বিজ্ঞাপন

সন্তানের জন্য কেন মাকেই চাকরি ছাড়তে হয়?

April 22, 2018 | 11:52 am

ফারহানা ইন্দ্রা।।

বিজ্ঞাপন

কেস স্টাডি ১ : ফারিয়া-তারেক দম্পতি মেয়েকে নিয়ে বসুন্ধরা সিটিতে ঘুরতে এসেছেন। কথা বলে জানা গেল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন ফারিয়া। প্রেগন্যানসিতে মাতৃত্বকালীন ছুটি পেয়েছেন, পুনরায় চাকরিতে জয়েন করে কলিগসহ বাকিদের সহায়তাও পেয়েছেন কিন্তু এতসবের পরেও এখন তিনি পুরোপুরি গৃহিনী। একান্নবর্তী পরিবারের শ্বশুর শাশুড়ির কাছে সন্তান রেখে বাইরে অফিস যাওয়া পছন্দ করেননি। ‘সন্তানের চেয়ে কি ক্যারিয়ার বড়’- এই কথার তোড়ে চাকরি ছেড়ে দিলেন তিনি। তারেক জানালেন ফারিয়ার চাকরি করা নিয়ে তার আপত্তি নেই কিন্তু বয়স্ক বাবা মা বুঝতে চাননি। আত্মীয়স্বজনও একই কথা বলছেন।  গৃহশান্তির কথা ভেবে তাই ফারিয়ার চাকরি না করাকেই মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন।

কেস স্টাডি ২ : তানজিমা-ফয়সল দম্পতির সাথে কথা বলে জানা গেল তানজিমা একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে ছিলেন। সেখানে ৯-৫ টার বাইরেও প্রায়ই কাজ করতে হত। অফিস শেষে জ্যাম ঠেলে বাসায় ফেরার পর বাচ্চার দেখাশোনাসহ সংসারের সব কিছুই একা হাতে করতে হতো তানজিমাকে। স্বামী বা পরিবারের অন্য সদস্যরা বাচ্চা কিংবা ঘরের কাজে সেভাবে সহায়তা করতেন না। অফিস ও সংসারের কাজের মাঝে ব্যালেন্স করতে পারছিলেন না বলেই চাকরি ছেড়ে দেন তানজিমা। ফয়সালের সাথে কথা বলে জানা গেলো তিনি ঘরের কাজ কিংবা বাচ্চার দেখাশোনায় সেভাবে আগ্রহী নন। তিনি মনে করেন এসব মেয়েদের কাজ। এসব মেইনটেন করার পর জব করতে চাইলে তিনি তানজিমাকে বাধা দেবেন না, কিন্তু তিনি চান তানজিমা সংসারের কাজকেই প্রাধান্য দিক।

কেস স্টাডি ৩ : রুবি-সাইমুর দম্পতি জানালেন রুবি বিয়ের আগে থেকেই চাকরি করতেন। সাইমুরের সরকারি চাকরি বিধায় পোস্টিং ঢাকার বাইরে। বিয়ের পরেও সমস্যা হচ্ছিলো না। সন্তান আসার পর পরিবারের অন্যদের সাহায্যও পেয়েছেন বেশ। কিন্তু তারপরেও রুবিকে চাকরি ছাড়তে হয়েছে। রুবি জানালেন, সন্তানকে ডে কেয়ারে রেখে অফিস করতেন তিনি। কিন্তু ডে কেয়ারের অব্যবস্থাপনায় বাচ্চা বেশ কয়েকবার অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পরে নির্ভরযোগ্য ও সুবিধাজনক জায়গায় ডে কেয়ার না পাওয়ায় তিনি চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন। অফিসে বাচ্চাদের জন্য ছোট পরিসরে ডে কেয়ার থাকলে হয়তো তাকে চাকরি ছাড়তে হতো না বলে আক্ষেপ করলেন রুবি। সাইমুর জানালেন তার বদলির চাকরি, তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সন্তানের দেখাশোনায় তার অংশীদার হওয়া সম্ভব হয়নি। তাই শেষ পর্যন্ত রুবিকেই ক্যারিয়ার স্যক্রিফাইস করতে হলো।

বিজ্ঞাপন

সন্তান যদিও নারীর একার নয় তারপরেও সন্তানের জন্য নারীকেই সবচেয় বেশি ছাড় দিতে হয় আমাদের দেশে। সন্তান বাবা মায়ের জন্য বিশাল দায়িত্ব এক দায়িত্ব, আনন্দ ও সম্পর্কের নতুন নাম হলে এদেশে সর্বক্ষেত্রে তা নয়। এদেশে অনেক সময়ই সন্তান আসে চারপাশের মানুষের কথা থেকে বাঁচতে, শ্বশুর শ্বাশুড়ির শখ পূরণ করতে, অসম বিয়ে টেকাতে কিংবা কোন পরিকল্পনা ছাড়া অবস্থায়। খুব কম পরিবারই পুরোপুরি দায়িত্বের কথা ভেবে, পরিকল্পনা করে সন্তান নেয়ার কথা চিন্তা করে।

অপরিকল্পিত অবস্থায় সন্তান নেয়ার অনেকগুলো কারণের মাঝে অন্যতম প্রধান কারণ হলো বাবা এবং পরিবারের অন্যান্যদের এই চিন্তাধারা যে, ‘সন্তান মায়ের ডিপার্টমেন্ট। মা ই ভালো বুঝবে অন্যদের চেয়ে। তাকেই সন্তানের সব দায়িত্ব পালন করতে হবে।’ এরই ফলাফল হচ্ছে সন্তান মানেই নারীর বাইরের কাজের সুযোগ সীমিত কিংবা বন্ধ হয়ে যাওয়া। সন্তান আসে দুজনের সম্পর্ক থেকে অথচ এদেশে সন্তান ধারন থেকে সন্তানের বাকি জীবনের দায় দায়িত্ব বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মায়ের উপরই বর্তায়। কেন?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক আবু সালেহ মোহাম্মদ সোয়াদ বলেন, মাতৃত্বকে আমরা খুব বড় করে দেখি যা মায়েদের চাকরি ছাড়ার অন্যতম কারণ। গবেষণা বলে, মাদারহুড তথা মাতৃত্বের মূলত দুটি পার্ট। বায়োলজিক্যাল মাদারহুড এবং সোশ্যাল মাদারহুড। বায়োলজিক্যাল মাদারহুড এতোটাই বেসিক ব্যাপার যে চাইলেও এভয়েড করা যায় না। কিন্তু সোশ্যাল মাদারহুড ব্যাপারটা বায়োলজিক্যাল মাদারহুডের উপর বেজ করে নারীদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয় সমাজের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার কারণে। অথচ বাচ্চার দেখাশোনার কাজ মা ছাড়াও অন্য অনেকেই করতে পারেন। যেমনটি আগের দিনের বাচ্চারা বাড়িতে নানি, দাদি, খালা, ফুপুদের দেখাশোনায় বড় হত। কিন্তু শহরে এখন বেশিরভাগই নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি হওয়ায় বাচ্চার টেক কেয়ার একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কাউকে নিতেই হয়। তখনই সোশ্যাল মাদারহুড মায়ের উপর চেপে বসে যে, বাচ্চার সবকিছুই মায়ের দায়িত্ব। এখানে অনেক ফ্যাক্টর কাজ করে যেগুলোকে মূলত বলা যায় ক্লাসিক পেট্রিয়ার্কি। যেমন পরিবারের অন্য মহিলারা সন্তানের মাকে বলতে থাকেন ‘আমরা করেছি, এইসব মেয়েদেরই দায়িত্ব। আমরা করলে তোমরা করবে না কেন?’ এর সাথে আরেকটা বড় ব্যাপারে হচ্ছে ছেলেদের মেল ইগো। মানে অধিকাংশ পুরুষই ভাবেন ‘আমিতো চাকরি করে আয় করছি, আমাকে কেন এর পাশাপাশি ঘরের কিংবা বাচ্চার কাজ দেখতে হবে’। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে পুরুষতন্ত্রের সুবিধা। অর্থাৎ তেমন কিছু না করেই কিংবা বাচ্চা দেখাশোনার কাজে অংশ না নিয়েও পিতৃত্বের স্বাদ পাওয়া। এর কারণ হলো ছোটবেলা থেকেই একটা মেয়েকে মা হতে শেখানো হয় যা কিনা ছেলেদের ব্যাপারে হয় না। ব্যতিক্রম ছাড়া সবক্ষেত্রেই মেয়ের মাঝেই মাদারহুড গ্রো করানো হয়ে থাকে। এর ফলে ছেলেরা এইসব কাজের সাথে পরিচিত হয় না এবং যখন নিজের বাচ্চা হচ্ছে তখন সে বাড়তি দায়িত্ব নেয় না। ফলে মেয়েটির উপরই মাদারহুডের সবটুকু দায়িত্ব চেপে বসছে। যেহেতু শহরে বেশিরভাগ পরিবারই নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি তাই অন্য কারও সাহায্যও পাওয়া যায় না। ফলে অবধারিতভাবেই সোশ্যাল প্রেসারটা মায়েদের উপরই আসে যে বাচ্চা লালনপালন তাকেই করতে হবে। তখন ক্যারিয়ার হয়ে পড়ে গৌন। ক্যারিয়ার ছেড়ে অনেক মা-ই সন্তানের দেখাশোনার কাজকেই গুরুত্ব দেন।

বিজ্ঞাপন

আবু সালেহ মোহাম্মদ সোয়াদ আরও বলেন, বায়োলজিক্যাল মাদারহুড এক্সটেন্ড করে এমন পর্যায়ে চলে আসে যে ৬ মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটির পরে বাচ্চা যখন বুকের দুধ ছাড়াও অন্য খাবারের উপর নির্ভরশীল হয়, তখনও মাকে সন্তানের কথা ভেবে চাকরি ছাড়তে হয় সোশ্যাল মাদারহুডের কথা ভেবে। অথচ এই সময় থেকে বাবাও বাচ্চার দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করতে পারেন। কিন্তু পুরুষতন্ত্রের সুবিধা অনেকেই ছাড়তে চাননা। কিন্তু বাবা মা দুজন পরিকল্পনা করে সন্তানের লালনপালনের কাজে পরস্পরকে সহায়তা করলে মাকে আর সন্তানের জন্য চাকরি ছাড়তে হয় না। কিন্তু এই সত্য আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ মানতে নারাজ।

ডে কেয়ার সেন্টার নিয়ে তিনি বলেন, সরকারিভাবে যদি আইন করা হয় যে বড় অফিস কিংবা প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলকভাবে ডে কেয়ার থাকতে হবে কিংবা যেসব প্রতিষ্ঠান ডে কেয়ার সুবিধা প্রদান করবে তাদেরকে একটু অতিরিক্ত সুযোগ সুবিধা দেয়া হয় তাহলে অনেকটাই কমে যাবে মায়েদের চাকরি ছাড়ার প্রবণতা।

আমাদের সমাজে “নারী যত পড়ালেখাই করুক না কেন ঘরই হবে তার মূল প্রায়োরিটি”- এই চিন্তাধারা থেকে কেউই বের হতে পারছেন না। তাই নারী যখন বাচ্চা নেওয়ার পরেও চাকরি করতে যায় সেটা অনেকের কাছে রীতিমতো অপরাধের পর্যায়ে পড়ে যায়। এখনো আমাদের একান্নবর্তী কিংবা শ্বশুর শ্বাশুড়ির সাথে থাকেন এমন পরিবারের বেশিরভাগই ধরে নেন যে ছেলের বউ যত চাকরিই করুক ঘরের সব কাজ, সন্তান সামলানো এসব কিছু তাকেই করতে হবে। অনেক শ্বাশুড়িই ভাবেন তিনি যেহেতু দীর্ঘদিন সংসার সামলেছেন তাহলে ছেলের বউ কেন করবে না। অনেক ক্ষেত্রে পুরুষরাও চাননা তার স্ত্রী সন্তান পালনের কাজে সময় না দিয়ে চাকরি করুক। তারা ভাবেন চাকরি কি সংসারের চেয়ে বড়? অথচ সংসারে সবার অংশগ্রহনই হতে পারে এই সমস্যার চমৎকার সমাধান।

বিজ্ঞাপন

ছোট পরিবারের ক্ষেত্রে সমস্যা হয় যদি অফিসে ভালো ডে কেয়ার সেন্টার না থাকে কিংবা স্বামী স্ত্রী দুইজনের কর্মস্থল দুই শহরে হয়। সাধারণত সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে দুজনের একই জায়গায় কর্মস্থল হয় বলে অসুবিধা কম হয়। কিন্তু মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কর্মরতরা বেশ অসুবিধাজনক অবস্থায় থাকেন। তখন সন্তান দেখাশোনার সম্পূর্ণ দায়িত্ব মায়ের উপর এসে পড়ে। এ সমস্যার সমাধান হতে পারে ভাল ডে কেয়ার সেন্টার।

ঢাকা শহরে বেশ অনেকগুলো ডে কেয়ার সেন্টার থাকলেও এদের মান ও পরিবেশ প্রশ্নবিদ্ধ। অনেক ডে কেয়ারের বিরুদ্ধেই মানসম্মত পরিবেশ, ভাল খাবার, প্রশিক্ষিত কর্মীর অভাব থাকার অভিযোগ রয়েছে। অনেক ডে কেয়ার সেন্টারই খুব ছোট জায়গায় যেনতেন ভাবে পরিচালিত হয়। পর্যাপ্ত আলো বাতাসের অভাব, অপরিষ্কার পরিবেশ, সিসি ক্যামেরা না থাকা, অস্বাস্থ্যকর খাবার, চিকিৎসকের অনুপস্থিতি, বাচ্চাদের যথাযথ টেক কেয়ার না করা ইত্যাদি নানা অভিযোগ রয়েছে প্রচলিত ডে কেয়ার সেন্টারগুলোর ব্যাপারে। অনেক ডে কেয়ার সেন্টারের বিরুদ্ধে বাচ্চাদের মারধর করার অভিযোগও পাওয়া যায়।

অল্পকিছু ভালো মানের ডে কেয়ার সেন্টার আছে যেখানে বাচ্চাদের জন্য প্রয়োজনমাফিক সবকিছু পাওয়া যায়। কিন্তু এগুলোর খরচ অস্বাভাবিক রকমের বেশি। উচ্চবিত্ত কিংবা উচ্চ মধ্যবিত্ত ছাড়া বাকিদের পক্ষে যা বহন করা সম্ভব না। ডে কেয়ার সেন্টারের বিকল্প হতে পারে  নির্ভরযোগ্য গৃহকর্মী। কিন্তু প্রশিক্ষিত ও নির্ভরযোগ্য গৃহকর্মী পাওয়াও এখন প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার। ফলে এইসব পারিপার্শ্বিক ও সামাজিক সমস্যার কথা ভেবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সন্তানের দায়িত্ব পালনের জন্য মাকেই চাকরি ছাড়তে হয়।

উন্নত বিশ্বে বেবি সিটিং এর ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। অর্থাৎ উপযুক্ত সম্মানীর বিনিময়ে প্রতিবেশী বা কাছাকাছি বসবাসকারী অন্য মায়েদের কাছে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সন্তানকে রেখে যায়। যেসব মায়েরা ঘরের বাইরে গিয়ে কাজ করেন না তাদের অনেকেই স্বল্পপরিসরে এমন বেবি সিটিং করে থাকেন। এতে দুই পক্ষই লাভবান হয়। বাংলাদেশেও এর প্রচলন শুরু করা যেতে পারে। এতে মায়েরা সন্তানের ব্যাপারে দুশ্চিন্তা না করে নিশ্চিন্তভাবে নিজের চাকরি করতে পারবেন।

আইনজীবী ও নারী অধিকারকর্মী প্রমা ইসরাত বলেন, জেন্ডার শ্রম বিভাজনের ক্ষেত্রে নারী পুরুষের কাজের সুষম বন্টনের সংস্কৃতি আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় গড়ে উঠেনি। তাই সমাজ নির্ধারন করে দেয় যে সন্তান লালন পালনের ক্ষেত্রে মাকেই সবসময় বাচ্চার সাথে থাকতে হবে। আর এজন্যই নারীকেই চাকরি ছাড়তে হয়। আরও একটা অসুবিধা হল অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই ডে কেয়ার সেন্টার নেই। ফলে নারীরা চাইলেও শিশুকে তাদের কর্মস্থলে নিয়ে যেতে পারে না। তাছাড়া বাচ্চাদের নিয়ে বাইরে বের হয়েও মায়েরা না ধরনের প্রতিবন্ধকতার শিকার হন। যেমন অধিকাংশ জায়গায় বেবি ফিডিং কিংবা বাচ্চাদের ডায়পার পাল্টানোর কোন ব্যবস্থা নেই। এই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হওয়া দরকার।

এতো সব অসুবিধার মাঝেও কেউ কেউ আছেন যারা অফিস, সন্তান, সংসার সবকিছু সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছেন। ফারজানা-সিদ্দীক দম্পতি তাদেরই একটি উদাহরণ। দুইজনই পেশাগত জীবনে প্রতিষ্ঠিত। সম্প্রতি তাদের ঘর আলো করে কন্যা সন্তান এসেছে। তাদের কাছে জিজ্ঞাসা ছিলো সিঙ্গেল ফ্যামিলি হয়েও কিভাবে সবকিছু মেইনটেন করছেন?

ফারজানা জানালেন দুজনেরই শিফটিং ডিউটি থাকায় দিনের সময় ভাগ করে তারা অফিস করেন। একজনের অফিসের সময় অন্যজন বাচ্চার যাবতীয় দায়িত্ব পালন করেন। অস্থায়ী গৃহকর্মী সুবিধাজনক সময়ে এসে ক্লিনিং এর কাজ করে যান। ফারজানার মা নেই, শ্বশুরবাড়ির কারও পক্ষে এসেও থাকা সম্ভব না। তাই নিজেরাই একজন আরেকজনের সাহয্যকারী হিসেবে কাজ করছেন, দায়িত্ব ভাগ করে নিয়ে সংসার ও পেশা দুটোই ঠিক রাখছেন। এক্ষেত্রে দুইজনের অফিসও যথেষ্ট সাপোর্টিভ আচরন করছে। সিদ্দিক জানালেন, সংসারের সব কাজ ভাগ করে করছেন বলে সমস্যা হচ্ছে না। বাচ্চার যাবতীয় কাজও তিনি শিখে নিয়েছেন। ফলে মায়ের অনুপস্থিতির সময়েও মেয়ের সমস্যা হচ্ছে না। তারা দুজনই জানান যে, একই পেশা, কর্মস্থল বাসার কাছাকাছি হওয়া এবং অফিস টাইম ফ্লেক্সিবল থাকা তাদের জন্য প্লাস পয়েন্ট হিসেবে কাজ করছে।

সন্তান বাবা মা দুজনেরই দায়িত্ব। প্রতিটি মা-ই সন্তানের এই দায়িত্ব খুবই উপভোগ করেন। কিন্তু সেই দায়িত্ব যখন একা মায়ের উপর চলে আসে তখন সেটাই একসময় মায়েদের হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ একটা নির্দিষ্ট সময় পরে সন্তান যখন স্বাবলম্বী হয়ে উঠে, বাইরে নিজের জগৎ তৈরি হয় তখন ক্যারিয়ার বিসর্জন দেয়া মায়ের আর কিছু করার থাকে না। বয়স না থাকার কারণে তখন নতুন করে ক্যারিয়ার শুরু করার সুযোগও থাকে না। যথেষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা ও  অফুরন্ত সময় কাজে লাগাতে না পেরে অনেক মা-ই মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েন, আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভোগেন। অথচ সঠিক সময়ে সকলের সহযোগিতা পেলে মাকে চাকরি ছাড়তে হয়না। বাবার পাশাপাশি মায়েরও একটা পরিচয় গড়ে উঠে। হাউজওয়াইফ পরিচয়ের বাইরেও মায়ের অন্য পরিচয়ে সন্তান গর্বিত হয়ে পারে।

 

অলঙ্করণ- আবু হাসান

 

সারাবাংলা/এসএস

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন