বিজ্ঞাপন

নারায়ণগ‌ঞ্জের বন্দর উপজেলা গণহত্যা দিবস আজ

April 4, 2022 | 5:13 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

নারায়ণগঞ্জ: আজ ৪ এপ্রিল জেলার বন্দর উপজেলায় গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে নারায়ণগঞ্জের বন্দরে পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠে বর্বর পাক হানাদার বাহিনী। এদিন বিভিন্ন গ্রাম থেকে ৫৪ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে ধরে এনে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে পাক হানাদাররা। পরে মরদেহগুলো আগুনে পুড়িয়ে উল্লাস করে তারা। বন্দরবাসীর জন্য দিনটি বেদনাদায়ক এবং শোকের।

বিজ্ঞাপন

১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল ভোরে রাজাকার এবং স্থানীয় দোসরদের সহায়তায় নারায়ণগ‌ঞ্জের বন্দরে প্রবেশ করে পাকিস্তানি বাহিনী। তারা গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেয় । বিভিন্ন গ্রাম থেকে নিরীহ মানুষ ধরে এনে সিরাজদ্দৌলা ক্লাবের মাঠের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে জড়ো করে। এরপর সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে। ব্রাশ ফায়ারে কেউ সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন কেউবা মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন। মাঠে রক্ত গঙ্গা বয়ে যায়। রক্ত স্রোতে সবুজ চত্ত্বর লাল বর্ণ ধারণ করে। লাশের উপর লাশ পড়ে থাকে। কিন্তু বর্বরতার এখানেই শেষ নয়। ঘাতকেরা আশপাশের গ্রাম থেকে মুলি বাঁশের বেড়া এনে লাশের উপর রেখে গান পাউডার ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে পুড়ে ছাই হয়ে যায় আহত ও নিহত ৫৪ জন। বিকৃত হয়ে যাওয়ায় সব মরদেহ শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ৫৪ জন শহীদের মধ্যে মাত্র ২৫ জনের নাম এবং পরিচয় জানা গেছে। এ লোমহর্ষক নারকীয় ঘটনা গ্রামবাসী অনেকে দূর থেকে অবলোকন করেছেন। এই দৃশ্য মনে হলে আজও আঁতকে ওঠেন তারা। শিউরে ওঠে গা। আজও চোখের কোনে জমাট বাঁধে বেদনা অশ্রু। আজও কাঁদেন শহীদ পরিবারগুলো।

যুদ্ধকালীন সময়ে বন্দর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাজী গিয়াসউদ্দিন আহমেদ জানান, ১৯৭১ সালের ৪ঠা এপ্রিল ভোরে নৌপথে এসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অতর্কিত বন্দরে আক্রমণ চালায়। তারা বন্দর সিরাজদৌল্লাহ ক্লাব মাঠে সাধারণ ৫৪ জন নারী-পুরুষকে ধরে এনে এক সারিতে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে। হত্যার পর লাশের উপর মুলি বাশের বেড়া দিয়ে গান পাউডার দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।

সেদিনের ঘটনায় শহিদ হওয়া ৫৪ জনের মধ্যে ২৫ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হচ্ছে, ছমিরউদ্দিন সরদার, মন্তাজ উদ্দিন মাস্টার, আলী আকবর, রেজাউল ইসলাম, বাবুল, আমির হোসেন, নায়েব আলী, আলী হোসেন, ইউসুফ আলী, সুরুজ চন্দ্র, যবুনা চন্দ্র কানু, লছমন চন্দ্র কানু, কানাই লাল কানু, গোপাল চন্দ্র, ভগবত দাস, দুগচিরন প্রসাদ, নারায়ণচন্দ্র প্রসাদ, ইন্দ্রচন্দ্র দাস, সুরেশ চন্দ্র দাস, দিগেন্দ্র চন্দ্র বর্মন, বনেল চৌধুরী, মোবারক, হারাধন মাস্টার, নারায়ণ চৌধুরী, বাদশা খান, পরেশ খান।

বিজ্ঞাপন

এ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে সিরাজদ্দৌলা ক্লাব মাঠে নির্মিত শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, কালো পতাকা উত্তোলন, স্মরণসভা, কাঙ্গালিভোজের আয়োজন করে শহীদদের পরিবার গু‌লো। তবে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভটি অবহেলা আর অযত্নে দিন দিন জরাজীর্ণ হচ্ছে। পাশে ময়লার ভাগাড় থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন নতুন প্রজন্ম। তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বন্ধে জানতে পারে এ স্মৃতিস্তম্ভটির মাধ্যমে। অন্যান্য যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবিও করেন এলাকাবাসী।

সারাবাংলা/এসএসএ

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন