বিজ্ঞাপন

টাকা নিয়ে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপার অভিযোগ

October 9, 2020 | 7:45 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

বগুড়া: বগুড়ার শেরপুরে গ্রাম্য সালিশের নামে দুটি ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যান ও গ্রাম্য মাতুব্বরদের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি ধর্ষণের শিকার ওই দুই নারীর সম্ভ্রমের মূল্য নির্ধারণ করে জরিমানাও আদায় করেছেন তারা। এর মধ্যে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করায় অভিযুক্ত ব্যক্তির কাছ থেকে ৯০ হাজার টাকা ও গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ৮০ হাজার টাকা জরিমানাসহ জুতা-পেটার রায় দিয়ে তা কার্যকর করা হয়। পৃথক এসব ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে উপজেলার গাড়ীদহ ইউনিয়নের বড় শিবপুর ও খামারকান্দি ইউনিয়নের ঝাজর গ্রামে।

বিজ্ঞাপন

ভুক্তভোগীর পরিবার, স্থানীয় এলাকাবাসী ও গ্রাম্য মাতুব্বরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ৪ অক্টোবর রাতে বড় শিবপুর গ্রামে মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীকে পাশের রামনগর গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে ছাব্বির হাসান ধর্ষণ করে। এসময় শিক্ষার্থীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে ছাব্বিরকে ধরে ফেলে। এরপর একই গ্রামের স্থানীয় গাড়িদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দবিবুর রহমানের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে এবং সেখানেই তাকে আটকে রাখা হয়। পরদিন ওই চেয়ারম্যানের বাড়িতে এই ধর্ষণ ঘটনা নিয়ে গ্রাম্যসালিশি বৈঠক করেন গ্রাম্য মাতুব্বররা। তারা মোটা অঙ্কের জরিমানা নিয়ে সালিশের মাধ্যমে আপোষ করে ছাব্বিরকে ছেড়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে ধর্ষণের শিকার মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর পরিবারকে আইনের আশ্রয় নিতে বাধা ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ রয়েছে গ্রাম্য মাতুব্বর আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে।

কিন্তু তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। এদিকে, ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা আব্দুল মজিদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেও কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি। সালিসি বৈঠকে উপস্থিত থাকা গ্রাম্য মাতব্বর আব্দুল মোমিন বলেন, চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য গ্রাম্য মাতব্বররা বিচার করেছেন। সেই অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তির কাছ থেকে ৬০হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে ভুক্তভোগীর বাবাকে দেয়া হয়েছে। তবে এ তথ্যের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

তবে ইউপি চেয়ারম্যান দবিবুর রহমান তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ঘটনাটি আমার গ্রামের। তাই শুনেছি। এছাড়া আমি কোন বিচার-সালিস করিনি। এমনকি সেখানে উপস্থিতও ছিলাম না। তাই বিষয়টি সম্পর্কে আমার তেমন কিছুই জানা নেই।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে গত ১ অক্টোবর রাতে উপজেলার খামারকান্দি ইউনিয়নের ঝাজর গ্রামের দিনমজুর বেল্লাল হোসেনের বাড়িতে ঢুকে তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করেন প্রতিবেশি আজিজমুদ্দিনের ছেলে মো. হেলাল উদ্দীন। পরদিন ঘটনাটি নিয়ে গ্রাম্য মাতব্বর সোলায়মান আলীর বাড়িতে সালিশি বৈঠক বসানো হয়। সেখানে গ্রাম্য মাতুব্বর সেলিম রেজা, ফারুক হোসেন, আজিজ ও টুনু অভিযুক্ত ধর্ষককে বেশ কয়েকটি জুতা-পেটা করে সালিশের সমাপ্তি টানেন। কিন্তু এই বিচার মানতে অস্বীকার করেন ধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধূর স্বামী বেল্লাল হোসেন। পরবর্তীতে গ্রাম্য মাতুব্বররা আবারও ঘরোয়াভাবে বসেন এবং ধর্ষকের কাছ থেকে ৮০হাজার টাকা নিয়ে গৃহবধূর পরিবারকে দিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী। কিন্তু এই ধরনের অপরাধ আপোষযোগ্য নয়।

বগুড়ার শিশু ও নারী নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের এপিপি অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম মজনু জানান, জনপ্রতিনিধি ও গ্রাম্য মাতুব্বররা ধর্ষণের বিচার করতে পারেন না। এমনকি এ ধরনের অপরাধের গ্রাম্য সালিশ ও ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়া আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই এসব ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান এই আইনজীবী।

বগুড়ার শেরপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এসএম আবুল কালাম আজাদ জানান, দুটি ঘটনার মধ্যে শিবপুর গ্রামের ঘটনার কথা শুনেছি। তারা থানায় অভিযোগ করতে আসার কথা। অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া অন্য ঘটনাটি সম্পর্কে জানা নেই।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/টিসি

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন