বিজ্ঞাপন

মেগা প্রকল্পের টাকায় ভ্যাকসিন কিনুন: বিএনপি

July 5, 2021 | 5:18 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে মেগা প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দ করা অর্থ দিয়ে দ্রুত সরকারকে ভ্যাকসিন কেনার প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (৫ জুলাই) দুপুরে আয়োজিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দলটির ‘করোনার ভ্যাকসিন সংগ্রহ-বিতরণ-পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত কমিটি’র আহ্বায়ক সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এই প্রস্তাব দেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমাদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব হচ্ছে, করোনা সংক্রমণ সংকটকে জাতীয় পর্যায় এক নম্বর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। ভ্যাকসিন কেনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ অন্য খাত থেকে বিশেষ করে মেগা প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দ করা অর্থ ডাইভার্ট করে ভ্যাকসিন কেনা জরুরি। পৃথিবীর বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিগুলো থেকে দ্রুত ভ্যাকসিন সংগ্রহ করা দরকার। এক লাখ, দুই লাখ, পাঁচ লাখ নয়, কোটি কোটি ভ্যাকসিন আমদানির ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলেই করোনা চার/ছয় মাসের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।’

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা বিরোধীদল ভ্যাকসিন কিনতে পারব না। এটা সরকারকেই করতে হবে। যদি সরকার না পারে এর দায়-দায়িত্ব তাদেরই বহন করতে হবে। সেই দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করে সরকারকে প্রয়োজনে সরে দাঁড়াতে হবে। যারা পারবে তারা এদেশের জনগণকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসবে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘বর্তমান করোনা পরিস্থিতি, ভ্যাকসিন কর্মসূচি নিয়ে অনিশ্চিয়তা, স্বেচ্ছাচারিতা ও কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতায় বিএনপি উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং তাদের উদাসীনতায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। করোনা মোকাবিলায় সরকারের পরিকল্পনা, ভ্যাকসিন সংগ্রহেরে রোডম্যাপ এবং ভ্যাকসিন কর্মসূচির ভবিষ্যত পদক্ষেপ সম্পর্কে সব তথ্য জনগণেরর সামনে উপস্থাপনের দাবি জানাচ্ছি। বিএনপি বিশ্বাস করে, দেশের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ মানুষকে শিগগিরই ভ্যাকসিন দেওয়ার মাধ্যমে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এই লক্ষ্যে অনতিবিলম্বে সরকারকে পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন সংগ্রহের কার্য্কর পদক্ষেপ নিতে হবে জনগনকে তা অবহিত করতে হবে।’

ড. মোশাররফ বলেন, ‘করোনা নিয়ে খামখেয়ালী, দুর্নীতি এবং যে ব্যর্থতা সরকার দেখিয়েছে তার ফলে প্রতিদিন মানুষ জীবন দিচ্ছে। গতদিন ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ মৃত্যুবরণ করেছে বাংলাদেশে। এছাড়া ৮ হাজার ৬শ উপরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। প্রতিদিন একই অবস্থা। এটা কমার কোনো লক্ষণ আমরা দেখছি না। করোনা প্রতিরোধে ভ্যাকসিন হচ্ছে একমাত্র উপায়। এই ভ্যাকসিন নিয়ে সরকারের লুকোচুরি ও ব্যর্থতায় জনজীবনে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে।’

সবাইকে মাস্ক পরার আহ্বান জানিয়ে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে আমি দেশের সব জনগণকে বলব, আপনারা মাস্ক ব্যবহার করুন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। আপনি নিজে নিরাপদ থাকুন, অন্যদেরও নিরাপদে থাকতে সহযোগিতা করুন।’

বিজ্ঞাপন

ভ্যাকসিন কুটনীতিতে সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘বিশ্বের যেসব দেশ ইতিমধ্যে করোনা সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে সেসব দেশ প্রায় ৭০/৮০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে সমর্থ হয়েছে। অথচ বাংলাদেশ সরকারের ভ্যাকসিন কুটনীতিতে চরম ব্যর্থতা, ভ্যাকসিন ক্রয়ে অনিয়ম, লোভ ও হঠকারিতার কারণে দেশে ২৭ জুন পর্যন্ত দুই ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছেন মাত্র ৪২ লাখ ৮১ হাজার ৭৭৬ জন। এই হিসেবে গত ৬ মাসে মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত জনসংখ্যার তুলনায় অতি সামান্য সংখ্যক মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। তাতেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত অগ্রাধিকার তালিকা অনুসরণ করা হয়নি।’

ফাইজার ও সিনোফার্মের ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে সাবেক এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সিনোফার্মের ২০ লাখ ও মডার্নার ২৫ লাখ ডোজসহ এই পর্যন্ত সব মিলিয়ে দেশে ভ্যাকসিন এসেছে ১ কোটি ৫৯ লাখ ডোজ। বর্তমানে দেশে মাত্র ৫৯ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন মজুদ আছে। ১৮ কোটি মানুষের দেশে উল্লিখিত সংখ্যক ভ্যাকসিন কতটা অপ্রতুল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাজেট অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যত ভ্যাকসিন লাগে কেনা হবে। কিন্তু কোথা থেকে কেনা হবে, কবে নাগাদ কেনা হবে- সে ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য দেননি।’

তিনি বলেন, ‘সরকার ও তার মন্ত্রীরা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে প্রথম থেকে। তারা বলেছেন, করোনা সংক্রমিত হবে না। কিন্তু হয়েছে। তারপরে বলেছেন, সব চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। দেশের জনগণের কাছে পরিষ্কার যে, সরকার তাদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছে। আসলে এই সরকার জনগণের সরকার নয়, সেজন্য তাদের প্রতি সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। করোনা নিয়ে তারা যে দুর্নীতি করেছে তা মানুষ জানে। কিন্তু পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাদের কোনো মাথা ব্যথা ছিল না। তাদের উদ্দেশ্যে ছিল জনগণের দুঃসময়কে পুঁজি করে কীভাবে লাভবান হবে।’

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘গতকালও ডব্লিউএইচও ডিজি বলেছেন, কমপক্ষে ৭০ ভাগ মানুষকে ভ্যাকসিনেটেড করতে হবে। যদি এটা করা যায় তাহলেই ইমিউনিটি অর্জন করা, অর্থনীতিকে সচল রাখা সম্ভব হবে। অর্থাৎ বাংলাদেশের সাড়ে ১২ কোটি মানুষকে যদি ভ্যাকসিনেটেড করতে হয় মিনিমাম ২৫ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দরকার। এক্ষেত্রে আমাদের হাতে মাত্র দেড় কোটি বা এক কোটি ৬০ লাখ ভ্যাকসিন আসছে। এ ব্যাপারে সরকারের কোনো পরিকল্পনা নেই। এরকম পরিকল্পনাহীনভাবে আমরা যদি এগুতে থাকি তাহলে ভারতের যে দুরাবস্থা আমরা দেখছি, তাতে আল্লাহ জানে আমাদের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়?’

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার বলেন, ‘৩৬টা জেলায় আইসিইউ বেড নাই। সাতক্ষীরা বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ বলেন, রাজশাহীর বলেন- প্রত্যেক জায়গায় হাসপাতালের চরম অবস্থা। বগুড়ায় ১২ ঘণ্টায় সাত জন রোগী মারা গেছেন অক্সিজেনের অভাবে। ঠিক একইভাবে মারা গেছে সাতক্ষীরায়। এটাই হচ্ছে প্রকৃত চিত্র। এর জন্য সম্পূর্ণ দায়ী সরকারের অব্যবস্থাপনা।’

ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক হারুন আল রশিদ বলেন, ‘বাংলাদেশে চীনের সাইনোভেট কোম্পানি তার ভ্যাকসিন ট্রায়াল করার জন্য অনুমতি চেয়েছিল। আইসিডিডিআরবির সঙ্গে সমস্ত কথাবার্তা সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে সেই ট্রায়াল থেকে বাংলাদেশ সরে গিয়েছে। সিনোভেটের সেই ভ্যাকসিন ট্রায়াল করলে আমরা বিনামূল্যে অথবা কম দামে ভ্যাকসিন পেতাম। সেটা আমরা এখন কিনছি ১৫ ডলারে। তার মানে যদি অক্সেফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনটা ৫ ডলারে কিনে থাকি সিনোভেটের ভ্যাকসিন ১৫ ডলার কিনতে হচ্ছে। মানে ১০ ডলার করে প্রতি ভ্যাকসিনে বেশি দিচ্ছি।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম এবং ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব অধ্যাপক আবদুস সালাম বক্তব্য দেন।

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন