বিজ্ঞাপন

উদ্বোধনের অপেক্ষায় পদ্মা সেতু, চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

June 18, 2022 | 11:32 pm

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

মাওয়া থেকে ফিরে: ২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ঐতিহাসিক রূপ দিতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন রাখা হয়েছে সেতুর দুই অংশেই।

বিজ্ঞাপন

মাওয়া অংশ ঘুরে দেখা গেছে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরেই এখন সকল ব্যস্ততা। প্রায় প্রতিদিনই সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেতু এলাকা পরিদর্শনে যাচ্ছেন। অনুষ্ঠান সফল করতে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যাতে কোনো ধরনের নাশকতা না ঘটে। সার্বক্ষণিক হেলিকপ্টার পাহারা রয়েছে সেতুর উপর।

এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে পদ্মাপাড়ে বইছে উৎসবের আমেজ। ক্ষণে ক্ষণে পরীক্ষা করা হচ্ছে সেতুর বাতি। সেতুর গায়ে চলছে ঘসামাজা। দেখা হচ্ছে বৈদ্যুতিক সংযোগ ঠিক রয়েছে কীনা। সেতুকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা স্থাপনাগুলোর কাজও চলছে পুরোদমে। সেতু চারপাশে নেওয়া হয়েছে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে নির্মাণ হওয়া পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা দিচ্ছেন তারাই। অস্ত্র হাতে টহল দেওয়ার পাশাপাশি সেতুর ওপরে আকাশ থেকেও হেলিকপ্টারে নজর রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক স্পটে থাকছেন গোয়েন্দা বাহিনীর কর্মকর্তারা।

বিজ্ঞাপন

সেতুর উদ্বোধনকে ঘিরে পদ্মার দুইপাড়ে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। মাওয়া অংশে দেখা গেছে, মঞ্চ তৈরির কাজ করা হচ্ছে। মঞ্চ তৈরির কাজে নিয়োজিত কর্মী সোলায়মান শেখ সারাবাংলাকে জানান, অনেকটা সেতুর আদলেই তৈরি করা হবে উদ্বোধনী মঞ্চ, যাতে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে। কয়েক স্তরের নিরাপত্তা শেড থাকবে।

নিরাপত্তা কর্মকর্তা বায়েজিদ আহমেদ জানান, উদ্বোধনের আগে কোনো কাউকে সেতু এরিয়ায় ঢুকতে দেওয়া হবে না। নির্দেশনা অনুযায়ী সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়কে সঙ্গে নিয়ে উদ্বোধনের মূল আয়োজন করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। জমকালো উদ্বোধনকে সফল করতে ১৮টি উপ-কমিটি করে দিয়েছে সেতু বিভাগ। এসব কমিটি প্রায় প্রতিদিনই নিজেদের মধ্যে বৈঠক করছে। আমন্ত্রণ জানানোর জন্য প্রায় ৩ হাজার অতিথির তালিকা তৈরি করা হয়েছে। অতিথিদের নিমন্ত্রণপত্র তৈরির কাজ চলছে বলে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনা অনুযায়ী, সেতুর দুই পাড়েই আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে মাদারীপুরের শিবচরে রাজনৈতিক সমাবেশে অংশ নেবেন।

সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দিন দুই পাড়ে থাকবে অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থা। জরুরি স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য পুনর্বাসন এলাকায় থাকা পাঁচটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ব্যবহার করা হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বিষয়ে শরীয়তপুর এলাকার সংসদ সদস্য ও পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেছেন, এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে স্মরণকালের সেরা উৎসব। একটি গোষ্ঠী পদ্মা সেতু না হওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সততা ও সাহসিকতায় কোনো ষড়যন্ত্রই বাধা হতে পারেনি। নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু উদ্বোধনের অপেক্ষায়। সেতুর উদ্বোধন নিয়েও ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

পদ্মা সেতু পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। দুই স্তর বিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট দিয়ে নির্মিত ট্রাস ব্রিজটির ওপরের স্তরে রয়েছে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরটিতে রয়েছে একটি একক রেলপথ। পদ্মা-ব্রক্ষ্মপুত্র-মেঘনা অববাহিকায় ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮ দশমিক ১০ মিটার প্রস্থ পরিকল্পনায় নির্মিত হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় এই সেতু। এই সেতুর জন্য মোট জমির প্রয়োজন হয়েছে ৯১৮ হেক্টর।

বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ ২০১১ সালে শুরু হয়ে ২০১৩ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কথিত দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ায় বিশ্বব্যাংক ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো। যদিও সে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি বিশ্বব্যাংক।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব পরিকল্পনা ও উদ্যোগে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয় সরকার এবং তা নিজস্ব অর্থায়নে। গুরুত্ব পায় সরকারের সবচেয়ে অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে। টানা চার বছরের নির্মাণকাজ শেষে বাস্তব রূপ পেতে যাচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু।

পদ্মা সেতু ২৫ জুন উদ্বোধন হলেও যানবাহন চলাচলের সুযোগ পাবে ২৬ জুন।

সারাবাংলা/জেআর/এএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন