বিজ্ঞাপন

বিদ্যুৎ বিতরণ হবে ভূগর্ভস্থ ক্যাবলে, ২০২৩-এ কাজ শেষের আশা

April 29, 2022 | 11:19 pm

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: প্রধান সড়ক কিংবা অলি-গলি— যে পথ ধরেই চলুন না কেন, চলতে চলতে চোখে পড়বে গোছা গোছা মোড়ানো তার। রাজধানী ঢাকার যেখানে সেখানে মাথার ওপরে ঝুলতে থাকা তারের মধ্যে কেবল স্যাটেলাইন ক্যাবল, টেলিফোন কিংবা ইন্টারনেটের তারই না, রয়েছে বৈদ্যুতিক তারও। এসব তার কোথাও কোথাও ছিঁড়ে মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়ার দৃশ্যও দেখা যায় অহরহ। ঘটছে দুর্ঘটনাও।

বিজ্ঞাপন

ঝুলন্ত তারে বিদ্যুৎ সরবরাহের এ সনাতন পদ্ধতি থেকে এবার বিতরণ সংস্থাগুলো বেরিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছে। রাজধানীজুড়ে ঝুলে থাকা বিদ্যুতের লাইন এবার নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মাটির নিচে। ভূগর্ভস্থ লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে গ্রিড সাব-স্টেশন থেকে একেবারে গ্রাহক পর্যন্ত। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে কিছুটা পিছিয়ে গেলেও ২০২৩ সাল নাগাদ এ সংক্রান্ত কাজ শেষ করার বিষয়ে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।

বিতরণ কোম্পানিগুলো বলছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে বিদ্যুৎ বিতরণে দীর্ঘ দিনের সনাতন পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আসা যাবে। একইসঙ্গে কমবে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট, টেলিফোন লাইন ও ডিশ লাইনের তার বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে বাড়ি বাড়ি সংযোগ দিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন সংস্থা। এসবের সঙ্গে বিদ্যুতের লাইন মিলিয়ে ঢাকার প্রায় সব রাস্তার পাশে থাকতে দেখা যায় তারের জঞ্জাল। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা এসব তার ছিঁড়ে সমস্যা তৈরি হয় বিভিন্ন সময়ে। কখনো কখনো ঘটায় অগ্নিকাণ্ডের মতো বিপজ্জনক ঘটনা। উচ্চ মাত্রার বিদ্যুৎ পরিবাহী তারের সঙ্গে এসব সেবামূলক সংস্থার তার অপসারণে আদালতের নির্দেশ থাকলেও কেউ তা মানছে না।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, তারের এই জঞ্জাল সরানোর সিদ্ধান্ত হয় প্রথম ২০০৯ সালে। ওই সময় সিদ্ধান্ত হয়, এসব ঝুলন্ত তার মাটির নিচ দিয়ে টেনে সেবা দেওয়া হবে। কিন্তু সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি। এরপর ২০১০ সালে ফের উদ্যোগ নেয় বিদ্যুত বিভাগ। ওই সময় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে সচিবালয়ে বৈঠক করা হলেও সে উদ্যোগ কাজে আসেনি। এরপরও বিদ্যুতের তার মাটির নিচে পাঠানোর একাধিক উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত সেই কাজ শুরু হয়েছে।

সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুতের তার মাটির নিচে পাঠাতে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) এ সংক্রান্ত দুইটি প্রকল্প চলমান। কিন্তু করোনার কারণে কাজ চলে একেবারেই ঢিমেতালে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় অনেকটা জোরেসোরেই কাজ শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। নির্ধারিত রুটে প্রধান সড়কের দুই পাশ দিয়ে চলছে হরাইজন্টাল ড্রিলিং ড্রাইভের মাধ্যমে আন্ডারগ্রাউন্ড হাইভোল্টেজ ক্যাবলিং নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার কাজ।

বিজ্ঞাপন

সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জাহাঙ্গীর গেট থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত কাজ চলছে। সেখানে খুঁটি ও ট্রান্সফরমারের পরিবর্তে বসানো হচ্ছে আধুনিক আরএমইউ বা রিং মেইন ইউনিট, লো-টেনশন ডিস্ট্রিবিউশন বক্স এবং কিয়স্ক ট্রান্সফরমার। ২০টি আরএমইউয়ের জায়গায় ১৩টি এবং ২৪টি এলটিডিবি’র মধ্যে ১০টির ভিত্তি তৈরি শেষ।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, রাজধানীর ভূগর্ভস্থ লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে গ্রিড সাব-স্টেশন থেকে একেবারে গ্রাহক পর্যন্ত। আর কয়েকটি প্যাকেজে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হবে। প্রথম প্যাকেজে ২৯ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ লাইন বসানো হবে গাবতলী থেকে আজিমপুর এবং জাহাঙ্গীর গেট থেকে বঙ্গভবন পর্যন্ত।

ডিপিডিসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উন্নত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। আন্ডারগ্রাউন্ড নেটওয়ার্কিং ইক্যুইপমেন্ট রাস্তার পাশে থাকবে খুবই কম। থাকবে না বৈদ্যুতিক ঝুঁকি। এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে পুরো নেটওয়ার্ক উন্নত হবে, বিদ্যুৎ বিতরণও নিরবিচ্ছিন্ন হবে।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান সারাবাংলাকে বলেন, শুধু বিদ্যুতের তার নয়, আমরা সব ধরনের তার সরিয়ে ফেলব। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে কথা বলছি।

তিনি বলেন, রাস্তার ওপরে কোনো খুঁটি থাকবে না। এ প্রকল্প চলতি বছরেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে কাজে ধীরগতি দেখা দেয়। এখন পরিস্থিতি স্বাবাবিক হওয়ায় পুরোদমে কাজ চলছে। ২০২৩ সালের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এদিকে, নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সম্প্রতি লিখেছেন, ডিপিডিসির তত্ত্বাবধানে আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবলিং নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। স্থাপন করা হচ্ছে অত্যাধুনিক আরএমইউ, লো-টেনশন ডিস্ট্রিবিউশন বক্স এবং কিয়স্ক ট্রান্সফর্মার। পাশাপাশি চলছে স্মার্ট গ্রিড বাস্তবায়নের কাজ। আমরা ঢাকাসহ সবগুলো শহরকে পর্যায়ক্রমে বৈদ্যুতিক খুঁটি, পুরনো ট্রান্সফর্মার ও ঝুলন্ত তার থেকে মুক্ত করব। শতভাগ বিদ্যুতায়নের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবার আমাদের লক্ষ্য একটি আধুনিক ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা।

সারাবাংলা/জেআর/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন