বিজ্ঞাপন

নিষেধাজ্ঞার ১১ দিন পরও জেলেরা পায়নি বরাদ্দের চাল

March 12, 2022 | 8:06 am

এম হেলাল উদ্দিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

ভোলা: ভোলায় ইলিশের আভয়াশ্রমে গত ১ মার্চ থেকে মেঘনা-তেতুঁলিয়া নদীতে সব ধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাসের জন্য মেঘনা-তেতুঁলিয়া নদীতে সব ধরনের মাছ ধরায় এই নিষেধাজ্ঞা থাকবে। একইসময়ে জেলেদের জন্য বরাদ্দ করা হয় সরকারি চাল। তবে ১১ দিন পার হলেও ভিজিএফ’র সেই চাল পায়নি জেলেরা।

বিজ্ঞাপন

একদিকে আয়-রোজগার না থাকায় পরিবার নিয়ে দুঃখ-কষ্টে দিন কাটচ্ছেন তারা। অন্যদিকে ঋণের কিস্তির চাপও রয়েছে তাদের। ফলে একরকম বাধ্য হয়েই নদীতে মাছ শিকারে নামছেন জেলেরা।

মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, মেঘনা-তেঁতুলিয়ায় ইলিশের আভয়াশ্রম হওয়ায় ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ভোলার ইলিশা থেকে চর পিয়াল মেঘনা নদীর শাহবাজপুর চ্যানেলের ৯০ কিলোমিটার ও ভেদুরিয়া থেকে চর রুস্তম পর্যন্ত ১০০কিলো মিটার তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মৎস্য বিভাগ। ভোলার সাত উপজেলায় প্রায় ৩ লাখ জেলে থাকলেও এখন পর্যন্ত সরকারি ভাবে নিবন্ধিত জেলে রয়েছে প্রায় ১ লাখ ৪৬ হাজার। এদের মধ্যে এ বছর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞায় সরকারিভাবে চাল পাবেন ৯২ হাজার ৬৬১ জন জেলে।

সদর উপজেলার ভোলার খাল মাছঘাট এলাকার জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন প্রায় ৩ লাখেরও বেশি জেলে। নিষেধাজ্ঞার ১১ দিন পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত জেলেদের দেওয়া হয়নি সরকারি বরাদ্দকৃত চাল। অন্যদিকে ভোলার জেলেদের কাছ থেকে বিভিন্ন এনজিও’র কিস্তি আদায়ের চাপ থাকায় বিপাকে রয়েছে জেলেরা।

বিজ্ঞাপন

গত বৃহস্পতিবারও ভোলার খাল এলাকার মাছঘাট এলাকার মেঘনায় জেলেরা নির্বিঘ্নে জাল ফেলে মাছ ধরে ওই ঘাটে প্রকাশ্যে ডাক দিয়ে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

ভোলার খাল মাছ ঘাটের জেলে নীরব মাঝি ও মো. কামাল মাঝি বলেন, ‘সরকার মাছ ধরার উপর দুই মাসের অভিযান দিছে। আমরা অভিযান মেনে নদীতে মাছ ধরতে যাই না। কিন্তু আমাগো লইগা সরকারি যে চাল বরাদ্দ করছে তা আমরা এখনও পাই নাই। নদীতে অভিযান থাকায় কোনো আয়-রোজগার নাই। বউ-বাচ্চা নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। কবে সরকারি বরাদ্দের চাল পামু সে অপেক্ষায় করছি।’

বিজ্ঞাপন

সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা জেলে মো. আকবর আলী মাঝি জানান, ৩০ বছর যাবত ভোলার মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার নামে সরকারিভাবে জেলে নিবন্ধন কার্ড হয়নি। যার কারণে জেলেদের নামে সরকারিভাবে চাল বরাদ্দ এলেও তিনি কখনো তা পান না।

একই এলাকার মো. রুবেল মাঝি বলেন, ‘আমি তিনডা এনজিও থেকে ঋণ নিছি। সপ্তাহে ১৫০০ টাকা করে দুই কিস্তিতে ৩ হাজার আর আরেকটা মাসে ৪ হাজার টাকা করে। প্রতি মাসে ১৬ হাজার টাকার কিস্তি চালাইতে হয়। কিন্তু দুই মাসের অভিযান চলায় নদীতে গিয়া মাছ ধরতে পারি না। এহন কিস্তি চালামু কেমনে, সরকার তো কিস্তি আদায় বন্ধ করে নাই।‘

তিনি আরও বলেন, “দুই মাসের জন্য এনজিও’র কিস্তি আদায় বন্ধ না হইলে কিস্তি পরিশোধের জন্য পালিয়ে নদীতে মাছ ধরতে বাধ্য হচ্ছি।”

ভোলা সদরের ভোলার খাল মৎস্য ঘাটের আড়তদার মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে জেলেদের পাশাপাশি আমরা মৎস্য আড়ৎদাররাও বিপাকে রয়েছি। জেলেরা সরকারি চাল এখনও পায়নি। যার কারণে প্রতিদিনই কোনো না কোনো জেলে তাদের স্ত্রী-ছেলে নিয়ে আমাদের কাছে হাজির হয়ে বলে ঘরে চাল নাই টাকা ধার দেন বা দাদন দেন চাল কিনা খাবো। তাই আমরা নিরুপায় হয়ে জেলেদের টাকা দিতে হয়। তবে সরকারি চালটা যদি জেলেরা ১-২ দিনের মধ্যে পায় তাহলে তাদের অভাব কিছুটা দূর হবে।’

বিজ্ঞাপন


ভোলা সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. জামাল হোসাইন জানান, জেলেদের নামে বরাদ্দকৃত মৎস্য ভিজিএফ’র চাল দ্রুত বিতরণের জন্য আমরা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসকে চিঠি দিয়েছি। আশাকরি আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে জেলেদের মাঝে চাল বিতরণ শুরু করা হবে।

তিনি জানান, গত ৯ মার্চ পর্যন্ত নদীতে ৬৭টি অভিযান চালিয়ে অবৈধ ভাবে মাছ ধরার অপরাধে ২৬৫ জনকে জেলেকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ অদালতের মাধ্যমে ৫১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে জেল ও ১৮২ জনকে ৮ লাখ ৫৮ হাজার টাকা জরিমানা এবং তাদের ব্যবহার করা ট্রলার নিলামে বিক্রি করে সরকারি কোষাগারে ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা জমা দেওয়া হয়। নিষেধাজ্ঞা সফল করতে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

দুই মাসের নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের কাছ থেকে এনজিও কিস্তি আদায় বন্ধ রাখার কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সারাবাংলা/এমও

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন