বিজ্ঞাপন

প্রণোদনা পরিশোধে একবছর বাড়তি সময় চেয়ে রুবানার খোলা চিঠি

January 7, 2021 | 11:40 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: করোনাভাইরাস সংক্রমণে পোশাক খাতের টালামাটাল অবস্থা তুলে ধরে খোলা চিঠি লিখেছেন এই খাতের কারখানাগুলোর মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি রুবানা হক। চিঠিতে তিনি খাতটির রফতানি আয়ের নেতিবাচক প্রবণতা তুলে ধরেন। একইসঙ্গে প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণের সুদ অন্ততপক্ষে ৬ মাসের জন্য স্থগিত অথবা প্রণোদনা পরিশোধের মেয়াদ কমপক্ষে আরও একবছর বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে এই খোলা চিঠিটি পাঠান বিজিএমইএ সভাপতি। চিঠিতে করোনা পরিস্থিতিতে পোশাক খাতের প্রণোদনা প্যাকেজ পুনর্মূল্যায়নের অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

খোলা চিঠিতে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক লিখেছেন, পোশাক শিল্প আজ সবচেয়ে মর্মান্তিক পরিস্থিতির দিকে মোড় নিয়েছে। যথাযথ পুনর্গঠনের সুযোগ এমনকি প্রস্থান নীতি না থাকায় পশ্চিমা ক্রেতাদের দেউলিয়াত্ব বরণ, নির্দয়হীনভাবে ক্রয়াদেশ বাতিল এবং ফোর্স মেজোয়ার ক্লসেসের কারণে শিল্প চরমভাবে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। কারখানাগুলো টালমাটাল পরিস্থিতির সঙ্গে প্রাণান্তকর সংগ্রাম করে কোনোভাবে টিকে রয়েছে। অথচ অনেকেরেই ধারণা, এই শিল্প খাত সরকারের কাছ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা পেয়ে ভালো অবস্থায় আছে। আজ এই পরিস্থিতির প্রকৃত পুনর্মূল্যায়ন হওয়া অত্যন্ত জরুরি।

চিঠিতে তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ২০২১ সালের জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ পরিশোধের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত পরশু এ মর্মে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পত্র জারি করেছে। লক্ষ্যণীয় বিষয়— এই নির্দেশনা এমন সময়ে দেওয়া হয়েছে, যখন কি না করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে শিল্প গভীর অনিশ্চয়তায় হাবুডুবু খাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বর্তমান প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণের সুদ অন্ততপক্ষে ছয় মাসের জন্য স্থগিত অথবা প্রণোদনা পরিশোধের মেয়াদ কমপক্ষে আরও অতিরিক্ত ১ বছর (বর্তমানে ২৪ মাস) সম্প্রসারিত করা না হলে শিল্পকে টিকিয়ে রাখা দুরূহ হবে।

বিজ্ঞাপন

তিনি লিখেছেন, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সদ্য ২০২০-এর ডিসেম্বর মাসের যে রফতানি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেখানেও আমাদের রফতানির উদ্বেগজনক চিত্র বহাল আছে। ডিসেম্বর মাসে পোশাক রফতানিতে ধারাবাহিক পতন অব্যাহত থেকে পতন হয়েছিল ৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ, যার কারণে ২০২০ সালের বার্ষিক রফতানিতে ১৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ দৃষ্টান্তহীন পতন ঘটেছে।

রুবানা হক লিখেছেন, ২০২০-এর জুনের পর থেকে ওভেন পোশাক রফতানিতে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি হয়েছে ডিসেম্বর মাসে, এ মাসে রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ১৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। উল্লেখিত মাসে নিটওয়্যার রফতানি ঋণাত্মক শূন্য দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল অবস্থানে রয়েছে। এর পেছনে রয়েছে স্থানীয় পর্যায়ে সৃষ্ট নিটওয়্যারের জন্য চাহিদা। গত ২ বছরের রফতানির প্রবণতার দিকে তাকালে আমরা দেখি— ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ২৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ এবং ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ১৪ দশমিক ৩২ শতাংশ। ডিসেম্বর মাসের রফতানিতে (২ বছরের) প্রবৃদ্ধির পরিবর্তন হয়েছে ঋণাত্মক ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এর অর্থ হলো— আমরা ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২০ সালে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ কম রফতানি করেছি।

রুবানা খোলা চিঠিতে আরও লিখেছেন, সারাবিশ্ব দেখেছে— ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লকডাউনের প্রভাব কতটা ছিল এবং সেটি খুচরা বিক্রয় ও চাহিদার ওপর কেমন প্রভাব রেখেছে। বিশ্ব দেখেছে স্মরণকালের সবচেয়ে মন্দ ক্রিসমাস সেল। এসবের প্রভাবে ২০২০-এর সেপ্টেম্বরের পর থেকে পণ্যের মূল্য কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে অনিশ্চয়তা আর শঙ্কায় আমরা বিপর্যস্ত। যেহেতু ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতা এখনো নিশ্চিত হয়নি এবং এর প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরাজ করছে, তাই আমাদের আশঙ্কা— রফতানির এই নিম্নমুখী প্রবণতা সম্ভবত চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বজায় থাকবে। এ পরিস্থিতিতে আমি আপনাদের সবার সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করি, যেন আমরা নীতি নির্ধারকদেরকে শিল্পের বর্তমান প্রকৃত পরিস্থিতি বোঝাতে সক্ষম হই।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন