বিজ্ঞাপন

কলাতলী মোড়ে নানা অব্যবস্থাপনা, ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনা

January 10, 2022 | 6:52 pm

ওমর ফারুক হিরু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

কক্সবাজার: শহরের কলাতলী মোড়ের ঢালু সড়কে একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা। বিভিন্ন সময় সড়ক দুর্ঘটনায় অ্যাডভোকেট, শ্রমিক নেতা, পর্যটক, শিক্ষার্থীসহ মারা গেছেন অনেক পথচারী। বিশেষ করে মালবোঝাই ভারি গাড়িগুলোই (ট্রাক-পিকআপ-লরি) কলাতলী সড়কের ঢালু অংশ হয়ে নামার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে।

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে সড়কের কাঠামো, স্পিড ব্রেকার, চালককে পূর্ব সর্তক না করা, সড়কের দুই পাশ দখল, ছোট সড়কসহ নানা অব্যবস্থাপনার কথা বলছেন সচেতন মহল। এদিকে এই ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বাড়লেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো বিকার নেই। দিক নির্দেশনামূলক নানা কথার মধ্যেই তাদের কার্যক্রম সীমিত।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, কলাতলী পয়েন্টে ২০২১ সালের ৬ মার্চ শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে সিমেন্টবোঝাই ট্রাক ফুটপাতে উঠে পড়ে। এসময় ট্রাকের চাপায় আইনজীবী, পর্যটকসক ৩ জন নিহত ও আহত হয় অন্তত ৯ জন। নিহত-আহতরা সবাই পথচারী ছিলেন।

গত ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি দুপুর ১২টার দিকে একই সড়কের ঢালু জায়গায় ডাম্পারের ধাক্কায় নিহত হয় শ্রমিক নেতা খোরশেদ আলম (৩৫)। ডাম্পারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তার মোটরসাইকেলে ধাক্কা দিলে এই দুর্ঘটনা ঘটে। ২০১৮ সালের দিকেও ওই সড়কে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাত্রীছাউনি গুড়িয়ে দেয় একটি ট্রাক। যেখানে এক পথচারী মারা যায় এবং একজনের পা কেটে ফেলতে হয়।

বিজ্ঞাপন

২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর মালবাহী বড় ট্রাক ওই ঢালু দিয়ে নামার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি সিএনজি ও দু’টি অটোরিক্সাকে ধাক্কা দেয়। যদিও কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

গত শুক্রবারও (৭ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে কলাতলীতে বেপরোয়া ট্রাকের ধাক্কায় আশরাফ আশু (৩৫) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন। নিহত যুবক ঝিলংজা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের পশ্চিম লারপাড়ার সেনায়েত আলীর ছেলে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে।

স্থানীয়রা বলছেন, পর্যটন সমাগম স্থানের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে একের পর এক দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। কিন্তু এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বিষয়টিকে কর্তৃপক্ষের অবহেলা হিসেবে দেখছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু জানান, ওই জায়গায় সড়ক দুর্ঘটনার বড় একটি কারণ হল সংকীর্ণ মোড়। যার ফলে অনেক চালক মালবোঝাই ট্রাক বা বড় গাড়িগুলো সহজে ঘোরাতে পারে না। এতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘটে দুর্ঘটনা। এছাড়া রাস্তার দুই পাশে ফুটপাত দখল হচ্ছে আরও একটি কারণ। একে তো রাস্তা ছোট, তার মধ্যে দুই পাশে দখল করে থাকায় ঢালু সড়ক দিয়ে নামার সময় চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ব্রেক ফেল করে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনায় একের পর এক মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কথা মাথায় রেখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সমাধান করা উচিৎ ছিল। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

কক্সবাজার চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা জানান, কিছু দিন আগে তার গাড়িও ওই জায়গায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিল। দুর্ঘটনা কমাতে গতানুগতিক স্পিড ব্রেকার ব্যবহার না করে আধুনিক মানের গতি নিয়ন্ত্রণ ব্যবহার করলে ভালো হয়। এটি এখন সময়ের দাবি। এছাড়া ঢালু ওই ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় আসার আগে চালককে সর্তক করতে সংকেত ব্যবহার করা উচিৎ।

কক্সবাজার ট্রাফিক বিভাগের সহকারী পুলিশ সুপার এম এম রকীব উর রাজা জানান, কলাতলী মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ বক্স রয়েছে। যেখানে সবসময় ট্রাফিক দায়িত্বরত থাকেন। তিনি নিজেই গত বছর ২০২১ সালের ৬ মার্চের সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনার সাক্ষী। ঘটনার পরপরই ওই সড়কের দুই পাশে থাকা সিএনজি (অটোরিক্সা) স্টেশন তুলে দেওয়া হয়েছে এবং ওই জায়গা সবসময় যানজট মুক্ত রাখা হয়।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘মালবোঝাই ভারী ট্রাক-পিকআপ-লরিগুলো সড়কের ঢালু অংশে ব্রেক ফেল করে দুর্ঘটনায় পড়ে। এই সমস্যার সমাধানে চালককে সামনে ঢালু রাস্তায় ঝুঁকির বিষয়টা অগ্রিম অবহিত করার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। বিষয়টি রোডর্স অ্যান্ড হাইওয়েকে (সড়ক ও জনপদ অধিদফতর) জানানো হয়েছে।’

কলাতলীর এই ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে গত ৫ বছরের বা এরও আগে সড়ক দুর্ঘটনায় কত জন মারা গেছে এই তথ্য নেই সিভিল সার্জন অফিসে। জানতে চাইলে কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিসার ডা. মো. মাহবুবুর রহমান জানান, ওই পয়েন্টে সড়ক দুর্ঘটনা এবং হতাহতের বিষয়টি তিনি অবগত। সার্বিকভাবে কতজন মারা গেছেন তার তথ্য থাকলেও নির্দিষ্টভাবে ওই পয়েন্টে কতজন মারা গেছে তার কোনো তথ্য নেই।

সড়ক ও জনপদ অধিদফতরের (রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে) নিবার্হী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তাফা বলেন, ‘মালবোঝাই ভারি গাড়িগুলো অনেক সময় ঢালু সড়কে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। প্রকৃতপক্ষে সড়কটি প্রয়োজনের তুলনায় ছোট। যা ২০০ থেকে ২৫০ মিটারের বেশি নয়। দুর্ঘটনা কমাতে সড়কটি বড় করতে হবে। এছাড়া সড়ক থেকে ৩ চাকার গাড়িগুলো সরিয়ে ফেলা জরুরি হয়ে পড়েছে। এসবের কারণেই দুর্ঘটনা বেশি হয়।’

স্পিড ব্রেকারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধে স্পিড ব্রেকার কখনো সমাধান নয়। তবে এই সমস্যা সমাধানে দ্রুত সময়ের মধ্যে সাইন সিগন্যালসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যা আগামী দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে শেষ হবে।’

সারাবাংলা/এমও

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন