বিজ্ঞাপন

নির্দেশনা উপেক্ষিত, বেতন-মর্যাদায় পিছিয়ে ৪ হাজার কর্মকর্তা

April 9, 2021 | 10:11 am

কামরুল ইসলাম ফকির, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (বিপিএসসি) মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া প্রায় চার হাজার কর্মকর্তা বছরের পর বছর ইনক্রিমেন্ট বঞ্চিত হয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি পদ-মর্যাদার দিকে দিয়ে পিছিয়ে পড়ছেন। ১৩০০ নম্বরের বিসিএস পরীক্ষায় পাস করেও বেতন-ভাতা ও পদ মর্যাদার দিক দিয়ে পিএসসির সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্তরা ৩০০ নম্বরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের চেয়ে পিছিয়ে আছেন তারা। কারণ ৩০০ নম্বরের নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা অতিরিক্ত একটি ইনক্রিমেন্ট পাচ্ছেন। ফলে একই গ্রেডে একই বছর চাকরিতে যোগদান করা প্রথম শ্রেণির দুটি ব্যাচের মধ্যে বেতন-ভাতায় বৈষম্য তৈরি হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

এই বৈষম্যের প্রতিকার চেয়ে ২০১৮ সালে রাশেদুল ইসলামসহ কয়েকজন কর্মকর্তা আইনজীবীর মাধ্যমে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। পরে আদালত রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করে কয়েকটি পর্যবেক্ষণ দিয়ে সেটি নিষ্পত্তি করে দেন। একই বছরের অক্টোবর রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ হয়। রায়ে বেতন স্কেলের বৈষম্য দূরীকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার নির্দেশ দেন আদালত। সেইসঙ্গে রায়ের কপি পাওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু রায় প্রকাশের আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

ক্যাডার সার্ভিস চালু হওয়ার পর থেকে সরকারি চাকরিতে শুধুমাত্র প্রথম শ্রেণির ক্যাডারের নির্ধারিত পদে নিয়োগের (প্রার্থী যাচাই-বাছাই ও পরীক্ষার মাধ্যমে) সুপারিশ করতো পিএসসি। ফলে বিসিএসের চূড়ান্ত পরীক্ষায় (ভাইভা) উত্তীর্ণ হওয়ার পরও বিপুল সংখ্যক প্রার্থী ক্যাডার পদে স্বল্পতার কারণে নিয়োগ পেত না। এ কারণে সরকার নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ (বিশেষ) বিধিমালা-২০১০ অনুযায়ী ২৮তম বিসিএস থেকে চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কিন্তু ক্যাডার পদে নিয়োগ পাননি এমন প্রার্থীদের প্রথম শ্রেণির নন-ক্যাডার (৯ম গ্রেডে) পদে নিয়োগ দেওয়া শুরু করে। এর কয়েক বছর পর বিসিএস উত্তীর্ণদের থেকে নন-ক্যাডার ১০ম গ্রেডেও নিয়োগ দেওয়া শুরু হয়।

২৮তম থেকে ৩৮তম বিসিএস পর্যন্ত শুধু ৯ম গ্রেডেই প্রায় ৪ হাজার কর্মকর্তা নিয়োগ পেয়েছেন। নিয়োগপ্রাপ্তরা সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়, অধিদফতর ও বিভাগে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। কিন্তু বেতন-ভাতা ও মর্যাদার দিক দিয়ে পিএসসির মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্তদের এবং বিসিএস উত্তীর্ণ নন-ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে বৈষম্য দেখা দেয়। এতে তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ তৈরি হয়।

বিজ্ঞাপন

এ বৈষম্যের প্রতিকার চেয়ে ২০১৮ সালে রাশেদুল ইসলামসহ কয়েকজন কর্মকর্তার পক্ষে আইনজীবী খন্দকার শাহরিয়ার শাকির হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। পরে এ বিষয়ে শুনানি নিয়ে বিচারপরিত জুবায়ের রহমান চৌধুরীর বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ সরকারের প্রতি রুল জারি করেন। এরপর ২০১৮ সালের ১৬ মে হাইকোর্ট কয়েকটি পর্যবেক্ষণ দিয়ে রুলটি নিষ্পত্তি করে রায় দেন। পরে একই বছরের ১৫ অক্টোবর হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। রায়ে বেতন স্কেলের বৈষম্য দূরীকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নির্দেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে সরকার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। রায়ের নির্দেশনা বাস্তবায়নের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কোনো বক্তব্য চেষ্টা করেও জানা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে রিটের পক্ষের আইনজীবী খন্দকার শাহরিয়ার শাকির সারাবাংলাকে বলেন, ‘৯ম গ্রেডের নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের বেতন-বৈষম্য নিরসনের বিষয়ে জারি করা রুলটি কিছু পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা দিয়ে নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন হাইকার্ট। রায়ে বেতন-বৈষম্য নিরসনে সরকারকে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতেও বলা হয়েছে। আদালত ইতিবাচক (পজেটিভ) পর্যবেক্ষণ দিয়ে রুলটি নিষ্পত্তি করেছেন।’

রায়ে বলা হয়েছে, আইন পরিবর্তনের জন্য আদালত নির্দেশনা দিতে পারে না। এই আদেশ বাস্তবায়নে আইনগত কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আদালত।

বিজ্ঞাপন

আইনজীবী শাহরিয়ার শাকির বলেন, ‘রায় প্রকাশের কয়েক বছর পার হয়ে গেলেও এরকম বৈষম্য নিরসন না করাটা হতাশাজনক। আমি মনে করি, এই বৈষম্যের কারণে সরকারি কর্মকর্তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি পদ-মর্যাদার দিক দিয়েও অনেক ক্ষেত্রে জুনিয়র হয়ে যাচ্ছেন। ফলে সিনিয়রিটির ধারাবাহিকতা ও কাজের পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে। এজন্য ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই সরকারের এ বৈষম্য নিরসন করা উচিত।’

যেভাবে বেতন স্কেলে বৈষম্য তৈরি

বিসিএস পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়ে কোনো ক্যাডার পদে নিয়োগ পায়নি কিন্তু পিএসসির সুপারিশক্রমে ৯ম গ্রেডে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ পেয়েছেন; তাদের বেতন জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫ এর ৯ম গ্রেড অনুযায়ী ২২০০০ টাকা। এই কর্মকর্তারা সবাই ১৩০০ নম্বরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। অপরদিকে প্রথম শ্রেণির বিভিন্ন পদে বিসিএস পরীক্ষা ছাড়া সরাসরি যারা পিএসসির পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছেন; তারা ৩০০ নম্বরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। চাকরিতে প্রবেশকালে তারা ৯ম গ্রেডে একটি অতিরিক্ত অগ্রিম বেতন বৃদ্ধির সুবিধা (ইনক্রিমেন্ট) পাচ্ছেন; অর্থাৎ চাকরিতে প্রবেশকালে তাদের মূল বেতন ছিল (২২০০০+১১০০)= ২৩১০০ টাকা।

ফলে একই গ্রেডে একই বছর চাকরিতে যোগদান করা প্রথম শ্রেণির দুটি ব্যাচের মধ্যে বেতন-ভাতায় বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। একইসঙ্গে পদমর্য়াদার ক্ষেত্রেও পিছিয়ে পড়ছেন বিসিএসসের ১৩০০ নম্বরের পরীক্ষায় পাস করা কর্মকর্তারা। অন্যদিকে পিএসসির সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্তরা ৩০০ নম্বরের নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে অতিরিক্ত একটি ইনক্রিমেন্ট পাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

আইনজীবী খন্দকার শাহরিয়ার শাকির বলছেন, ‘এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে- ২০১৬ সালের ২০ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে জারি করা গেজেটের ৫ এর (ক) এবং (খ) এর ধারা। ওই ধারাটিই বৈষ্যম্য তৈরি করেছে। আদালত এ বৈষম্য নিরসনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছেন।’

সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন