উত্তরের ইদযাত্রায় ভোগান্তি বাড়াতে পারে ‘যানজটের ফাঁদ’ নলকা

রানা আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

সিরাজগঞ্জ: উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জ। বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে উত্তরের ১৬ জেলাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমের কয়েকটি জেলায় প্রবেশ করতে পার হতে হয় মহাসড়কের নলকা সেতুও। কিন্তু সেতুটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এটিকে বলা হয় যানজটের ফাঁদ। আর এই ফাঁদ থেকে মুক্তি পেতে এর পাশেই চলছে নতুন সেতু নির্মাণের কাজ। শুধু সেতু নয়, বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে চান্দাইকোনা পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার জুড়ে চলছে সড়ক প্রশস্তের কাজও। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ইদের আগে সেতু খুলে দেওয়া। কিন্তু কাজের গতি দেখে বোঝা যাচ্ছে, তা সম্ভব নাও হতে পারে। তাই উত্তরের ইদযাত্রায় ভোগান্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের আশ্বাস, ইদের আগেই খুলে দেওয়া হবে নতুন নলকা সেতু।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিদিন এই মহাসড়কে চলাচল করছে ২২ জেলার অন্তত ১০ থেকে ১২ হাজার যানবাহন। কিন্তু সড়ক প্রশস্তের কাজ চলমান থাকায় মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় সরু হয়ে গেছে চলাচলের পথ। দুই লেনের যানবাহন চলছে এক লেনে। সংস্কার কাজ শেষ না হলে, ইদযাত্রায় চরম ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন চালক ও যাত্রীরা। যদিও ঈদের আগেই চলাচলের উপযোগী করার আশ্বাস ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্প কর্মকর্তাদের।

ঢাকা-সিরাজগঞ্জ রুটের এসআই এন্টারপ্রাইজের বাসচালক হাফিজুর রহমান বাবু সারাবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমানে মহাসড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। যদি নতুন নলকা সেতু খুলে না দেওয়া হয় এবং মহাসড়কের কাজ শেষ না হয় তাহলে এই রোজার ইদে ঘরমুখো যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হবে।’

ঢাকা থেকে নওগাঁগামী ট্রাকের চালক শহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘নলকা সেতু নিয়ে আমরা অনেক চিন্তিত। মহাসড়কটিতে দীর্ঘ সময় ধরে উন্নয়নকাজ চলমান থাকায় মাঝে মাঝেই যানজট সৃষ্টি হয়। সামনে আসছে ইদ। এ সময় যদি নতুন নলকা সেতু এবং মহাসড়কের কাজ শেষ না হয় তাহলে ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হবে। এতে ভোগান্তিতে পড়বে ইদে বাড়ির দিকে রওনা দেওয়া মানুষগুলো।’

নতুন নলকা সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান মীর আখতার হোসাইন লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. এখলাছ উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আসন্ন ইদ উপলক্ষে মহাসড়কের যানজট ও ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ কমাতে আমরা নতুন সেতুর এক লেন খুলে দেব। এছাড়া ইতোমধ্যে আমরা মহাসড়কের খানাখন্দগুলো সংস্কারে কাজ শুরু করেছি। আশা করছি, ইদে মহাসড়কে ঘরমুখো মানুষদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে না।’

এসব বিষয়ে সওজের সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. দিদারুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইদে ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ কমাতে দ্রুতই নলকা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে। সড়কের খানাখন্দগুলোতে ইট, পাথর ও বিটুমিন দিয়ে সমতল করা হচ্ছে। মহাসড়কের সব লেন খুলে দেওয়ার চেষ্টাও রয়েছে আামদের।’

এদিকে, হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া রিজিয়নের পুলিশ সুপার মুনশী শাহাবুদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইদযাত্রায় মহাসড়কে ভোগান্তি কমাতে কাজ করে যাচ্ছি। তবে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। দুই/চার দিনের মধ্যে আমাদের সিদ্ধান্তের কথা আপনাদের জানাতে পারব।’

মহাসড়ক নিয়ে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম (বিপিএম) সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ কমাতে সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে প্রায় ৪০০ পুলিশ সদস্য কাজ করবে। এছাড়া মোটরসাইকেলে মোবাইল টিমও থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নলকা সেতু ও মহাসড়কের খানাখন্দের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। তারা ২০ রমজানের মধ্যে খানাখন্দ সংস্কার ও নতুন নলকা সেতুর এক লেন খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।’ এবারের ইদযাত্রায় মানুষের দুর্ভোগ ও ভোগান্তি কমবে বলে আশাবাদী প্রশাসনের এই কর্মকর্তা।

হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) কর্মকর্তা লুৎফর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবারের ইদযাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ নলকা সেতুর পাশে নির্মিত নতুন সেতুটি খুলে দেওয়ার জন্য দ্রুতগতিতে কাজ চলছে। আশা করছি ইদের আগেই নতুন সেতু দিয়ে যানবহন চলাচল করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু পশ্চিমপাড় থেকে চান্দাইকোনা পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় খানাখন্দ রয়েছে। সেগুলো দ্রুত মেরামতের জন্য আমরা সওজ-এ চিঠি পাঠিয়েছি। তারা কাজও শুরু করেছে।’

এছাড়া ইদযাত্রায় মহাসড়কে ভোগান্তি কমাতে এক সপ্তাহ আগে থেকে দায়িত্ব পালন করতে ৩০০ পুলিশ সদস্য চেয়ে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান ওসি।

সারাবাংলা/পিটিএম