বিজ্ঞাপন

বেরোবি ভিসি নিয়ে ‘নেতিবাচক মন্তব্য’: থানায় অভিযোগ

February 28, 2021 | 6:41 pm

ডিস্ট্রিক্ট করসেপন্ডেন্ট

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) ক্যাম্পাসে আয়োজিত সরস্বতী পূজায় বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর উপস্থিতি নিয়ে ফেসবুকে নেতিবাচক মন্তব্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে রংপুর মেট্রোপলিটন তাজহাট থানায় লিখিত অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হেনা মুস্তফা কামাল।

বিজ্ঞাপন

লিখিত অভিযোগে কোনো অভিযুক্তের নাম উল্লেখ না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট এতে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। বিভিন্ন ফোরামে চলছে নানা সমালোচনা।

বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইজার আলী বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। লিখিত অভিযোগে কারোর নাম নেই। তবে তদন্ত করে মন্তব্যকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রেজিস্ট্রার আবু হেনা মুস্তফার সই করা লিখিত অভিযোগে জানা যায়, প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সরস্বতী পূজার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এবছরও উপাচার্য উপস্থিত থেকে পূজার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। পূজা প্রাঙ্গণে উপাচার্যের উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে কতিপয় ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নেতিবাচক বিবৃতি এবং মন্তব্য করায় বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার বিব্রত পরিস্থিতিতে পড়েছে। তাই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞাপন

লিখিত অভিযোগে রেজিস্ট্রার কোনো মন্তব্যকারীর নাম উল্লেখ না করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী বায়েজিত আহমেদ এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তানভির আহমেদের দেওয়া স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট সংযুক্ত করেন।

জানা যায়, দীর্ঘ অনুপস্থিতির পর গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে যান উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। সেদিন সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হয়ে সরস্বতী পূজার উদ্বোধন করেন তিনি। উপাচার্য হঠাৎ ক্যাম্পাসে আসায় অনেকেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস এবং মন্তব্য করেন।

মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী বায়েজিত আহমেদ তার স্ট্যাটাসে কোনো ব্যক্তির নাম উল্লেখ না করে লেখেন, ‘পূজা উদযাপন কমিটির শিক্ষক ও ছাত্ররা আপনারা একজন দুর্নীতিবাজকে যে পৃষ্ঠপোষক বানালেন, এখন আপনারা কি বেরোবির ক্ষতি করলেন না?’

বিজ্ঞাপন

আরেকটি স্ট্যাটাসে প্রশ্ন রেখে লিখেন, ‘পূজা পার্বণের জন্য হিন্দুধর্মের প্রিয় শিক্ষার্থীদের একটি পবিত্র আয়োজন ছিল ক্যাম্পাসে। একটি পবিত্র জায়গায় কেন একজন অপবিত্র ব্যক্তিকে স্থান দেওয়া হল? একটি পবিত্র জায়গায় একজন দুর্নীতিবাজ অপবিত্র ব্যক্তিকে প্রবেশ করতে দিয়ে পুরো ধর্মীয় পবিত্র বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার শামিল নয় কি?’

তবে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তানভির আহমেদ উপাচার্যকে উদ্দেশ্য করে লিখেন, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি যখন দেশ ও জাতির সামনে প্রমাণিত অপরাধীর কাতারে, ঠিক সেই মুহুর্তে একজন পলায়নকারী ও আত্নগোপনকারী অপরাধীকে বিশ্ববিদ্যালের অতিথি হিসেবে নিমন্ত্রিত করা কতটা যৌক্তিক। পূজা কমিটির সদস্যের কাছে প্রশ্ন এই দুর্নীতিবাজ, আইন অমান্যকারী ও পলায়নকারী ভিসি আপনাদের এমন উচ্চ সম্মানজনক অনুষ্ঠানে কিভাবে অতিথি হয়ে আসেন?’

এমন স্ট্যাটাসের পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মন্তব্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য শনিবার থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগের বিষয়ে বায়েজিত নামের ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যায় এবং অনিয়মের বিরুদ্ধে আমরা সবসময় কথা বলি। গত ১৬ তারিখে পূজা কমিটি নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেই। সেখানে আমি অপবিত্র ব্যক্তি কাকে বলেছি সেটা উল্লেখ করিনি। অপবিত্র ব্যক্তি যে কেউ হতে পারে সেখানে। কিন্ত আজ পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে জানতে পারলাম আমার দেওয়া স্ক্রিনশট সংযুক্ত করে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এই অভিযোগ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।’

বিজ্ঞাপন

তানভির নামের ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘ভিসির বিরুদ্ধে ফেসবুকে কটুক্তির অভিযোগে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নোংরামি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রমাণিত দূর্নীতির বিরুদ্ধে সোস্যাল মিডিয়ায় নিন্দাসূচক বাক্য লিখেছি যার অধিকার রাষ্ট্রের সংবিধান আমাকে দিয়েছে। আমি শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক অধিকার নিয়ে কাজ করি। আমার লক্ষ্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়া। এতে আমি এতটুকু পিছপা হব না। আমি তাদের এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিব।’

এ বিষয়ে পূজা উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রদীপ কুমার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত পূজা অনুষ্ঠানে উপাচার্যের উপস্থিতি নিয়ে কতিপয় ব্যক্তি বাজে মন্তব্য করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দেয়। এসব স্ট্যাটাস আমাদের পূজা উদযাপন কমিটির চোখে পড়লে আমরা মিটিং করে রেজিস্ট্রারকে লিখিত দিয়েছি।তবে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে থানায় অভিযোগের বিষয় সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন তিনি।

সারাবাংলা /এসএসএ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন