বিজ্ঞাপন

সরকারে আওয়ামী লীগের একযুগ; অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় দেশ

January 6, 2021 | 2:47 pm

সফিউল আযম

দিন বদলের অঙ্গিকার নিয়ে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আজ ৬ জানুয়ারি পূরণ হচ্ছে দলটির ক্ষমতায় থাকার এক যুগ। টানা ১২ বছর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন শেষে যুগ পূর্তিতে হিসেব মেলানোর সময় হয়েছে। আওয়ামী লীগ কতটুকু সফলতার স্বাক্ষর রাখতে পেরেছে। সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম  বিশ্লেষণে দেখা যায়, সফলতার পাল্লাই ভারী। একযুগ ক্ষমতায় থাকার ফলে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন যেমন সহজ হয়েছে, তেমনি এগুলো বাস্তবায়নের পথও ছিল মসৃণ।

বিজ্ঞাপন

২০১৫ সালে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ, ২০১৮ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের স্বীকৃতি মিলেছে। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এমনকি ২০১৫ সালে নিজের পিতার জন্মভূমি কেনিয়া সফরকালে বাংলাদেশকে অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছিলেন। জাতিসংঘের বর্তমান মহাসচিব এন্টোনিও গুতেরেসও একই ধরনের মন্তব্য করেন।

২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে দেশের মানুষের মাথাপিছু গড় আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৪ ডলার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ও মাথাপিছু আয়ের সাময়িক হিসাবে এই চিত্র উঠে এসেছে। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশি মুদ্রায় মানুষের মাথাপিছু আয় বছরে দাঁড়াচ্ছে গড়ে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ, মাসে গড় আয় প্রায় ১৪ হাজার ৬০০ টাকার মতো। এটা সহজেই অনুমিত যে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে দুর্বার গতিতে। ১৯৯১ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে দুই কোটিরও বেশি মানুষ দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়েছে। স্বাধীনতার ৪৯ বছরে দেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে ৬০ শতাংশেরও বেশি। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরেও জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৮ দশমিক ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে খরস্রোতা উত্তাল পদ্মায় আজ বাংলাদেশের গর্ব। প্রমত্ত পদ্মায় ৬ হাজার ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু গড়েছে বাংলাদেশের নতুন এক দিগন্ত। বিশ্বের অন্যতম খরস্রোতা পদ্মার সঙ্গে প্রকৃতির বিরূপ আচরণ এবং নানামুখী সমালোচনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রমাণ করেছ—বাংলাদেশ উঁচু করে কথা বলতে শিখেছে—এই দেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দেশ। এই দেশ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলীয়ান। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ কাজ ছিল পদ্মাসেতু। ৬.১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮.১০ মিটার প্রস্থ সেতু এখন বাংলাদেশের বড় সেতু। এই সেতু প্রমাণ করেছে বাঙালি জাতি আর পিছিয়ে নেই। নিজস্ব অর্থায়নে বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষমতা রাখে।

বিজ্ঞাপন

করোনার সার্বিক অভিঘাত মোকাবিলার সক্ষমতা বিবেচনায় বিশ্বে বসবাস উপযোগী নিরাপদ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ২০তম। দক্ষিণ এশিয়ার আর কোনো দেশ এই তালিকায় বাংলাদেশের ওপরে নেই। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ বিশ্বে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণসহ অর্থনীতিতে করোনার অভিঘাত মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা রাখা দেশগুলোর যে র‌্যাংকিং করেছে, সেখানে এই তথ্য উঠে এসেছে । বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকে বিশ্বের ৫৩টি দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক মানদণ্ডে মহামারি মোকাবিলার সক্ষমতা নিয়ে ১০টি সূচকের ওপর ভিত্তি করে এই র‌্যাংকিং করা হয়। এমনকি জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলোও রয়েছে এই তালিকায় বাংলাদেশের পেছনে।

তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্র সীমার বিরোধ নিষ্পত্তি একটি যুগান্তকারী অর্জন। এই অর্জনের ফলে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের টেরিটোরিয়াল সমুদ্র, ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত সমুদ্রের তলদেশে অবস্থিত সব ধরণের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা ১৬ কোটি মানুষের দেশ। সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছি। সেখানে আরও ৭ লাখ মানুষকেও খেতে দিতে পারবো—জাতির জনকের কন্যার এই মন্তব্যই বিরল মানবিকতার প্রমাণ।ভারতের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময় আওয়ামী লীগ সরকারের একটি যুগান্তকারী সফলতা। ২০১৫ সালের ২১ জুলাই মধ্যরাত থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের ছিটমহল বিনিময় চুক্তি কার্যকর হয়। ফলে দীর্ঘদিন ধরে সমস্যায় থাকা বাংলাদেশ ও ভারতের ১৬২টি ছিটমহলের প্রায় ৫৫ হাজার মানুষের বন্দিত্বের অবসান হয়।

বিজ্ঞাপন

নারীর ক্ষমতায়নে বর্তমান সরকারের রয়েছে বেশ কিছু সফলতা। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইনটি ছিল সময়োপযোগী। নারীর ক্ষমতায়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ‘ইউএনউইমেন প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ এবং ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী ২০১৪ সালে ইউনেস্কোর ‘পিস ট্রি’ পুরস্কার এবং ‘গ্লোবাল উইমেন লিডারশিপ ২০১৮’ পুরস্কারে ভূষিত হন। জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসন ৫০-এ উন্নীতকরণ, উপজেলা পরিষদে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদ সৃষ্টি, ইউনিয়নে সংরক্ষিত নারী আসন ব্যবস্থাকরণ ইত্যাদি ছিল যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০১৫ অনুযায়ী রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশ্বে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। নারী উদ্যোক্তা ও ক্ষমতায়নে উৎসাহিতকরণে জয়িতা পুরস্কার তৃণমূলে একধরণের প্রতিযোগিতা তৈরি করেছে। তথ্য আপা প্রকল্পটিও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে ন্যাশনাল হেল্পলাইন ১০৯, জয় মোবাইল অ্যাপস যুগান্তকারী ভূমিকা রাখছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ ছিল দৃশ্যমান। ১১ মে ২০১৮ বাংলাদেশের জন্য ছিল এক ঐতিহাসিক দিন। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস স্টেশন থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১ উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল সেদিন। তথ্য প্রযুক্তি ও সফটওয়্যার শিল্পের বিকাশে বিভিন্ন কার্যক্রম এই খাতকে অনেক এগিয়ে নিয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় হাইটেক পার্ক, টেকনোলজি পার্ক, ট্রেনিং ইনস্টিটিউট যুবকদের কর্মসংস্থানে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। এক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পটি ডিজিটাল বাংলাদেশের বিনির্মাণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশের সরকারি দফতরের ২৫ হাজারেরও অধিক ওয়েবসাইটকে একই ছাদের নিচে আনার কার্যক্রমটি সত্যিই প্রশংসনীয়। এই জাতীয় তথ্য বাতায়ন ২০১৫ সালে ‘দ্য ওয়ার সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি’ পুরস্কারে ভূষিত হয়। তথ্য প্রযুক্তির সেবা তৃণমূলে পৌঁছে দেওয়া ছিল অভূতপূর্ব। সারা দেশের প্রায় ৪৫৪৭টি ইউনিয়ন, ৩২৫টি পৌরসভা, এমনকি প্রতিটি সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডভিত্তিক ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন ডিজিটাল বাংলাদেশকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়।

স্বাস্থ্যসেবাকে মানুষের হাতের নাগালে পৌঁছানোর লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প কমিউনিটি ক্লিনিক যুগান্তকারী সফলতা এনে দিয়েছে। সারাদেশে বর্তমানে সাড়ে ১৩ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে। স্বাস্থ্যখাতে তথ্য প্রযুক্তির সফল ব্যবহারে ‘সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড ২০১১’ অর্জন। টিকাদান কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে ২০০৯ সালে এবং ২০১২ সালে ‘গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন এন্ড ইম্যুনাইজেশন শ্রেষ্ঠ এওয়ার্ড অর্জন। অটিজম ও স্নায়ু-বিকাশজনিত সমস্যার সমাধানে ইনস্টিটিউট ফর পেডিয়াট্রিক নিউরো ডিসঅর্ডার এন্ড অটিজম স্থাপন। মূলত ২০১৬ সালে ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি কাম প্লান অন অটিজম এন্ড নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডারস বাস্তবায়নে নানামুখী পদক্ষেপ ছিল প্রশংসনীয়।

জলবায়ু প্রভাবজনিত ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্ব স্বীকৃত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক পুরস্কার চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ পুরস্কারে ভূষিত হন। বাংলাদেশ দ্য গ্লোবাল গ্রিন অ্যাওয়ার্ড ২০১৪ অর্জন করে। আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ- কমিটিকে ‘ওয়ার্ল্ড এনভায়রনমেন্ট ডে হিরো’ পুরস্কার দেয় জাতিসংঘ। শুধু ২০২০ সালেই বন ও পরিবেশ উপ কমিটি সারাদেশে প্রায় ১ কোটিরও বেশি গাছের চারা রোপণ করে। বৃক্ষরোপণে গুরুত্বারোপের ফলে দেশের সামগ্রিক বনাঞ্চলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্লাইমেট চ্যাঞ্জ স্ট্র্যাটেজি এন্ড অ্যাকশন প্ল্যান অব ২০০৯ কর্মপরিকল্পনা বাংলাদেশই প্রথম করেছে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে প্রথম। গাজীপুরে ৪ হাজার একর জমি নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক তৈরি, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে জাতীয় পুরস্কারের প্রবর্তন, বায়ুদূষণ রোধে টেকসই পরিবেশ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বেশ কিছু কর্মসূচি পরিবেশ উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে।

বিজ্ঞাপন

পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষণীয়। সড়ক ও মহাসড়কগুলোকে চার লেন, আট লেনে উন্নীতকরণ, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল স্থাপনের কাজ এগিয়ে নেওয়া উল্লেখযোগ্য। দেশের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। রেলপথ বিভাগকে পুনর্গঠন করে সেবা প্রদানের নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে, যা যোগাযোগ ব্যবস্থাকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে। ২০১১ সালে রেলপথ মন্ত্রণালয় গঠনের মাধ্যমে আধুনিক যুগোপযোগী জনপরিবহন মাধ্যম হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। রেলওয়ের উন্নয়নে ৩০ বছর মেয়াদী (২০১৬-২০৪৫) মাস্টার প্ল্যান করা হয়। যা রেলের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে নিঃসন্দেহে। নৌপথের নাব্যতা বৃদ্ধি, নৌবন্দরের উন্নয়ন ও নৌপথকে নিরাপদ রাখতে সমন্বিত ড্রেজিং কর্মসূচি নৌ-যোগাযোগকে আরও গতিশীল করবে। বৈদেশিক বাণিজ্যকে আরও বেগবান করতে ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর পটুয়াখালীতে পায়রা সমুদ্রবন্দর তৈরি করা হয়েছে।

অর্থনীতির চালিকাশক্তি কৃষিকে বাণিজ্যিক শক্তিতে রূপান্তরিত করা হয়েছে। জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১৪.১১ শতাংশ। কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও বায়োটেকনোলজির যথাযথ ব্যবহারের ফলে কর্নেল ইউনিভার্সিটি সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি অ্যাওয়ার্ড ২০১৪ প্রদান করে। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট আইডিবি প্রাইজ ২০১৬ অর্জন করে। কৃষিক্ষেত্রে ডিজিটাইলেজাইশন, ই-কৃষি প্রবর্তন, কৃষি কল সেন্টার, কৃষকের জানালা, কৃষি তথ্য বাতায়ন প্রভৃতি অভূতপূর্ব ভূমিকা রেখেছে কৃষির সম্প্রসারণে। কৃষি নীতি -২০১৮ একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘আমার জীবনের একমাত্র কামনা, বাংলাদেশের মানুষ যেন তাদের খাদ্য পায়, আশ্রয় পায় এবং উন্নত জীবনের অধিকারী হয়’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক উদ্যোগে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় সমাজসেবা অধিদফতরের মাধ্যমে বয়স্কভাতা বিধবা, স্বামী নিগৃহীত মহিলাভাতা, মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী, এতিম শিশু সুরক্ষাসহ নানা ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু করা হয়। শিশু আইন ২০১৩, জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল ২০১৫, পিতামাতার ভরণপোষণ আইন ২০১৩, নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন ২০১৩, প্রবীণ ব্যক্তিদের সিনিয়র সিটিজেন ঘোষণা, হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে ঘোষণা সামাজিক সুরক্ষায় যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ছিল।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার কাজের মধ্যে মসজিদ ও মন্দিরভিত্তিক শিক্ষা ও গণশিক্ষা কার্যক্রমটি সত্যিই ব্যতিক্রম। তৃণমূলে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়া এবং শিশুদের মধ্যে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার বীজ বপনের জন্য এই কার্যক্রমটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। প্রাক প্রাথমিক শিক্ষাকে বেগবান করতে, শিশুদের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব তৈরিতে এই গণশিক্ষা কার্যক্রম ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

শিক্ষাক্ষেত্রে যুগান্তকারী কিছু সফলতা দৃশ্যমান। সকলের জন্য শিক্ষা নিশ্চিতকরণে অভিন্ন পাঠ্যসূচি, পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য নানামুখী সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি উল্লেখযোগ্য। শিশুদের মধ্যে গণতন্ত্র ও নেতৃত্বের বিকাশ ঘটানোর তাগিদে ২০১০ সাল থেকে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। প্রযুক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের পথে সরকার। মাধ্যমিক শ্রেণিতে নৈতিক শিক্ষা বিষয়টি চালু করা হয়েছে। মাল্টিমিডিয়া ক্লাস এবং সংসদ টিভির মাধ্যমে পাঠদান নতুন কৌশল। মাদ্রাসায় অনার্স কোর্স চালু, কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি প্রদান এবং দাওরা হাদিসকে মাস্টার্স সমমান প্রদান করা হয়েছে।

সরকারি সেবা তৃণমূলের জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদকে ব্যাপক উন্নয়নের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। নতুন ৫টি সিটি করপোরেশন—কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, রংপুর ও গাজীপুর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ঢাকা সিটিকে দুইভাগে ভাগ করে ২টি সিটি করপোরেশন করা হয়েছে, যা শহরের উন্নয়নকে বেগবান করেছে।

দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে। যুগোপযোগী ও সমন্বিত দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ও প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমের ফলে সকল ধরনের দুর্যোগ সফলতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছে সরকার। আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে পৌঁছানোর ইন্টারেকটিভ ভয়েস রেসপন্স সিস্টেম কার্যক্রম ভূমিকা রেখেছে। দুর্যোগের খবর জানতে বিনা খরচে ১০৯০-তে কল করার বিষয়টিও ছিল অভিনব।

জঙ্গি দমনে বাংলাদেশের অগ্রগতি ঈর্ষণীয়। বিভিন্ন দেশের সরকার বাংলাদেশকে জঙ্গি দমনের রোল মডেল হিসেবে আখ্যায়িত করছে। সরকারের অগ্রাধিকার হিসেবে গোয়েন্দা কার্যক্রম ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযান এ সফলতার অন্যতম কারণ। জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করা, বড় অঙ্কের আর্থিক পুরস্কার ও রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রদান এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রযুক্তিনির্ভর করে তাদের কর্মদক্ষতা বাড়ানোর পদক্ষেপগুলো জঙ্গি দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

২০২১ সালের মধ্যে দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত মধ্যম আয়ের দেশ গড়ার লক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চিন্তার ফসল একটি বাড়ি একটি খামার পল্লী উন্নয়নের এক কার্যকর মডেল। ইতিমধ্যে প্রায় ৩ কোটি মানুষ এই প্রকল্পের আওতায় এসেছে। পল্লী সঞ্চয়কে উৎসাহিত করতে রয়েছে বহুমুখী প্রকল্প—যা পল্লী জনপদের মানুষদের দারিদ্র্যতার বেড়াজাল থেকে উত্তরণের পথ সুগম করে দিয়েছে।

যুব উন্নয়নে বেশ কিছু কর্মসূচি কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। ঘরে ঘরে কর্মসংস্থান সৃষ্টির যে ঘোষণা ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া হয়েছে, তার বাস্তবায়নে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি বেশ আলোচিত ছিল। বর্তমানে এই সার্ভিস সারাদেশে রয়েছে। যা যুবকদের দক্ষ ও আত্মকর্মসংস্থানের জন্য তৈরি করার অনন্য এক সুযোগ করে দিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক তহবিল ইউনিসেফ তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নে বাংলাদেশের অসামান্য সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে ‘চ্যাম্পিয়ন অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ’ সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।

‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ এই অঙ্গীকারকে বাস্তবায়ন করে শতভাগ বিদ্যুতায়নের দ্বারপ্রান্তে দেশ। বিদ্যুতে সবার মধ্যে এসেছে জাতীয় গ্রিডের আওতায় থাকা সব গ্রাম ও পরিবার। গ্রিড এলাকার বাইরে থাকা ৩ লাখ ৭ হাজার ২৪৬ পরিবারে মার্চ ২০২১ সালে মধ্যে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে।

স্বাধীনতার ৫০ বছর এবং মুজিববর্ষ পূর্তিতে দেশের সব নাগরিকের একটিই চাওয়া সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘এ স্বাধীনতা আমার ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি আমার বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না খায়। এই স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়। এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি এদেশের মানুষ যারা আমার যুবক শ্রেণী আছে তারা চাকরি না পায় বা কাজ না পায়’। তারই উত্তরসূরি শেখ হাসিনা ১২ বছরের টানা এই প্রধানমন্ত্রীত্বে জাতির জনকের স্বপ্নের বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের লড়াই করে যাচ্ছেন, উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন দুর্বার গতিতে।

লেখক: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও সামাজিক বিজ্ঞান গবেষক

সারাবাংলা/এসবিডিই/আইই

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন