বিজ্ঞাপন

স্বপ্নগুলো দুয়ারে এসে অপেক্ষা করছে…

January 1, 2021 | 11:37 am

সাইফুল ইসলাম মাননু

নতুন বছরের আগামনী বার্তা অবচেতনভাবেই আমাদের সবার মনে এক ধরনের প্রত্যাশা জাগিয়ে তোলে। কেন জানি মনে হয়, যা কিছু মন্দ সব পেছনে ফেলে, আমরা খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছি সুন্দর ভবিষ্যতের। স্বপ্নগুলো নিজ উদ্যোগেই চুপচাপ আমাদের দুয়ারে এসে অপেক্ষা করছে। নতুন বছর এলেই টুপ করে চৌকাঠটা পেরিয়ে সে সোজা ঢুকে পরবে ঘরে। রূপ নেবে বাস্তবে। মন্দরা আর কোন ভাবেই স্পর্শ করতে পারবে না আমাদের। কল্পনার চাইতেও সুন্দর হয়ে উঠবে আমাদের আগামী। আর তাইতো প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসেব মাড়িয়ে বছরের শেষ মাসের শুরু থেকেই শুরু হয় আগামীর তরে স্বপ্নের জালবোনা।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের। নতুন বছর আসে ঠিকই। গুটি গুটি পায়ে চলতে চলতে সেও একদিন ৩৬৫দিনে পৌঁছে যায়। সেও গত হয়। আবারো নতুন বছরের জন্য অপেক্ষা। এমনি করে একদিন আমাদের জীবনের সমস্ত বছরগুলোকে আমরা পেছনে ফেলে পৌঁছে যাই মৃত্যুর কাছাকাছি বছরে, মাসে, দিনে কিংবা মুহুর্তে। বেলাশেষে জীবনের হালখাতাটা মেলাতে গিয়ে প্রায় বেশিরভাগ মানুষই হয়ে পড়ি হতাশাগ্রস্থ। আমাদের স্বপ্নগুলো বনের পাখির মত এদিক সেদিক উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে অজানায় হারিয়ে যায়। বস মানে না। কিছুতেই যেন সে আপন হয়না।

ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখলে জাগরণে যে সেই স্বপ্ন হারিয়ে যাবে সেটাইতো স্বাভাবিক। আমরা বেশির ভাগ সময়ই স্বপ্নের আবেশে ভাসি। আফিম খাওয়া নেশাগ্রস্থ মানুষের মত নিশ্চুপ বসে স্বপ্নের রঙে রাঙিয়ে তুলি আমাদের কল্পনা। কিন্তু তাকে স্বার্থক করতে, বাস্তব রূপ দিতে, নিজের করে পেতে ব্যাকুল হয়ে ছুটি ক’জন?

জংলী ষাঁড়কে বস মানাতে চায় যে রাখাল, তাকে যে ঐ ষাঁড়ের চেয়েও ক্ষিপ্রগতিতে ছুটতে হয় দিনরাত, ভালোবাসার আবেশে জড়িয়ে ধরে অনুক্ষন তাকে পাওয়ার সাধনার মত্ত থেকেই যে একদিন তাকে আপন করে পাওয়া হয়, এই বাস্তবতা আমাদের ক’জনার বোধগম্য। আমরা শুধু অন্যের প্রাপ্তিটাই দেখি। পেছনের শ্রম আর সাধনাটা দেখি না, বা দেখতে চাই না।

বিজ্ঞাপন

২০২০ সাল। বিশ্বে মহামারির কারণে ব্যবসা, বানিজ্য, শিক্ষা আর প্রাত্যহিক জীবনের স্বাভাবিকতাসহ সবকিছু ছাপিয়ে যে বছরে শুধুমাত্র বেঁচে থাকাটাই ছিলো সব চেয়ে বড় প্রাপ্তি, তার পরবর্তী বছর মানে ২০২১-এ এসে পূর্ব পরিস্থিতি উত্তরণে আমাদেরকে কি পরিমাণ শ্রম আর মেধার প্রয়োগ করতে হবে, তা আর বলবার অবকাশ রাখে না। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি- ব্যক্তি-পরিবার, সমাজ কিংবা রাষ্ট্র, প্রতিটি ক্ষেত্রের প্রতিটি মানুষকেই যে তার ব্যক্তিগত বলয়ের বাইরে এসে সমষ্টিগতভাবে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পূর্ব পরিস্থিতি উত্তরণ ও আগামীর সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে, করোনা আমাদেরকে সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেছে। প্রিয়জনকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুধুমাত্র ‘শুভ নববর্ষ’ বলে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়ে দায় এড়িয়ে যাবার সময় এখন নয়। এখন সময় কর্ম আর সহযোগিতার মাধ্যমে নিজের, পরিবারের, সমাজের তথা রাষ্ট্রের উন্নয়নে নিজেকে উৎসর্গ করে জাতীয় উন্নয়নে ভুমিকা রাখা। এমনি এমনি কোন কিছুই শুভ হয়ে যায় না। কঠোর পরিশ্রম দিয়েই জীবনে সব কিছুকে শুভ করতে হয়।

আমি থেকে বেরিয়ে এসে আমরা, আমার থেকে আমাদের আর তরুণের উদ্যম ও উদ্দীপনার সঙ্গে প্রবীণদের অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে এগিয়ে গেলে যেকোন প্রতিকূল পরিস্থিতিকে সামলে ওঠা খুব একটা কঠিন বিষয় না। অশুভকে শুভ করবার এক এবং অভিন্ন পথই হচ্ছে সঠিক সময়ে, সঠিক জায়গায়, সমষ্টিগতভাবে মেধা, মনন আর শ্রমের বিনিয়োগ করা।

বেশিরভাগ সময়ই আমরা আমাদের অপ্রাপ্তির যাবতীয় দায় অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে স্বস্তির ঢেঁকুর তুলি। কিন্তু পরিবার, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের প্রতি যে আমারও কিছু দায় আছে, দায়িত্ব আছে সেটা আমরা বেমালুম ভুলে বসে থাকি। মাঝে মাঝেতো আমরা নিজের প্রতি নিজের দায়িত্বও ভুলে যাই। কিন্তু এখন সময় এসেছে যার যার জায়গা থেকে তার তার দায় মেটানোর। উঁচু-নিচুর বিভেদ ভুলে একসাথে এগিয়ে যাবার। সময় এসেছে শিক্ষিত থেকে সুশিক্ষিত হবার। চিন্তাকে সুচিন্তায় রূপান্তর করবার। ধর্মের নামে মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি না করে ধর্মের মূলমন্ত্র সম্প্রীতি আর ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দেবার। যে কৃষক রোদে পুড়ে শরীরের ঘাম ঝরিয়ে, যে শ্রমিক সামান্য প্রাপ্তিতে তুষ্ট হয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে অসামান্য অবদান রেখে যাচ্ছে, সময় এসেছে তার যথার্থ সন্মান আর প্রাপ্তি বুঝিয়ে দেবার। কর্মকে শুধুমাত্র নিজের ক্ষুধা মেটানোর অবলম্বন হিসেবে না ভেবে, মরে গিয়েও অমর হবার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবার সময় চলে এসেছে।

বিজ্ঞাপন

সুশিক্ষা, পরস্পর পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, দায়িত্বশীল আচরণ আর দেশপ্রেমই একটা জাতিকে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষে পৌঁছে দিতে পারে। মোট কথা হচ্ছে সকল ধর্মের, বর্ণের, পেশার মানুষ মিলেমিশে একসাথে কাজ করলেই ২০২১ আমাদের জন্য শুভ হয়ে ধরা দেবে। মানবসৃষ্টির আদি রহস্য হচ্ছে প্রেম। আর প্রেমের বহিঃপ্রকাশ হয় কর্মে। আসুন আমরা সবাই মিলে এ বছরটাকে শুভ করে তুলি। যে প্রত্যাশা আর স্বপ্ন নিয়ে লাখো শহীদ হাসতে হাসতে তাদের প্রাণ উৎসর্গ করেছে আমাদের কর্ম দিয়ে তাদের সেই স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ি। শুভ নববর্ষ।

লেখক – জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারপ্রাপ্ত নির্মাতা

সারাবাংলা/এএসজি/আরএফ

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন