বিজ্ঞাপন

করোনার ভ্যাকসিন নেওয়ার পর শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগ

January 21, 2022 | 5:57 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

গাজীপুর: টঙ্গীতে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নেওয়ার পর এক কিশোরের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজের ভ্যাকসিন কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।

বিজ্ঞাপন

নিহত ওই শিক্ষার্থীর নাম ফরহাদ (১৬)। তিনি গাজীপুর জেলার টঙ্গী পূর্ব থানাধীন এরশাদনগর ৬ নম্বর ব্লকের বেড়িবাঁধ এলাকায় মোস্তফার ছেলে। ভ্যাকসিন কার্ডে উল্লেখ ছিল ফরহাদ টঙ্গীর দত্তপাড়া চানকিরটেক এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

ভ্যাকসিন কেন্দ্রে নিহত ফরহাদের পেছনে থাকা ভ্যাকসিন গ্রহণকারী মো. ইয়াসিন খান তুষার শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি ভ্যাকসিন নিয়েছি। ফরহাদ আমার সামনে ছিল। সে ভ্যাকসিন নেওয়ার পর চেয়ার থেকে উঠে দু-তিন কদম সামনে এসে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে ধরে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করি। ব্যর্থ হয়ে টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন স্যারকে জানাই। পরে ওনি আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষককে জানায়। পরে তারা দ্রুত ফরহাদকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে।’

ভ্যাকসিন কার্ডে ভ্যাকসিনের সিল ও তারিখ উল্লেখ না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তুষার আরও বলেন, ‘আজ কাউকে ভ্যাকসিন কার্ডে কোনো সিল ও তারিখ দেয়নি। তাই আমারটাতেও সিল নেই।’

বিজ্ঞাপন

ভ্যাকসিন গ্রহণকারী সাহিদুর রহমান যুবরাজ নামে একজন বলেন, ‘আমিও টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্র থেকে ভ্যাকসিন দিয়েছি, কিন্তু তারা ভ্যাকসিনের নাম ও তারিখের কোনো সিল দেয়নি। আমরা তো এগুলো জানতাম না যে কি দিবে, আর কি দিবে না।’

এসময় শুভ নামে অন্য এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা দশজন একসঙ্গে লাইনে ছিলাম। আমার সিরিয়াল ছিল আট নাম্বার। কিন্তু ফরহাদ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় আমি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই তাই আমি ভ্যাকসিন দিতে পারিনি। তবে আমার আগে যারা ছিলেন তাদের ভ্যাকসিন কার্ডে কোনো প্রমাণই ছিল না যে তারা ভ্যাকসিন দিয়েছেন। প্রচুর ধাক্কাধাক্কি ছিল।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আহ্সান উল্লাহ মাস্টার স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি সঠিক ভাবে বলতে পারবো না যে ফরহাদ ভ্যাকসিন নিয়েছে কি না। আর ভ্যাকসিন কার্ডে সিল ও তারিখ তো দেবে ভ্যাকসিন কেন্দ্র থেকে। যারা ভ্যাকসিন নিতে কেন্দ্রে গেছে তাদের তালিকা আছে। কিন্তু যারা ভ্যাকসিন নিয়েছে তাদের তালিকা নেই।’

বিজ্ঞাপন

তবে টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন মিয়া ভ্যাকসিন নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থী ভ্যাকসিন নিতে এসে অসুস্থ হয়ে পরলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সে ভ্যাকসিন নেয়নি, আমি শতভাগ নিশ্চিত। যারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল আমি তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। যে বলেছে ভ্যাকসিন নিয়েছে, সে ভুল তথ্য দিয়েছে।’

টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মকবুল হোসেন বলেন, ‘হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। ভ্যাকসিন নেওয়ার কারণে শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হতে ময়নাতদন্তের প্রয়োজন।’

টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম বলেন, ‘আমরা ভ্যাকসিন কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। ভেন্যুর প্রধান শিক্ষকের (আলাউদ্দিন মিয়া) সাথে কথা বলে জানতে পারলাম যে ফরহাদ লাইনে থাকা অবস্থায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আমি আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গেও কথা বলেছ। তিনি জানিয়েছেন যে তার হার্টে আগে থেকেই সমস্যা ছিল।’

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) দুপুরে টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজে করোনার প্রথম ডোজ (ফাইজার) নিতে আসে ফরহাদ। ভ্যাকসিন দেওয়ার পর হঠাৎ সে অজ্ঞান হয়ে যায়। এসময় তাঁকে উদ্ধার করে হোসেন মার্কেট এলাকার ঢাকা ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। পরে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এমও

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন