বিজ্ঞাপন

করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত ২৪% স্বাস্থ্যকর্মী ভুগেছেন মানসিক রোগে

May 26, 2022 | 6:33 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমিতদের চিকিৎসায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের ২৩ দশমিক ৫০ শতাংশ পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে (পিটিএসডি) আক্রান্ত হয়েছিলেন। এক গবেষণার ফল বলছে, স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে এই মানসিক রোগে ভুগেছেন করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত ২৪ দশমিক ৩০ শতাংশ চিকিৎসক, ২৩ দশমিক ৫০ শতাংশ টেকনোলজিস্ট এবং ২২ দশমিক ৮০ শতাংশ নার্স।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২৬ মে) রাজধানীর নিপসম মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারিকালে স্বাস্থ্যকর্মীদের  ওপর মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব, কুশলবস্থা ও সংশ্লিষ্ট ফ্যাক্টরগুলো মানিয়ে নেওয়ার কৌশল’ শীর্ষক জাতীয় জরিপের ফলপ্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের অর্থায়নে এই গবেষণা পরিচালনা করে জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম)। অনুষ্ঠানে গবেষক দলের প্রধান নিপসম পরিচালক অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ ফলাফল তুলে ধরেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো আঘাতের কারণে পিটিএসডি হতে পারে। এর লক্ষণের মধ্যে রয়েছে পুরনো কথা মনে পড়া, দুঃস্বপ্ন, গুরুতর উদ্বেগ ও ঘটনা সম্পর্কে নিয়ন্ত্রণহীন চিন্তা।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশে করোনা মহামারির সময় স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের ওপর মানসিক প্রভাব, সংশ্লিষ্ট কারণ ও মোকাবিলার কৌশল শীর্ষক গবেষণাটি ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে পরিচালিত হয়েছে ১ হাজার ৩৯৪ জন স্বাস্থ্যকর্মীর ওপর। তাদের মধ্যে ছিলেন ৫৯৬ জন চিকিৎসক, ৭১৩ জন নার্স এবং ৮৫ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট। যেসব স্বাস্থ্যকর্মী অন্তত এক মাস করোনা রোগীদের সঙ্গে কাজ করেছেন, গবেষণার জন্য তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন জরিপকর্মীরা।

জরিপে দেখা গেছে, নারী স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে পিটিএসডি’র ঝুঁকি ছিল বেশি। যাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে ৬২ দশমিক ৯ শতাংশেরই পিটিএসডি ছিল। তাদের মধে ৮৩ দশমিক ৬ শতাংশ ছিলেন বিবাহিত। স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের কাজের চাপ অনেক বেশি ছিল, তারা ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সামগ্রীর (পিপিই) অপ্রতুলতায় ছিলেন এবং করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে ছিলেন।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই মানসিক চাপে ছিলেন, ক্লান্ত ছিলেন এবং অনেকেরই ঘুমাতে সমস্যা হচ্ছিল। অনেকে তাদের পরিবার ও আত্মীয়দের নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। এতে করে তাদের উত্তেজনা ও উদ্বেগ আরও বেড়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনে একজন অংশগ্রহণকারীর বরাত দিয়ে বলা হয়, সংক্রামক রোগ হওয়ায় রোগীদের মতো আমাদেরও একই ভয় ছিল। অনেক কিছুই আমাদের কাছে ছিল অজানা। হাসপাতালগুলোও এই ধরনের নতুন রোগের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত ছিল না। রোগী, গণমাধ্যম ও গণমানুষসহ সমাজের নেতিবাচক মনোভাবের পাশাপাশি কাজের সময় সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি আমাদের মানসিক চাপকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অনেকেই নিয়মিত প্রার্থনা, টিভি দেখা, বই পড়ার মতো কার্যক্রমে সময় ব্যয় করতেন, যেন পিটিএসডির প্রভাব কম থাকে।

নিপসম পরিচালক অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ বলেন, পিটিএসডি আক্রান্ত স্বাস্থ্যসেবা পেশাদাররা সবার থেকে দূরে সরে থাকতে পারেন বা চাকরি ছেড়ে দিতে পারেন বা তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা থাকতে পারে। এই স্বাস্থ্য সমস্যাটির সমাধান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের করা উচিত। গবেষণায় স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের মানসিক সুস্থতায় কাউন্সেলিং প্রোগ্রামের ব্যবস্থা জোরদার ও প্রবর্তনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

অধ্যাপক বায়জীদ বলেন, পিটিএসডিতে আক্রান্ত স্বাস্থ্যসেবা পেশাদাররা এখন কীভাবে কাজ করছেন, সে সম্পর্কে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। কেননা, গবেষণার তথ্যগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে গত বছর।

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সাইফুল হাসান বাদল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেনসহ অন্যরা।

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন