বিজ্ঞাপন

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের অধিকাংশ প্রকল্পের কাজে ধীরগতি

January 3, 2021 | 7:48 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজে ধীরগতি ও আর্থিক সুশাসন না থাকায় সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ব্যর্থ হচ্ছে মনে করছে অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটির বৈঠকে প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজে ‘শম্বুক গতিতে’ অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। একইসঙ্গে প্রকল্পগুলো যথাসময়ে সমাপ্ত করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৩ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সংসদীয় কমিটির সভাপতি উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদ। বৈঠকে কমিটির সদস্য প্রধান হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, এ বি তাজুল ইসলাম, বজলুল হক হারুন, আহসান আদেলুর রহমান, ওয়াসিকা আয়শা খান ও খাদিজাতুল আনোয়ার এবং সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আব্দুস শহীদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের ব্যয় সঠিক না হলে সরকারের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয় না। কোনো প্রকল্পে শম্বুক গতি হলে এবং আর্থিক সুশাসন না থাকলে লক্ষ্য অর্জন পূরণ হয় না। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সরাসরি জনগণের সঙ্গে সম্পর্কিত। এ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের দুরাবস্থার কারণে আস্থা কমেছে। এরকম গাফিলতি হলে কিভাবে হবে?’

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘২০২৩ সালে শেষ হওয়ার কথা যে প্রকল্প সেটার কাজ এখন পর্যন্ত মাত্র হয়েছে মাত্র ৬ শতাংশ। গাড়ি কেনা ছাড়া আর কোনো কাজই করেনি।’

বিজ্ঞাপন

বৈঠকে উত্থাপিত কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, বৈঠকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৩৮টি প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়। ওই ৩৮টি প্রকল্পের মধ্যে ২৫ শতাংশের নিচে কাজের অগ্রগতি হয়েছে ১৩টি প্রকল্পের। আর ৫০ শতাংশের নিচে ৮টি ও ৫১-১০০ শতাংশের নিচে ১৬টি প্রকল্পের কাজ। মাত্র একটি প্রকল্প শতভাগ কাজ করেছে।

এছাড়া ছাগল ও ভেড়ার ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ পেস্ট ডেস পেটিটস রুমিন্যান্টস (পিপিআর) রোগ নির্মূল ও ক্ষুরারোগ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প শুরু হয় ২০১৯ সালের পয়লা জানুয়ারি। ২০২২ সালে এই প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা। এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ২ শতাংশ। ৩৪৫ কোটি ২ লাখ ৯৯ টাকার এই প্রাক্কলিত এই প্রকল্পে ৬ কোটি ৬১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আর সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিম ফিশারিজ প্রকল্প শুরু হয়েছে ২০১৮ সালের জুন মাসে। ২০২৩ সালের জুনে এই প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা কিন্তু এ পর্যন্ত কাজ হয়েছে ১০ শতাংশ। একহাজার ৮৬৮ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ টাকার প্রাক্কলিত ব্যয়ের এই প্রকল্পে ৩৮ কোটি ৬৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

আরও দেখা গেছে, ৪২৮ কোটি ৩৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি) ২০১৯ সালের পয়লা জানুয়ারি শুরু হয়। এই প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর। কিন্তু গত নভেম্বর এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৬ শতাংশ। আর ব্যয় ১৯৩ কোটি ৭৩ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। যা মোট প্রাক্কলিত ব্যায়ের সাড়ে ৪ শতাংশ। প্রকল্পের জন্য একটি ফোর হুইলার, ৫টি ডাবল কেবিন পিক-আপ, একটি মাইক্রোবাস এবং ৪১৮টি মোটরসাইকেল কেনা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সংসদীয় কমিটির সভাপতি বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পের জন্য মোটরসাইকেল কেনার কথা জানানো হয়েছে। অথচ আমার উপজেলায় আমি এই প্রকল্পের কোনো মোটরসাইকেল দেখিনি। এগুলো কোথায় তাহলে? প্রকল্প পরিচালক যুগ্মসচিবেরা সরকারি গাড়ি পান। তাহলে আবার প্রকল্পের গাড়ি কেন? আমরা আগামী এক মাসের মধ্যে এই প্রকল্পের সার্বিক কাজ নিয়ে কমিটিতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রকল্পের অধীনে করোনাভাইরাস মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের প্রণোদনা দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। কমিটি জানতে চাইলে, তারা অর্থ ছাড় হয়নি বলে জানিয়েছে। কমিটির পক্ষ থেকে এ সব বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে।’

কমিটি সূত্র জানায়, প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পে গাড়ি কেনা বাদে প্রকল্পটির বাস্তব অগ্রগতি না থাকায় এবং প্রকল্পের গাড়ি ও মোটরসাইকেল প্রকল্পের কাজের বাইরে ব্যবহার করায় কমিটির পক্ষ থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। এসময় মৎস্য অধিদফতর থাকার পরেও মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সংসদীয় কমিটি। অধিদফতর থাকার পরেও মন্ত্রণালয় ই-সেবা কার্যক্রম নিয়ে কেন প্রকল্প গ্রহণ করেছে সে বিষয়ে আগামী বৈঠকে বিস্তারিত জানানোর জন্য বলা হয়েছে।

এছাড়া ইলিশ মাছ আহরণ নিষিদ্ধ থাকার সময়ে জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান ও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ব্যবহার করে সমুদ্র সম্পদ আহরণের সম্ভাব্য ক্ষেত্র খুঁজে বের করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এএইচএইচ/এমও

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন