বিজ্ঞাপন

কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনা বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি

April 13, 2022 | 3:05 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাজশাহীতে দুইজন কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনা বিচারবিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে সুষ্ঠু বিচারের দাবি করেছেন সরকারি দলীয় সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। বর্তমানে এ ঘটনার তদন্ত প্রক্রিয়ার সঙ্গে একমত নন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১৩ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবে ভিআইপি লাউঞ্জে আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক সংসদীয় ককাস আয়োজিত মতবিনিময় সভায় মোকতাদির চৌধুরী এ দাবি করেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন সংসদ সদস্য হোসেন বাদশা। মুখ্য আলোচক ছিলেন প্রফেসর ড. মেজবাহ কামাল, প্রথম আলো যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান এবং বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচ পরিস্থিতি ও দুই কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনায় বর্ণনা দেন বিমলচন্দ্র রাজওয়ান ও আশরাফুল হক তোতা।

মোকতাদির চৌধুরী আরও বলেন, সেচের পানির অভাবে ভারতে বিভিন্ন এলাকায় কৃষকদের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে এবং ঘটছে। আফ্রিকার কোনো কোনো এলাকায় সেচের পানির অভাবে কৃষকরা আত্মহত্যা করেছে। বাংলাদেশ সেচের পানির জন্য দুইজন কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনা এটাই প্রথম। আমি মনে করি দেশের জন্য এটি একটি অশনি সংকেত। সেজন্য আসল ঘটনা উদঘাটন করতে বিচারবভাগীয় তদন্ত এবং সেচ প্রকল্পে অব্যবস্থাপনার চিত্র উদঘাটনের জন্য সঠিক তদন্ত করা উচিত।

তিনি বলেন, দরিদ্র কৃষকদের সেচের জন্য পানি দেওয়া হবে না, আর প্রভাবশালীদের সেচের জন্য পানি দেওয়া হবে- এই ঘটনা সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। সেচ প্রকল্পের জন্য প্রধানমন্ত্রীর যেসব নির্দেশনা রয়েছে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না। যারা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নের দায়িত্ব রয়েছে তারা দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন কি না তাও খতিয়ে দেখা উচিত।

বিজ্ঞাপন

মোকতাদির চৌধুরী আরও বলেন, একসময় আমি আপনার সঙ্গে জড়িত ছিলাম। এখন আমলাতন্ত্র কেমন চলছে আমি জানি না। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নের দায়িত্ব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ যারা রয়েছেন তাদের সঠিক দায়িত্ব পালন করা উচিত। কোথাও ঘাটতি থাকলে সেটিও দেখা উচিত। বরেন্দ্র অঞ্চলে টিউবয়েল অপারেটর সাখাওয়াতকে অবশ্যই বিচার পেতে হবে। কারণ তিনি বলেছেন, পানি দেবো না। আর কৃষক বলেছেন, পানি না দিলে বিষ খাব। জবাবে অপারেটর সাখাওয়াত যে কথা বলেছেন, আগে বিষ খা তারপর পানি দেবো। এতেই প্রমাণ হয় কৃষক দু’জনকে অপারেটর সাখাওয়াত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে উৎসাহিত করেছেন। এজন্যই বিচারবিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে সঠিক বিচার হওয়া উচিত।

এ বিষয়ে ড. মেজবাহ কামাল বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির বিরুপ প্রভাবে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর শীর্ষস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। আবহমান কালের নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রধান গ্রাম নদী ও পানি এবং নদীপথ বর্তমানে তৃতীয় সংকটের মুখে। পদ্মা, মেঘনা ও যমুনাসহ সবগুলো নদী এখন চরম নাব্যতা সংকটে ভুগছে। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার মধ্য দিয়ে এক সময়কার প্রবল প্রবাহমান ছোট ছোট নদীগুলোর অধিকাংশ শুকিয়ে মরে গেছে আর না হয় মরে যেতে বসেছে।

তিনি বলেন, রাজশাহী বিভাগের ৮টি জেলা। কৃষি এই অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকার একমাত্র অবলম্বন। এই অঞ্চলের নদীগুলোর উজানের দেশগুলোর একতরফা পানি প্রত্যাহার করার কারণে দেশের বরেন্দ্র অঞ্চলের নদীগুলোর অধিকাংশ পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

ড. মেজবাহ আরও বলেন, স্বাধীনতা-উত্তরকালে উত্তরাঞ্চলে জেলাগুলোর কৃষকরা হস্তচালিত নলকূপ বসিয়ে সহজেই বিশুদ্ধ খাবার পানি পেতেন। কিন্তু বছরজুড়ে কৃষিকাজে অব্যাহতভাবে ভূগর্ভ থেকে পানি ব্যবহার করার কারণে ওই অঞ্চলে পানির স্তর নেমে গেছে। বর্তমানে হস্তচালিত নলকূপ থেকে আর পানি পাওয়া যায় না। এখন শেষ কাজের প্রধান ভরসা গভীর নলকূপ। আরবান অঞ্চলে জুড়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প সংক্ষেপে বিএমডিসি নামে একটি সংস্থা শতশত গভীর নলকূপ বসিয়ে কৃষকদের কাছে চড়া দামে বাড়ি বিক্রি করছে। ফলে এক শ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগী মুনাফাখোর সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে পানি কিনতে হয়। অর্থাৎ বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রান্তিক চাষিরা বর্তমানে বিএমডিসি কর্তৃপক্ষের পানি ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি।

তিনি আরও বলেন, কৃষক রবি মাল্টি ও অভিনন্দন দিনের পর দিন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে গভীর নলকূপ থেকে জমিতে সেচের পানির জন্য ধরনা দিলেও পানি পাচ্ছিলেন না। তারা ওই সময় বিএমডিসি কর্তৃপক্ষকে বলেছেন, পানি না দিলে এমনিতেই তো না খেয়ে মরে যেতে হবে। তার চেয়ে আমরা আত্মহত্যা করব। এই দুই কৃষক একইসঙ্গে গভীর নলকূপের সামনে কীটনাশক পান করে গত ২৩ মার্চ আত্মহত্যা করেন। এ মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রভাবিত চেষ্টা করেছেন ওখানকার প্রভাবশালী ও পুলিশ প্রশাসন। অবশেষে স্থানীয় জনগণ এবং সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবির প্রেক্ষিতে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। পরে পুলিশ মামলা নিতে বাধ্য হয়।

মেজবাহ কামাল আরও বলেন, ভারতবর্ষ তথা গোটা দেশের পানি ব্যবস্থাপনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নেওয়া দরকার। ভূপৃষ্ঠের পানিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে আনার দাবি করেন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এএইচএইচ/এনএস

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন