বিজ্ঞাপন

রাজশাহীতে কোম্পানির মোড়কে চাল বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা

June 7, 2022 | 11:29 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাজশাহী: চালের বাজারে অস্থিরতা নিয়ে বৈঠক করেছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। বৈঠকে চালের বাড়তি দাম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অবৈধ মজুতদারি রোধে অভিযান চালানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে রাজশাহীতে কোনো কোম্পানির মোড়কে চাল বিক্রিতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৭ জুন) বিকেলে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ‘চালের উৎপাদন-বিপণন জোরদারকরণ’ শীর্ষক এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় চালকল মালিক, ব্যবসায়ী, জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় বলা হয়, সরকারকে চুক্তিবদ্ধ চালকল মালিকেরা ৪০ টাকা কেজি মোটা চাল সরবরাহ করছেন। অথচ বাজারে মোটা চালের কেজি ৪০ টাকার বেশি। এরই মধ্যে রাজশাহীতে ৯৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। চাহিদার চেয়ে ধানের উৎপাদনও বেশি।

বৈঠকে প্রথমে চালকল মালিকদের বক্তব্য আহ্বান করা হয়। চালের বাজারে অস্থিরতা নিয়ে তারা বলেন, চিকন চালের দাম বাড়ার কারণে মোটা চালের ওপরে চাপ পড়ছে। এজন্য মোটা চালেরও দাম বাড়ছে। এছাড়া ধানের বাড়তি দাম ও শ্রমিকের বাড়তি মজুরিও চালের বাজারের ওপর প্রভাব ফেলছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান।

বিজ্ঞাপন

রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চালের বাজার নিয়ে বৈঠক

সভায় রাজশাহীর চালকল মালিক ও চাল ব্যবসায়ী জসীম উদ্দিন বলেন, রাজশাহীতে মোটা চালের দাম বাড়তি দেখে তিনি মঙ্গলবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ৪৭ টাকা কেজি দরে মোটা চাল কিনেছেন। তিনি বলেন, ব্যবসায়ী হিসেবে আমার কমিশন আছে। পরিবহন খরচ আছে। এগুলো যোগ করেই আমাকে ৪৮ টাকা কেজি হিসেবে চালটি পাইকারি বিক্রি করতে হবে। খুচরা দোকানে বিক্রি হবে ৫০ টাকা কেজি দরে।

জসীম উদ্দিন বলেন, রাজশাহী অনেক ব্যবসায়ী নওগাঁর সাবাইহাট ও দেলুয়াবাড়ী বাজার থেকে ধান কেনেন। এই বাজারে এখন ধানের দাম ১ হাজার ৫১০ টাকা মণ। এই দামের চাল দিয়ে ৮৪ কেজির এক বস্তা চল তৈরি করতে খরচ পড়ছে ৫ হাজার থেকে ৫ হাজার ১০০ টাকা। কেজি প্রতি উৎপাদন খরচ পড়ছে ৫৮/৫৯ টাকা। এই চাল থেকে মরা চাল, খুদ বাছাই করলে চালের দাম কেজি প্রতি ৬১ টাকা পড়ে যাচ্ছে।

রাজশাহী জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গার ব্যবসায়ীরা চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন। রাজশাহীর মিল মালিকেরা গরিব। তারা দেউলিয়া হওয়ার পথে। ছয় বছর আগে জেলায় ৩৪০টি চালকল ছিল। এখন তাদের সংখ্যা দুইশ’র নিচে নেমে এসেছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যতম চাল উৎপদনকারী দেশ ভিয়েতনামেই মোটা চালের কেজি ৫০ টাকার নিচে নয়। অথচ কালোবাজারির বদনাম হচ্ছে চালকল মালিকদের।

শাহ মখদুম অটো রাইস মিলের প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ১০০ কেজি ধান মাড়াই করলে ৫২ থেকে ৫৮ কেজি চাল পাওয়া যায়। অটোরাইস মিলে ভাঙানোর জন্য এক মণ ধান কিনে পরিষ্কার করলে তা থেকে ৩ কেজি বাদ চলে যায়। চাল থেকে পাথর, খুদ, ছোট চাল ইত্যাদি সাত-আট ধরনের জিনিস বেছে বাদ দিতে হয়। এক মণ ধান থেকে কোনোভাবেই ২২ কেজির বেশি চাল হয় না। বাজার ৮/৯ শ টাকা শ্রমিকের দাম। এসব মিটিয়ে কৃষককেও ধানটা লাভেই বিক্রি করতে হয়। তিনি বলেন, কৃষকেরা এই ধান বেচেই সার-কীটনাশক থেকে শুরু করে সবকিছুই করে।

পরে রাজশাহীর পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন বলেন, তেল মজুতদারেরা বাড়তি দামে তেল বিক্রি করে অবৈধভাবে মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করেছিলেন। আমরা লাখ লাখ লিটার তেল জব্দ করেছি। টিসিবির দরে বিক্রি করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এখন তেলের বাজারটা স্থিতিশীল হয়েছে। প্রয়োজনে চালের ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযান চালিয়ে কোনো চালকল মালিকের গুদামে যদি অবৈধ চালের মজুত পাওয়া যায়, তাহলে সেই চাল বাজারে সরকারি ৪০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হবে।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল সভার সিদ্ধান্ত ঘোষণা দিয়ে বলেন, চালের দাম নিয়ে আমরা চিন্তিত নই। কারণ বাজারে চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে চালের দাম নির্ধারিত হয়। কেউ যেন গুদামে অযাচিত মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে, সে ব্যাপারেই আমরা ব্যবস্থা নেব।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, রাজশাহীতে চাহিদার চেয়ে ২ লাখ ৭৩ হাজার মেট্রিক টন বেশি ধান উৎপাদিত হয়েছে। ১৪৮টি চালকলের সঙ্গে সরকারের চুক্তি হয়েছে। তারা আগামী ৩০ জুনের মধ্যে ১০ হাজার মেট্রিক টন চাল সরবরাহ করবেন। কেউ চাল সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলে এবার আর কালোতালিকা করা হবে না। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাল (বুধবার) থেকেই অভিযান শুরু হবে।

জেলা প্রশাসক বলেন, বিভিন্ন কোম্পানির নামে চাল মোড়কজাত করে কেজিতে চার-পাঁচ টাকা বেশি নিয়ে বিক্রি করা হয়। রাজশাহীতে এটা করা যাবে না। তিনি সবার কাছ থেকে এসব ব্যাপারে সহযোগিতা কামনা করেন।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন