বিজ্ঞাপন

‘একতরফা’ সম্মেলনের চেষ্টা দেওয়ান বাজারে, বিরোধিতার মুখে স্থগিত

November 16, 2021 | 9:53 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ইউনিট পর্যায়ে সম্মেলন শুরু হয়েছে। তবে নগর আওয়ামী লীগের একটি পক্ষের অনুসারী ছাড়া অন্যদের সদস্য না করে একতরফাভাবে ইউনিট সম্মেলনের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে নগরীর দেওয়ান বাজার ওয়ার্ডে। সদস্য হতে না পারা নেতাকর্মীদের বিরোধিতার মুখে ওই ওয়ার্ডে শেষ পর্যন্ত সম্মেলন হয়নি।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচটি ওয়ার্ডের সাতটি ইউনিটের সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে দেওয়ানবাজার ওয়ার্ডের ইউনিট ছাড়া বাকিগুলো সম্পন্ন হয়েছে।

বাকি চারটি ওয়ার্ডের মধ্যে বাগমনিরমা ওয়ার্ডে তিনটি ইউনিট এবং আন্দরকিল্লা, এনায়েতবাজার ও পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের একটি করে তিনটি ইউনিটে সম্মেলন হয়েছে। সম্মেলন তত্ত্বাবধান করেছেন নগর আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা।

জানা গেছে, দেওয়ানবাজার ওয়ার্ডের ইউনিট সম্মেলন তত্ত্বাবধানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসান মাহমুদ হাসনী। তিনি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ওই ওয়ার্ডের আরেক কাউন্সিলর প্রার্থী রফিকুল ইসলাম বাপ্পী অভিযোগ করেছেন, তাকেসহ দেওয়ান বাজার ওয়ার্ডে যারা সাবেক মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী ছিলেন এবং বর্তমানে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত, তাদের সদস্য করা হয়নি। বারবার ওয়ার্ডের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে ফোন করা হলেও তারা সদস্য করতে রাজি হননি।

বিজ্ঞাপন

এ অবস্থায় তিনদিন আগে সদস্যপদবঞ্চিত ৩০ জনের একটি তালিকা নিয়ে বাপ্পী নগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে গিয়ে আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি ইউনিট সম্মেলন স্থগিত রাখার অনুরোধ করেন। কিন্তু নাছির তার আপত্তি আমলে নেননি।

এরপর দেওয়ান বাজার ওয়ার্ডের ইউনিট সম্মেলন নিয়ে বিরোধ আরও চাঙ্গা হয়। সম্মেলনের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল প্রথমে দেওয়ান বাজারের সাব এরিয়ায় হাফিজ পার্ক কমিউনিটি সেন্টারে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতির আশঙ্কায় পরে সেটা সরিয়ে জয়নাব কলোনির ভেতরে নেওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে সরিয়ে মঙ্গলবার সকালে নগরীর বলুয়ারদিঘীর পাড় এলাকায় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তৈয়ব সিদ্দিকীর বাসায় নেওয়া হয়। খবর পেয়ে রফিকুল ইসলাম বাপ্পীর নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা ওই বাসার সামনে অবস্থান নিলে সম্মেলন স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেও সম্মেলনস্থলেই যাননি হাসান মাহমুদ হাসনী।

জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম বাপ্পী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা যারা মহিউদ্দিন ভাইয়ের রাজনীতি করেছি, তাদের বাদ দিয়ে সম্মেলন করতে চায়। বারবার অনুরোধ করার পরও তারা আমাকে এবং আমার সিনিয়র আরও অনেককে সদস্য করেননি। এজন্য আমরা অনুরোধ করেছি সম্মেলন স্থগিত করতে। কিন্তু অনুরোধ না শোনায় আমরা সম্মেলনস্থলের সামনে জমায়েত হই। তখন তারা সম্মেলন স্থগিত করতে বাধ্য হয়।’

বিজ্ঞাপন

অভিযোগের বিষয়ে দেওয়ান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি পেয়ার মোহাম্মদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সম্মেলনের প্রস্তুতি ছিল না সেজন্য স্থগিত করেছি। বাপ্পী যে অভিযোগ করছে সেটা সঠিক নয়। সে যুবলীগের পদে আছে। যুবলীগের পদ ছেড়ে এলে তখন তাকে আওয়ামী লীগের সদস্য করা হবে। একজন তো দুই পদে থাকতে পারেন না। সে ৩০ জনের একটি তালিকা মহানগর আওয়ামী লীগকে দিয়েছে। আমরা সেখান থেকে অনেককে সদস্য করেছি। স্থগিত হওয়া সম্মেলন ১৯ নভেম্বর হবে।’

তবে নগরীর বাকি ওয়ার্ডে সুশৃঙ্খলভাবে সম্মেলন হয়েছে। আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডে তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক চসিক কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী। তিনি সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, ক-ইউনিটের সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে সভাপতি হয়েছেন মিলন চক্রবর্তী এবং সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম মুরাদ।

বাগমিনরাম ওয়ার্ডের সভাপতি চসিকের প্যানেল মেয়র গিয়াস উদ্দিন সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, ক-ইউনিটে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে মো. শাহজাহান ও শফিউল আজম, খ-ইউনিটে কামরুল হাসান ও আহমেদুল হক আনোয়ার এবং গ-ইউনিটে রাকিব মোল্লা ও জহির আহমেদ নির্বাচিত হয়েছেন।

গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘সুশৃঙ্খলভাবে সম্মেলন হয়েছে। কাউন্সিলরদের মতামত নিয়ে আমরা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেছি। একইদিনে তিনটি ইউনিটের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে একটি নজির স্থাপিত হল। এবার আমরা সুন্দরভাবে ওয়ার্ড সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

বিজ্ঞাপন

পূর্ব ষোলশহর এবং এনায়েত বাজার ওয়ার্ডের ইউনিট সম্মেলনে নির্বাচিতদের বিষয়ে নগর আওয়ামী লীগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়নি।

নগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নগরীর ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডের ১২৯টি ইউনিটে সম্মেলন শেষ করে ওয়ার্ডের সম্মেলন শুরু হবে। এরপর থানা সম্মেলন শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এদিকে সকালে নগরীর বাগমনিরাম ওয়ার্ডে তিনটি ইউনিট সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘ঘরে বসে নয়, উন্মুক্ত স্থানে আমন্ত্রিত কাউন্সিলরদের উপস্থিতিতে যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো, তা অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে থাকবে। আমাদের মধ্যে অভিযোগ বা মতভিন্নতা থাকতে পারে, তকে সবচেয়ে বড় কর্তব্য হল শৃঙ্খলা রক্ষা করা। এতে দলের ভিত্তি সুদৃঢ় হবে।’

এতে আরও বক্তব্য দেন- নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সুনীল কুমার সরকার, উপদেষ্টা শফর আলী, উপ-দফতর সম্পাদক জহরলাল হাজারী, কার্যনির্বাহী সদস্য আবদুল লতিফ টিপু, কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি প্যানেল মেয়র গিয়াস উদ্দিন।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন