রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে বিশ্ব নেতাদের সহায়তা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিজ দেশে সম্মানজনক ও শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে ফের বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (২৩ জুন) তিনদিন ব্যাপী নবম মস্কো আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সম্মেলনে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া ১ মিলিয়নের বেশি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশ ও এ অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে এখানে এত বিপুল সংখ্যক মানুষের আশ্রয়স্থল হতে পারে না। বিশ্ব সম্প্রদায়কে অনুরোধ করব মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের তাদের মাতৃভূমিতে সম্মানজনক ও শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিতে আমাদের সহায়তা করুন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চার বছরের বেশি সময় ধরে জোরপূর্বক বিতাড়িত বাংলাদেশ ১ দশমিক ১ মিলিয়নের বেশি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিককে আশ্রয় দিয়ে আসছে। তারা বাংলাদেশ এবং এ অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে।’ একটি দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যেকার সংঘাত আন্তঃদেশীয় নিরাপত্তা সমস্যার জন্ম দেয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশে টানা তিনবারের সরকার প্রধান বলেন, ‘এখন নিরাপত্তা ধারণার মধ্যে সামরিক হুমকি, ব্যক্তির আর্ত-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রয়োজন, স্বেচ্ছায় গণ অভিবাসন, পরিবেশগত নিরাপত্তা এবং অন্যান্য অপ্রচলিত নিরাপত্তা হুমকি অন্তর্ভুক্ত। এমনকি সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থা, বিছিন্নতাবাদ, ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র, সাইবার অপরাধ, আঞ্চলিক কোন্দল এবং পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার নতুন চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা দেখা দিয়েছে।’

এক্ষেত্রে সন্ত্রাস ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করার কথা দৃঢ়ভাবে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির প্রশংসা করেন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকন্যা আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অন্যান্য অংশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করবে।’

কোভিড-১৯ মহামারি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বর্তমানে এটি বিশ্বের অন্যতম বড় সমস্যা। এটি শুধু লাখ লাখ জীবনই নেয়নি, অর্থনীতিকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছে এবং সারাবিশ্বের কোটি কোটি মানুষের জীবিকাকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। সবার জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত এবং বিভিন্ন সেক্টরে প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার এই মহামারির মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা দেখিয়েছে।

যেকোন মূল্যে দেশের সকল নাগরিককে বিনামূল্যে কোভিড-১৯ টিকাদানের আওতায় আনার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তিনি বলেন, ‘সম্ভাব্য সব উৎস থেকে সরকার ভ্যাকসিন সংগ্রহের চেষ্টা করছে। আমাদের সরকার ভ্যাকসিনের জন্য রাশিয়ার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংযুক্ত আছে। বাংলাদেশের ভ্যাকসিন উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। এমনকি আমাদের যদি ভ্যাকসিন উৎপাদন চেইনে নেওয়া হয় আমরা বিশ্ব সম্প্রদায়কে সহায়তা দিতে পারব।’

জলবায়ু সমস্যাকে বড় ইস্যু হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই ইস্যুতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের যথাযথ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।’ যদিও জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের কোনো অবদান নেই, তারপরও বাংলাদেশকে অন্যতম ক্ষতিগ্রস্থ দেশ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি।

জ্ঞান ও দক্ষতা বিনিময় এবং সহযোগিতা সম্প্রসারণের মাধ্যমে বিশ্ব সম্প্রদায় জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবার জন্য শিক্ষা ও সকল সুবিধা সরবরাহের মাধ্যমে মানুষের মধ্যেকার বৈষম্য এবং পরিবেশ নিশ্চিত করার যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না।’

বিশ্ব সম্প্রদায়কে কোভিড-১৯ যুদ্ধে সবার জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিত, অসহায় মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা, রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে নিরাপদ প্রত্যাবর্তন, সন্ত্রাসীদের অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা বন্ধ করা এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে সামরিক সংস্থারগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম