিক ভবন, মাল্টিপারপাস হল কাম টিএসসি কাম জিমনেসিয়াম ভবন নির্মাণ, চিকিৎসা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ, ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের জন্য আবাসিক ভবনসহ মসজিদ নির্মাণ, বিদ্যমান ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ, ক্যাম্পাসের চারদিকে সবুজ বেষ্টনী নির্মাণ এবং বিভিন্ন ল্যাব যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র ও ল্যাপটপসহ আনুষাঙ্গিক ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি কেনা।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আবুল কালাম আজাদ সারাবাংলাকে বলেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে এসে প্রকল্পটির ব্যয় বাড়ানোর যেসব কারণ দেখানো হয়েছে, সেগুলো অযৌক্তিক নয় বলেই প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন অনেকটাই পূর্ণাঙ্গতা পাবে।

প্রকল্পের মাঝ পথে এসে পরামর্শক ব্যয় বাড়ানোর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আবুল কালাম আজাদ বলেন, পরামর্শক অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজন রয়েছে। যেমন— সয়েল টেস্টিং, ভবনের নকশা তৈরি— এরকম কাজের জন্য পরামর্শক প্রয়োজন। প্রয়োজনে পরামর্শক ব্যয়ও বাড়তে পারে। সেটা দ্বিগুণও হতে পারে। তবে প্রয়োজনের বাইরে কোনো ব্যয় অনুমোদনের সুপারিশ আমরা করি না।

সারারবাংলা/জেজে/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন