বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামে শান্তিপূর্ণ হরতাল, মিছিলে চড়াও পুলিশ

March 28, 2022 | 12:54 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বাম গণতান্ত্রিক জোটের ডাকা আধাবেলা হরতাল চলাকালে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্নস্থানে নেতাকর্মীদের মিছিলে বাধা দিয়েছে পুলিশ। প্রতিবাদে নেতাকর্মীরা সড়কে বসে পড়লে পুলিশ লাঠিপেটা করে তাদের সরিয়ে দেয়। এ সময় কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ গাড়িতে তুলতে চাইলে নেতাকর্মীরা তাদের ছিনিয়ে মুক্ত করেন। পুলিশের লাঠিপেটায় দুইজন আহত হয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (২৮ মার্চ) ভোর ৬টা থেকে হরতাল আহ্বানকারী বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরিক বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাসদ, বাসদ (মার্কসবাদী) ও গণসংহতি আন্দোলনের নেতাকর্মীরা নগরীর নিউমার্কেট মোড়সহ আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন। তবে হরতালের মধ্যেও চট্টগ্রাম নগরী এবং দূরপাল্লার যানবাহন, ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। সরকারি-বেসরকারি অফিস, কলকারখানায়ও কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক ছিল।

হরতাল চলাকালে নগরীর নিউমার্কেট, স্টেশন রোড, সিআরবি, লাভ লেইন, আমতল, কোতোয়ালীর মোড়, লালদিঘী এলাকায় খণ্ড খণ্ড মিছিল করে বাম নেতাকর্মীরা। সকাল সাড়ে আটটার দিকে নেতাকর্মীরা রেলস্টেশন চত্বর থেকে মিছিল নিয়ে আমতল মোড়ে আসার পর পুলিশ বাধা দেয়। তখন জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি এ্যানি সেনসহ কয়েকজন নেতাকর্মী সড়কে বসে পড়েন। পুলিশ এসে তাদের সড়ক থেকে সরে যেতে বললে বাকবিতণ্ডা হয়। এরপর পুলিশ তাদের জোর করে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। এ সময় আমতল মোড়ে যানবাহন কিছুক্ষণের জন্য আটকে যায়।

বিজ্ঞাপন

এরপর আমতল থেকে মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা নিউমার্কেট হয়ে জিপিও মোড় ঘুরে ফের নিউমার্কেটের মোড়ে আসেন। তখন পুলিশ নেতাকর্মীদের মিছিলে বাধা দিলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। জেলা সিপিবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক নুরুচ্ছাফা ভূঁইয়া, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য উত্তম চৌধুরী, বাসদ নেতা আল কাদেরি জয়, বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা শফিউদ্দিন কবির আবিদ, জেলা গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসান মারুফ রুমীসহ নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধ্বস্তাধ্বস্তি হয়। একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে।

নুরুচ্ছাফা ভূঁইয়া এবং কয়েকজ ছাত্র সংগঠনের কর্মীকে পুলিশ জোর করে গাড়িতে তুলতে চাইলে নেতাকর্মীরা তাদের ছিনিয়ে নেন। পুলিশের লাঠিপেটায় ছাত্র ইউনিয়নের তাহলিল আবচার অর্ণব ও ছাত্র ফেডারেশনের ফাহাদ জামান জনি আহত হয়েছেন।

ঘটনাস্থলে থাকা কোতোয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘হরতালকারীরা ভোর থেকে মিছিল করছেন। আমরা তাদের বাধা দিইনি। কিন্তু বেলা গড়াতে রাস্তায় গাড়ি বাড়ছিল। উনারা মিছিল নিয়ে আসার সময় যানবাহন আটকে দিচ্ছিলেন। আমরা গিয়ে অনুরোধ করেছি যে, আপনারা গাড়ি চলাচলে বাধা দেবেন না। শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করেন, পুলিশের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু উনারা আমাদের প্রথমে ধাক্কা দেন। তখন আমরা উনাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক করি।’

বিজ্ঞাপন

বাম গণতান্ত্রিক জোটের জেলা সমন্বয়ক ও জেলা সিপিবির সভাপতি অশোক সাহা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে কোনো উসকানি ছিল না। আমরা একটি গাড়িতে টোকা পর্যন্ত দিইনি। আমাদের হরতাল গরীব, মেহনতি, শ্রমজীবী মানুষের জন্য। গরীব মানুষ জীবিকার তাগিদে রাস্তায় রিকশা নিয়ে নেমেছে, তাদের বাধা দেয়া আমাদের কাজ নয়। আমাদের কাজ হচ্ছে তাদের কাছে আমাদের আহ্বানটা পৌঁছে দেয়া। আমরা সেটাই করছিলাম, কিন্তু পুলিশ বিনা উসকানিতে আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমরা পুলিশের এ ধরনের আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই।’

পুলিশের বাধার পর নিউমার্কেট মোড় সমাবেশ হয়। সেখানে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা বক্তব্য রাখেন। তারা বলেন, ‘এই সরকারের প্রশ্রয়ে দেশে একাধিক লুটেরা সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে সরকারের নেতা, মন্ত্রী, এমপিরাও এসব সিন্ডিকেটের সদস্য হয়ে বসে আছেন। বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, মানুষের ঘরে ঘরে হাহাকার। কিন্তু সরকার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। কারণ তাদের পায়ের তলায় মাটি নেই। তারা দিনের ভোট রাতে করে ক্ষমতায় এসেছে।’

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্দ্ধগতি ঠেকাতে গণবন্টন ও রেশনিং ব্যবস্থা চালুর দাবি জানান বাম জোটের নেতারা।

বিজ্ঞাপন

এদিকে হরতালের সমর্থনে নিউমার্কেট মোড়ে সমাবেশ চলাকালে অসুস্থ হয়ে পড়েন সিপিবি চট্টগ্রাম জেলার সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য উত্তম চৌধুরী। এসময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মাটিতে পড়ে যান তিনি। নেতাকর্মীরা উত্তম চৌধুরীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান।

জেলা সিপিবির সভাপতি অশোক সাহা বলেন, ‘অতিরিক্ত গরমের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।’

হরতাল চলাকালে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী লাঠি নিয়ে নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে অবস্থান নেয়। তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

সারাবাংলা/আরডি/এএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন