বিজ্ঞাপন

‘গেদুচাচা’র প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী ২৯ জুন

June 29, 2021 | 1:22 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সাংবাদিক ও কলামিস্ট ‘গেদুচাচার খোলাচিঠি’র কালজয়ী কলাম লেখক এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আজকের সূর্যোদয় পত্রিকার প্রধান সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা খোন্দকার মোজাম্মেল হকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী ২৯ জুন।

বিজ্ঞাপন

গত বছর এই দিনে রাজধানী ঢাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে ৭০ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন গণমুখী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ এই ‘গেদুচাচা’।

প্রখ্যাত এই সম্পাদকের জন্ম ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার গতিয়া পূর্ব সোনাপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। পিতা এটিএম খোন্দকার ওবায়দুল হক এবং মাতা সৈয়দা আজিজুন নেছা খানম।

খোন্দকার মোজাম্মেল হক ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তিনি ছিলেন লেখক ও কবি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও শিক্ষক-শিক্ষাবিদ, সমাজসেবী ও সমাজসংস্কারক, উনসত্তরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তুখোড় ছাত্রনেতা, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ধর্মীয় পণ্ডিত। তাছাড়া অটুট স্বদেশপ্রেমে উজ্জীবিত একাত্তরের রণাঙ্গনে সম্মুখসমরে লড়াকু এ সৈনিক অসমসাহসে নিজ জেলা ফেনীতে প্রথম উড়িয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।

বিজ্ঞাপন

আপসহীন সংগ্রামী প্রবাদপ্রতিম পুরুষ এই ‘গেদুচাচা’ বাংলাদেশের সাংবাদিকতার জগতে এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। দুর্জয় সাহস, অমিত তেজ, সরল যুক্তি, কৌশল-প্রকাশভঙ্গি এবং গণতান্ত্রিক সহিষ্ণুতা আর নিগড় সততা এসবই আয়ত্ত করেছিলেন তিনি।

খোন্দকার মোজাম্মেল হক আজকের সূর্যোদয় গ্রুপের চেয়ারম্যান ছাড়াও সাংবাদিকতা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার দায়িত্বে ছিলেন। এ সব পরিচয় ছাপিয়ে বন্ধুর পরিবেশেও অক্লান্ত সারথীর মতো লিখে হয়ে উঠেছিলেন আমজনতার গেদুচাচা, সবচেয়ে পাঠকপ্রিয় কলাম লেখক এবং ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার সত্যনিষ্ঠ নির্লোভ নির্ভীক সাংবাদিকতার কিংবদন্তি অগ্রদূত। সাংবাদিকতায় নবধারা সূচনা করে অভীষ্ট সত্যনিষ্ঠতার মধ্য দিয়ে কালক্রমে নিজেকে অধিষ্ঠিত করেছিলেন একটি প্রতিষ্ঠানে।

হীরকরাজ্যের সন্ধিক্ষণে গেদুচাচার আবির্ভাব ঘটে। আশির দশকে অনেক প্রথিতযশা সাংবাদিক ও সম্পাদকদের বেশুমার হয়রানি ও ধরে ধরে জেলেপোরাসহ পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে পাঠানো হচ্ছিল নির্বাসনে, এমনি দেশের এক ক্রান্তিকালে সামরিক জান্তা ও স্বৈরশাসকের এক বেয়াড়া সময়ে রক্তচক্ষুকে তোয়াক্কা না করে সাপ্তাহিক সুগন্ধা সম্পাদনাকালীন ‘গেদুচাচার খোলাচিঠি’ শিরোনামে ব্যতিক্রমধর্মী এ কলাম লিখে যে অদম্য সাহসিকতার দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তা এ-যুগে বিরল।

বিজ্ঞাপন

গেদুচাচার ছিল দৃষ্টির বৈভব আর ভাষার জাদু। কলামের বৈশিষ্ট্য ছিল বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রশ্নে উচ্চকণ্ঠ। তথ্যের ব্যাপৃত ছিল নিম্নবর্গ হতে উচ্চবর্গ, মেঠোপথ হতে রাজপথ, অজপাড়া হতে মন্ত্রীপাড়া, কুঁড়েঘর হতে গণভবন ও বঙ্গভবন পর্যন্ত। এতে সংখ্যাগুরু আঞ্চলিক ভাষাকে শৈল্পিক রূপ দিয়ে নবতর ঢঙ্গে ভাষাশৈলীর মাধ্যমে রসাত্মক উপস্থাপনায় মানুষকে উদ্বুদ্ধ করাসহ লেখায় বৈপরীত্য বিষয়বস্তুতে অন্তর্দৃষ্টি ফেলে অগণিত পাঠকের হৃদয়শীর্ষে ঠাঁই করে নিয়েছিলেন।

গেদুচাচার কলামে থাকত গণমানুষের অভাব-অভিযোগ, দুঃখ-বেদনা, দাবি-দাওয়া এবং সমাজ ও সরকারসহ রাষ্ট্রযন্ত্রের যতসব অনাচার-অসঙ্গতি, ভুল-ভ্রান্তি, অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারীর বিরুদ্ধে অনিরুদ্ধ এক গতি। দিব্যচোখে স্বচ্ছ-সে দৃষ্টি দিয়ে দেখেছেন সমাজনীতি, রাজনীতি, অর্থনীতিসহ সম্যক বৈষম্যের খুঁটিনাটি সামগ্রিক বিষয়। লেখনিতে কাল্পনিক তথ্যে ভর করে রূপগল্প ফেঁদে পাঠকের হাতের তালুতে উঠতে চাননি কখনো, সর্বদা চেয়েছেন ‘খবর ভালো হোক মন্দ হোক আমরা সত্যকথা বলব’ সম্পাদকীয় নীতিতে পাঠকের আস্থার জায়গাটিতে বসতে। এতে হয়ে উঠেছিলেন ৬৮ হাজার গ্রামের মুখপাত্র ও অভিভাবক।

খোন্দকার মোজাম্মেল হক খালেদা-হাসিনা শাসনামলেও সমাজে, রাষ্ট্রে ও সরকারে ঘটে যাওয়া চুম্বকাংশ তৃতীয় নয়নে গেদুচাচার মুখেই যেন নিজের মতামত ও পরামর্শ এক অভিনব কায়দায় বলে যেতেন। যা লিখতেন, তা যুক্তিগ্রাহ্য করে খোলাখুলিভাবেই লিখতেন। পরিমিত কিন্তু চৌকস ভাষায় ক্ষয়িষ্ণু সমাজ, সরকার ও রাষ্ট্রের অনিয়ম-অসঙ্গতি-দুর্নীতি আর স্বেচ্ছাচারীতা তুলে ধরার মেধাবী বিশ্লেষণ ও সমাধানই ছিল তার শক্তির উৎস।

নব্বই দশকের গোড়াতে ‘সুগন্ধা’ পত্রিকা ছেড়ে প্রথমে ‘সূর্যোদয়’ এবং পরে ‘আজকের সূর্যোদয়’ পত্রিকা প্রকাশ করে এ এযাবৎকাল লাভ করেন জনমতকে প্রভাবিত করার দুর্লভ ক্ষমতা। জাতীয় স্বার্থের প্রতি অবিচল ও দায়িত্বশীল থেকে যুক্তির ভাষায় প্রতিটি ইস্যু গণতান্ত্রিক ফয়সালার দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। কারোর প্রতি ব্যক্তিগত বিরাগ বা বিদ্বেষ নয়, জনসাধারণের প্রতি অগাধ ভালোবাসার উম্মুখে সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সম্যক দৃশ্যপট উম্মোচনে প্রয়াস পেতেন হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার সুরের সম্মোহনী শক্তিতে।

বিজ্ঞাপন

বিশ্বনন্দিত ‘গেদুচাচার খোলাচিঠি’ কলাম ছাড়াও তিনি ‘সিদ্ধিবাবার উপলব্ধি’, ‘ক্রসকানেকশন’, ‘স্বর্গ-নরকসহ একটি ধর্মীয় কলামে নির্ভয়ে সত্য উচ্চারণ, অনন্য রাজনৈতিক দিকনির্দেশনায় নিজেকে ব্যতিক্রমী দক্ষ সাংবাদিক হিসেবেই শুধু নয়, দেশের অন্যতম সেরা সম্পাদক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন; অর্জন করেছিলেন দেশপ্রেমিক মানুষের অনুপম শ্রদ্ধা আর নিখাঁদ ভালোবাসা।

গেদুচাচাকে নিরঙ্কুশ সত্যের পথে হাঁটতে গিয়ে খেসারতে ৬৬ মামলা ও হুলিয়া খেয়েও জাতির মনন তৈরিতে আমৃত্যু নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন, যে প্রেরণার দীপ্ত স্মৃতি কোনোদিন মুছে যাওয়ার নয়।

পরিবার ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে আজ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে তাকে স্মরণ করার কথা রয়েছে।

পরিবারের পক্ষে তার আত্মার শান্তি কামনায় সকলেন কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছে।

সারাবাংলা/একে

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন