বিজ্ঞাপন

মেয়র-কর্মকর্তারা করোনাক্রান্ত, আইসোলেশনে ডিএনসিসির নিয়মিত অভিযান

October 28, 2020 | 10:09 am

সাদ্দাম হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: করোনা মহামারির কারণে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নিয়মিত কার্যক্রম প্রায় টানা ছয় মাস স্থবির হয়ে পড়েছিল। এ সময় অনেকটা করপোরেশনের ভবন কেন্দ্রিক ছিল সংস্থাটির কার্যক্রম। কিন্তু করোনার ভয়কে উপেক্ষা করে গত টানা দুই মাস করপোরেশনের ভবনের বাইরে গিয়ে রীতিমতো চমক দেখিয়েছেন ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম।

বিজ্ঞাপন

এ সময় করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেও ছিল কর্মচঞ্চলতা। নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি পরিচালিত হয়েছে কয়েকটি বিশেষ অভিযান। এসব অভিযানে মেয়র আতিকুল ইসলাম নিজে মাঠে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এতে বেশকিছু অনিয়মের বিরুদ্ধে মেয়রের কঠোর অবস্থানে নগরবাসীর মাঝেও ছিল স্বস্তির আভাস। কিন্তু গত ১২ অক্টোবর ডিএনসিসি মেয়রসহ করোনায় আক্রান্ত হন ১০ জন কর্মকর্তা। এতে ভাটা পড়ে ডিএনসিসির বিশেষ অভিযান কার্যক্রমে। সেইসঙ্গে নিয়মিত কার্যক্রমও ঢিমেতালে চলছে বলে অভিযোগ করপোরেশন সংশ্লিষ্টদের। ঠিক যেন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সঙ্গেই আইসোলেশনে গেছে ডিএনসিসির নিয়মিত কার্যক্রম।

তবে হঠাৎ গতি ফেরা কার্যক্রমে কর্মকর্তারা করোনা আক্রান্ত হওয়ায় নিয়মিত কার্যক্রমে গতি কমলেও একেবারেই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়নি বলে জানিয়েছেন সংস্থার প্রধান নির্বাহী। ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. সেলিম রেজা সারাবাংলাকে বলেন, ‘মেয়রসহ আমাদের ১০ জনের মতো কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনা আক্রান্ত হওয়ায় হঠাৎ করেই বেশকিছু বিশেষ অভিযানসহ নিয়মিত কার্যক্রমে গতি কমেছে, এটা ঠিক। কিন্তু একেবারেই যে থেমে গেছে তাও নয়। কিছুটা ধীর গতিতে হলেও কার্যক্রম চলছে। এখনও নিয়মিত অভিযান হয়। যদিও আগের মতো বড় পরিসরে হচ্ছে না। তবে আবার সবাই সুস্থ হয়ে কাজে ফিরলে অবশ্যই কার্যক্রমে গতি ফিরবে বলে আশা করছি।’

ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে টানা ১৫ দিন ডিএনসিসির রাজস্ব বাড়ানোর লক্ষ্যে বকেয়া হোল্ডিং কর আদায়ে করপোরেশনরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে মাঠে নামেন মেয়র আতিক। এদিন মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকা থেকে শুরু হয় অভিযান। এরপর কর আদায়ের অভিযানের পাশাপাশি চলমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই নগরবাসীর স্বস্তির জন্য কোভিড ভয় উপেক্ষা করে ফুটপাত ও সড়ক থেকে অবৈধ স্থাপনা এবং অবৈধ বিলবোর্ড-সাইনবোর্ড উচ্ছেদ, রাজস্ব বৃদ্ধিতে চিরুনি অভিযান, অবৈধ ঝুলন্ত তার অপসারণ, মশক নিধন, খাল পরিষ্কারসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে সরাসরি জনসংস্পর্শে থেকে অভিযান পরিচালনা করেন মেয়রসহ সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আর এ কারণেই তারা করোনায় আক্রান্ত হন।

বিজ্ঞাপন

ডিএনসিসির যারা করোনা আক্রান্ত তারা হলেন- মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়েদুর রহমান, প্রধান সমাজ কল্যাণ কর্মকর্তা তাজিনা সারোয়ার, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ হোসেন, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবেদ আলী, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা সাজিয়া আফরিন এবং জনসংযোগ কর্মকর্তা এএস এম মামুন।

সূত্র বলছে, করোনা আক্রান্ত হওয়ার আগে বিশেষ অভিযানে ডিএনসিসি প্রায় ৫ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে। সেইসঙ্গে গুলশান-বনানী-বারিধারা ও উত্তরায় অধিকাংশ অবৈধ বিলবোর্ড-সাইনবোর্ড অপসারণ করা হয়। এছাড়া গুলশান ও বারিধারার বেশকিছু এলাকার সড়কে থাকা অবৈধ মালামাল অপসারণ করা হয়। সেইসঙ্গে যত্রতত্র ঝুলে থাকা অবৈধ ক্যাবলও অপসারণ কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। কিন্তু মেয়রসহ কর্মকর্তারা করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর থেমে যায় এসব কার্যক্রম। ঠিক যেন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সঙ্গেই আইসোলেশনে গিয়েছে ডিএনসিসির নিয়মিত কার্যক্রম।

তবে অভিযানে যেসব বেদখল সড়ক উদ্ধার করা হয়েছে সেসব সড়কে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সেগুলো এখন পর্যন্ত ফের বেদখল হয়নি। তাই সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদেরও প্রত্যাশা ডিএনসিসির নিয়মিত কার্যক্রমে যেন ফের গতি ফেরে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) করোনার দ্বিতীয় পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসায় হাসপাতাল ছেড়ে বাসায় গেছেন ডিএনসিসির মেয়রের পরিবার। সুস্থ হয়ে ওঠায় মেয়র আতিক নগরবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘তাদের দোয়ায় কিছুটা সুস্থ হয়ে পরিবার নিয়ে বাসায় ফিরেছি। এজন্য সকলের কাছে কৃতজ্ঞ, যারা মনে-প্রাণে সুস্থতার জন্য দোয়া করেছিলেন।’

মেয়র বলেন, ‘আমরা বেশ কয়েকজন করোনা আক্রান্ত হওয়ায় করপোরেশনের নিয়মিত কার্যক্রমে কিছুটা স্থবিরতা ছিল। কিন্তু আশা করছি সেটি আবারও গতি ফিরে পাবে। আমাকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আরও দুয়েক সপ্তাহ বাসায় বিশ্রামে থাকতে হবে। এসময় কেটে গেলে অবশ্যই ফের থেমে যাওয়া অভিযান শুরু হবে। আশা করছি খুব দ্রুত নগরবাসীর সেবা করতে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠবো।

সারাবাংলা/এসএইচ/পিটিএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন