বিজ্ঞাপন

মিল গেটে চালের দাম ‘কিছুটা’ কমলেও খুচরায় প্রভাব নেই

January 6, 2021 | 10:36 pm

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সরকার চাল আমদানির ঘোষণা দিলেও বাজারে এখনো এর প্রভাব পড়েনি। নতুন করে দাম না বাড়লেও খুচরা বাজারে চালের দাম আগের তুলনায় কমেনি বললেই চলে। তবে মিলারদের দাবি, মিল গেটে চালের দাম বস্তায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কমেছে। যদিও ব্যবসায়ীরা তাদের সেই দাবির সঙ্গে একমত নন। তারা আরও বলছেন, বাজারে আমদানি করা চাল আসতে আরও সপ্তাহখানেক সময় লাগতে পারে। আমদানি করা চাল বাজারে এলে তখন হয়তো খুচরা বাজারে চালের দাম কিছুটা কমতে পারে।

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিভিন্ন মোকামে এরই মধ্যে চালের দাম কমে গেছে। দিনাজপুর, নওগাঁ ও কুষ্টিয়ার সব মোকামেই দাম কমেছে। অনেকেই আবার ক্রেতাও পাচ্ছে না। তবে ঢাকায় চালের দাম না কমার কারণ মজুত। যারা আগে চাল কিনে রেখেছিল, তারা লস করতে চায় না। তাদের কাছে আগে কেনা চাল থাকায় দাম কমছে না। তাই আমরা বাজার মনিটরিংয়ের উদ্যোগ নিয়েছি।’

এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘সরকারিভাবে কেনা চাল বাইরে থেকে এরই মধ্যে আসতে শুরু করেছে। সেই চাল আমরা ওএমএসের (ওপেন মার্কেট সেল) মাধ্যমে দিচ্ছি। কিছু চাল গুদামেও সংরক্ষণ করছি। আর বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির শর্তই দেওয়া হয়েছে— এলসি খোলার ১৫ দিনের মধ্যে ৫০ শতাংশ চাল আমদানি করতে হবে। আর পুরো চাল একমাসের মধ্যে এনে বাজারে সরবরাহ করতে হবে। সেই শর্তেই তাদের চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ফলে দিন পনেরোর মধ্যে বাজারে আমদানি করা চালের সরবরাহ বাড়বে।’

সারাবাংলার আরেক প্রশ্নের উত্তরে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চাল আমদানির নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়নি। যতক্ষণ পর্যন্ত বাজার নিয়ন্ত্রণে না আসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত চাল আমদানি করা হবে। তবে এ ক্ষেত্রে কৃষকের স্বার্থ রক্ষা করেই সব করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখন মিলারদের কাছ থেকে চাল কিনছি না, যেন বাজারে সরবরাহ ঠিক থাকে। চালের দাম স্থিতিশীল করতে সারাদেশে ওএমএস চালু করেছি। চাল আমদানির শুল্ক কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। বাজার স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে আমরা সব করছি। কোনো কারণ যদি বাজারে ধানের দাম খুব বেশি কমে যায়, তবে কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় আমরা আবার ধান কিনতে শুরু করব।’

বিজ্ঞাপন

এদিকে, ঢাকার বাজারে এখনো মিনিকেট চাল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে আটাশ ৪৮ থেকে ৫২ টাকা ও নাজিরশাইল ৪৮ থেকে ৬৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। প্রতি বস্তা মিনিকেটের বাজারদর এখন তিন হাজার থেকে তিন হাজার ১৫০ টাকা, আটাশ ২৪শ থেকে আড়াই হাজার টাকা ও নাজিরশাইল ২৪শ থেকে ৩ হাজার ২৫০ টাকা।

জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের মেসার্স হাজী ইসমাইল অ্যান্ড সন্সের মালিক জসিম উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘চাল আমদানির ঘোষণা আসার পর থেকেই চালের বাজার স্থির রয়েছে। নতুন করে দাম না বাড়লেও চালের দাম কমেনি বললেই চলে। আমদানি করা চালও এখনো বাজারে আসেনি। হয়তো চাল আসার পথে রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘মিলারদের ভাষ্য ধানের দাম বেশি। ধান থেকে চাল করতে তাদের বেশি খরচ পড়ছে। তাই চালের দাম কমছে না। এখনো তারা চালের দাম কমানোর কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। যেখানে চালের দাম বস্তায় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছিল, সেখানে তারা প্রতি বস্তার দাম হয়তো ৩০ টাকা পর্যন্ত কমিয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

চালের দাম না কমার কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্ন অ্যাসোসিয়শনের সাধারণ সম্পাদক কে এম লায়েক সারাবাংলাকে বলেন, ‘ধানের দাম না কমলে বাজারে চালের দাম কমবে না। তারপরও বাজারে চালের দাম কিছুটা কমেছে। একেবারেই কমেনি, তা ঠিক নয়। কেজিতে ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা পর্যন্ত চালের দাম কমেছে। তবে আগামী মে মাসের আগে চিকন চালের দাম কমবে না। এখন যে অবস্থায় আছে, চিকন চালের দাম সেই অবস্থাতেই থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমরা ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ১৩০ টাকা মণ দরে স্বর্ণা ধান কিনছি। আর জিরা ধান কিনছি ১ হাজার ৪০০ থেকে দেড় হাজার টাকা মণ দরে। সেখানে আমরা মিনিকেট বিক্রি করছি প্রতি কেজি ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা দরে।’

জানতে চাইলে নওগাঁ ধান-চাল আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরোধ চন্দ্র সাহা সারাবাংলাকে বলেন, ‘চালের দাম কিছুটা কমেছে। বস্তায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কমেছে। অর্থাৎ কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা করে দাম কমেছে। তবে সরকার চাল আমদানির ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে আমাদের ক্রেতা নেই। কেউ চাল কিনছে না। দেশে আমদানি করা চাল না আসা পর্যন্ত বাজার এমনই থাকবে। সবাই এখন বাজার পর্যবেক্ষণ করছে।’

তিনি বলেন, ‘এবার আমনের ফলন কম হয়েছে। অতিবৃষ্টির কারণে উৎপাদন ভালো হয়নি। ফলে বাজারে ধানের ঘাটতি রয়েছে। আর ধানের দাম বেশি থাকায় এবার চালের দাম বেশি। যদিও সরকার তা স্বীকার করছে না।’

বিজ্ঞাপন

এক প্রশ্নের উত্তরে নিরোধ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘চাল আসতে আরও ৭ থেকে ৮ দিন সময় লাগতে পারে। আর আমদানি করা চাল এলেই যে খুব একটা দাম কমে যাবে, তা ঠিক নয়। কারণ বন্দরে আমাদেরকে অতিরিক্ত শুল্ক দিতে হয়। এছাড়া পাথর আমদানির কারণে পথে জ্যাম থাকতে পারে। তাতে আমদানি করতে সময় ৭ থেকে ৮ দিন বেশি লাগতে পারে। এতে খরচ বেড়ে যাবে।’

জানতে চাইলে কৃষি সচিব মেজবাহুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘চালের বাজার স্থিতিশীল করতে সব জেলায় ওএমএস চালু হয়েছে। এরই মধ্যেই ধানের দাম কমতে শুরু করেছে বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করা যায় চালের দাম শিগগিরই কমে আসবে।’

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন খাদ্যশস্যের সরকারি মজুদ ৭ লাখ ২৬ হাজার টন। এর মধ্যে সাড়ে ৫ লাখ টন চাল ও গম ১ লাখ ৯৬ হাজার টন। এদিকে, শুল্ক কমিয়ে বেসরকারি খাতে চাল আমদানির সুযোগ দিয়েছে সরকার। সম্প্রতি ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৩ লাখ ৩০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আর খাদ্য মন্ত্রণালয় ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত চাল আমদানির আবেদন নেবে। আমদানি শুল্কও সাড়ে ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। তবে এত সব উদ্যোগ নিলেও এর প্রভাব এখনো বাজারে দৃশ্যমান নয়।

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর

Tags: , , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন