বিজ্ঞাপন

সরকারের ‘ভুল সিদ্ধান্তের’ কারণে জনগণ টিকা বঞ্চিত

April 26, 2021 | 4:41 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সরকারের ‘ভুল সিদ্ধান্তের’ কারণেই জনগণ টিকা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এত বড় একটা বৈশ্বিক মহামারি, এত বড় একটা বিপর্যয়, এই বিপর্যয়ের মধ্যে সরকার শুধু ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং সিদ্ধান্তগুলোর পেছনে তাদের আর্থিক সম্পর্ক রয়েছে। এই ভুল সিদ্ধান্তগুলোর ফলে জনগণ এখন টিকা পাচ্ছে না। ফলে তারা আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই এটা একটা অপরাধমূলক কাজ। এই অপরাধমূলক কাজের জন্য তাদেরকে (সরকার) বিচারের সম্মুখীন হতে হবে ভবিষ্যতে।’

তিনি বলেন, ‘করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে আমরা বহুবার কথা বলেছি। সরকার তখন কোনো কর্ণপাতই করেনি। আমরা তখনই বলেছিলাম যে, শুধুমাত্র ভারত থেকে ভ্যাকসিন না নিয়ে আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা এবং তাদের কাছ থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহের ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’

বিজ্ঞাপন

‘আজকে কী অবস্থা দাঁড়িয়েছে? শুধুমাত্র একজন ব্যক্তিকে সুবিধা দেওয়ার জন্য ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ভ্যাকসিনের যে ব্যবস্থা করেছিল, সেই ব্যবস্থা একদম ভেঙে পড়েছে। এখন নতুন করে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা শুরু করেছে। এটা সংগ্রহ করতেও তো লেগে যাবে ৪/৫/৬ মাস। আজকে থেকে প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৬০ লাখ মানুষ টিকা পেয়েছেন— এটা প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলে। প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ করার মানেই হলো টিকা আর নেই’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘যেখানে সাড়ে ১২ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিনেটেড করে হার্ড ইউমেনিটি আনা প্রয়োজন সেখানে সরকারের অযোগ্যতা, ব্যর্থতা, দুর্নীতি এবং প্রোফিট তৈরি করার মানসিকতা গোটা জাতিকে বিপদগ্রস্ত করে ফেলেছে। আমরা মনে করি যে, এটা ক্রিমিনাল অফেন্স এবং এই একটা কারণেই এই সরকারের পদত্যাগ করা উচিত।’

চলমান ‘লকড্উানে’ ‘দিন আনে দিন খায়’ মানুষকে সরকার কোনো সহযোগিতা করেনি অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের দায়িত্বটা কী? প্রয়োজনে, প্রাকৃতিক বিপর্য়য়ে যদি এসব মানুষের পাশে এসে দাঁড়াতে না পারে তাহলে তারা কোন কাজটা করছে? একটা কাজ করছে, ভিন্নমতকে দমন করছে এবং একই সঙ্গে দুর্নীতি করছে, দুর্নীতির পাহাড় গড়ে তুলছে। আমরা অবিলম্বে দুঃস্থ মানুষ যারা দিন আনে দিন খায় তাদেরকে আর্থিক প্রণোদনার জন্য আহবান জানিয়েছি।’

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, গত ২৪ এপ্রিল দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির বৈঠকের চালের মজুদ তলানিতে নেমে যাওয়া এবং ভারত থেকে ভ্যাকসিন প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রীর এই ব্যর্থতার দায় নিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত বলে সভা মত দিয়েছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘স্থায়ী কমিটির সভা মনে করে অবিলম্বে মূল্য পরিশোধিত ভ্যাকসিন সরবারহের জন্য ভারত সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে হবে। ব্যর্থ হলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আইনের আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে।’

কোভিড মোকাবিলায় সরকার আন্তরিক নয় বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘পাশ্বর্বতী দেশের মতো আমরাও শঙ্কার মধ্যে করছি। আমরা জানি, এখাানে জনসংখ্যা অনেক বেশি। সুতরাং কোভিড মোকাবিলায় সমস্যা আছে। কিন্তু সরকারের ন্যূনতম আন্তরিকতাটা কোথায়? এই ভ্যাকসিন আনার ক্ষেত্রে চরম দুর্নীতি করেছে। একটি মাত্র প্রতিষ্ঠানকে যিনি তাদের সঙ্গে সংযুক্ত তাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছে। যার ফলে চরম বিপর্যয় ঘটল।’

অন্যদিকে হাসপাতালগুলোতে যে কাণ্ড-কারখানা হয়েছে, সেখানে কীভাবে এগ্রিমেন্ট হয়েছে, কীভাবে ফলস রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে, কয়েকদিন আগে পত্রিকায় এসেছে ৯৪০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে কয়েকটি হাসপাতালে। এটা তো তাদের চরম ব্যর্থতা। এয়ারপোর্টে দশমাস ধরে পড়ে থাকলো করোনার চিকিৎসার যন্ত্রপাতি, সেগুলো ছাড় করতে পারেনি, হাসপাতাল উধাও হয়ে গেলো, সেখানে আবারও পয়সা মারতে নতুন করে হাসপাতাল তৈরি করা হচ্ছে’— বলেন মির্জা ফখরুল।

বিজ্ঞাপন

লকডাউনের লেজে-গোবরে অবস্থা হয়ে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘লকডাউন পরিস্থিতিকে সরকার লেজে-গোবরে করে ফেলেছে। তারা নিজেরাও জানে না কি করবে, কী করবে না। গতবার যেমন পুলিশ বাহিনী, একসময় সামরিক বাহিনীও রাস্তায় নেমেছিল, কনট্রোল করছিল। দেখুন এবার কিন্তু লকডাউন বাস্তবায়ন করার জন্য পুলিশ বাহিনী ছাড়া আর কেউ নেই। পুলিশ নিরাপদ দূরত্বে থেকে বলছে যে, আমরা অসহায়। কি করব বলুন? কিছু নিয়ন্ত্রণ করার তো উপায় নেই। দ্বিতীয় দিন থেকে অসংখ্যক গাড়ি নেমেছে। ঢাকা শহরে কেউ বলবে না লকডাউন আছে?’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের চরম ব্যর্থতা। বাংলাদেশ করোনা খাতে জিডিপির এক দশমিক তিন শতাংশ ব্যয় করছে। আফগানিস্তানও জিডিপির ২% এর উপরে ব্যয় করছে। এটাকে কী বলে? এটা বলে যে সরকারের জনগণের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তারা তাদের সম্পদ বৃদ্ধি করছে, তারা বিভিন্ন দেশে বাইরে বাড়ি-ঘর তৈরি করছে।’

সারাবাংলা/এজেড/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন