বিজ্ঞাপন

এত টাকা তালেবান পায় কোথায়?

August 28, 2021 | 4:59 pm

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

আফগানিস্তানে একের পর এক প্রাদেশিক রাজধানী দখলের মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানী কাবুলের দখল নেয় তালেবান। ২০ বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে লড়াইয়ের পর অবশেষে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয় এই সশস্ত্র গোষ্ঠী।

বিজ্ঞাপন

১০ বছর আগে তালেবানের যোদ্ধা ছিল ৩০ হাজার। কিন্তু, ২০২১ সালের মাঝামাঝিতে এসে সে সংখ্যা এক লাখে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

ধারণা করা হয়, বিশ্বের শীর্ষ সম্পদশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবান। জাতিসংঘের মতে, ২০১১ সাল থেকে তালেবানের বার্ষিক আয় প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার।

তবে, বিবিসির অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে এসে তালেবানের বার্ষিক আয় বৃদ্ধি পেয়ে ১.৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এত টাকা তালেবান পায় কোথায়? যদিও তালেবানের টাকার নির্দিষ্ট কোনো উৎস পাওয়া যায় না। তবে, মাদক ব্যবসা-খনিজ সম্পদ পাচার-বিদেশি অনুদান নানা উপায়েই তাদের অর্থ আসে।

বিজ্ঞাপন

বৈদেশিক অনুদান

তালেবানকে আর্থিকভাবে সাহায্য করছে এমন অভিযোগে বহু বছর ধরেই পাকিস্তান-ইরান-রাশিয়াসহ আরো কিছু দেশকে দোষারোপ করে আসছিল আফগান-মার্কিন কর্মকর্তারা। কিন্তু, প্রতিবারই এ অভিযোগ প্রত্যাখান করেছে দেশগুলো। তবে, তালেবানদের জন্য অনুদানের সিংহভাগই আসে পাকিস্তান-সৌদি আরব-আরব আমিরাত-কাতারভিত্তিক ব্যক্তিগত অনুদানকারীদের হাত ধরে।

মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০৮ সালে বিদেশি উৎস থেকে তালেবান পায় ১০৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে এ অনুদানের পরিমাণ বছরে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি।

বিজ্ঞাপন

মাদক চোরাচালান

মাদক চোরাচালানের মাধ্যমে বছরে ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে থাকে তালেবান। ২০১৮ সালে স্পেশাল ইন্সপেক্টর জেনারেল ফর আফগান রিকন্সট্রাকশন (সিগার) এর রিপোর্ট অনুযায়ী, তালেবানের বার্ষিক আয়ের ৬০ শতাংশ আসে এ খাত থেকে। তাছাড়া, অধিকৃত এলাকাগুলোতে জোর করে কৃষকদের দিয়ে আফিম চাষ করানোর অভিযোগ রয়েছে তালেবানের বিরুদ্ধে।

তবে, তালেবান বরাবরই মাদকের সঙ্গে তাদের সংযোগের কথা অস্বীকার করে আসছে। ২০০০ সালে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় কিছু সময়ের জন্য আফিমের চাষ নিষিদ্ধও রেখেছিল তারা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ আফিম উৎপাদক দেশ আফগানিস্তান। আফিম রফতানির মাধ্যমে দেশটি বছরে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত আয় করে থাকে।

আঞ্চলিক সম্প্রসারণ

বিজ্ঞাপন

২০১৮ সালে একটি খোলাচিঠির মাধ্যমে আফগান ব্যবসায়ীদেরকে সতর্ক করে তালেবান। তালেবানের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে ভ্রমণের সময় ব্যবসায়ীদেরকে ট্যাক্স দেওয়ার কথা বলা ছিল সে বার্তায়। এছাড়া, দুই বছরে নানান উন্নয়নমূলক এবং অবকাঠামোগত প্রকল্প থেকে ট্যাক্স সংগ্রহ করেছে তালেবান। রাস্তাঘাট, স্কুল এবং হাসপাতালসহ এ সকল প্রকল্পের বেশিরভাগই ছিল পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থায়নের ওপর নির্ভরশীল।

২০১৮ সালে আফগানিস্তানের ইলেকট্রিসিটি কোম্পানির প্রধান বিবিসিকে জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভোক্তাদের বিলের মাধ্যমে তালেবান বছরে দুই মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করছিল।

প্রতিবারই কোনো শহরের কেন্দ্র কিংবা সামরিক ঘাঁটি দখলের পর তালেবান সেখানকার অস্ত্র, গাড়ি দখলে নিত। এমনকি কোষাগারও খালি করে ফেলতো।

খনিজ সম্পদ

তালেবানের অর্থের অন্যতম বৃহৎ উৎস হলো খনি। দক্ষিণ আফগানিস্তানে তালেবান অধিকৃত অঞ্চল থেকে নিকেল, ট্যাংস্টেন, সোনা, মূল্যবান পাথর ও প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন করে থাকে তারা। খনিজ উপাদান ও মূল্যবান পাথরে ভরপুর আফগানিস্তানের মাটি। দেশটির সরকারি কর্মকর্তাদের মতে, সেখানকার খনিজ শিল্পের সর্বমোট বার্ষিক মূল্য এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

দেশটির বিভিন্ন খনিজ সাইটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নানা বৈধ এবং অবৈধ খনিজ উত্তোলন প্রকল্প থেকে অর্থ আয় করে থাকে তালেবান। ২০১৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের অ্যানালিটিকাল সাপোর্ট অ্যান্ড স্যাঙ্কশনস মনিটরিং টিম জানায়। দক্ষিণ হেলমন্দ প্রদেশের ২৫ থেকে ৩০ টি অবৈধ খনির অপারেশন থেকে বছরে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করে তালেবান।

সারাবাংলা/একেএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন