বিজ্ঞাপন

নির্বাচন নয়, আন্দোলনই একমাত্র পথ: ফখরুল

August 20, 2022 | 4:44 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ‘এখন আর কোনো নির্বাচন নয়, আন্দোলনই একমাত্র পথ’—এমনটিই মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২০ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বিদ্যুতের লোডশেডিং, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, ভোলায় পুলিশের গুলিতে ছাত্র দলের নূরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুর রহিম হত্যার প্রতিবাদ ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ‘ইউনির্ভাসিটি টিচার্স এসোসিয়েশনের (ইউট্যাব)’ এ মানববন্ধন আয়োজন করে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের সবকিছুর সংকটের মূলে একটাই যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। আওয়ামী লীগ জোর করে, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। এখন আমাদের পবিত্র দায়িত্ব আন্দোলন, আন্দোলন, আন্দোলন। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে, জনগনকে রাজপথে নিয়ে এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমরা খুব স্পষ্ট করে বলছি, এখন আর কোনো নির্বাচনের কথা নয়, এখন আর কোনো ঘুম পাড়ানির কথা নয়। এখন একটা মাত্র দাবি— এ সরকার কবে যাবে?’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘সবার আগে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আমাদের ৩৫ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা আছে, সেই মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আমরা খুব পরিষ্কার করে বলেছি, এই সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল পার্লামেন্ট ও জনগণের সরকার গঠন করতে হবে।’

শিক্ষকদের জাগ্রত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজকে আপনাদের দায়িত্ব সমস্ত বুদ্ধিজীবী মানুষকে, সকল সচেতন মানুষকে জাগ্রত করা এবং তরুণ যুবক শ্রেণিকে জাগ্রত করা যারা এই লড়াইয়ে অংশ নেবে এবং জয়ী হবে।’

তিনি বলেন, ‘শিক্ষা ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধবংস করে ফেলেছে এই সরকার, একেবারেই ধবংস, উচ্চ শিক্ষাকে আরও ধবংস করে ফেলেছে। এমন এমন ভাইস চ্যান্সলর নিয়ে আসেন যে… এই সমস্ত মানুষকে দিয়ে, দলবাজ, চাটুকার লোকজনকে দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধবংস করা হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

‘প্রত্যেক দিন ছাত্র-ছাত্রীরা আন্দোলন করছে। এই শিক্ষা ব্যবস্থা ধবংস করে ফেলেছে, আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধবংস করে ফেলেছে। আজকে আবার আমাদের সেই জায়গা নিয়ে আসতে হবে, আমাদের অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠা করতে, একটা মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাংলাদেশকে আবার আগের জায়গা ফেরত আনা, গণতন্ত্রের জায়গায় নিয়ে আসা, মানুষের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করবার জায়গায় নিয়ে আসা, যেখানে মুক্ত সমাজ থাকে, সবাই যেন কথা বলতে পারে, তার মতামত প্রকাশ করতে পারে’— বলেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘একদিকে সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে এই সরকারের বিভিন্ন রকমের নিবর্তনমূলক সিদ্ধান্তের কারণে এবং তাদের পেটে যখন আঘাত করতে শুরু করেছে অর্থাৎ চাল-ডাল-তেল-সবজির দাম এমন পর্যায় গেছে যে পর্যায় সাধারণ মানুষের পক্ষে জীবন ধারণই অত্যন্ত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে করুণ অবস্থার মধ্যে আছে যারা নিম্নবিত্ত মানুষ, যারা নামতে পারে না, প্রতিবাদ করতে পারেন, তাদের অভাবের কথা মানুষকে জানাতেও পারে না তারা।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে লুটেরা এলিট শ্রেণি ভালো আছে। এই লুটেরা এলিট শ্রেণি কারা? এই শ্রেণি হচ্ছে আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদেরা, তাদের মন্ত্রী, তাদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। আমলা কিছু আছেন যারা প্রতিদিন দেখবেন বিভিন্ন প্রজেক্ট তৈরি করছেন কীভাবে তাদের আরও বিত্ত সম্পদ তৈরি হবে, কানাডায় বেগমপাড়ায় তাদের বাড়ি তৈরি হবে। আর আছেন আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু উচ্ছিষ্টভোগী শিক্ষক, কিছু বুদ্ধিজীবী। তারা যখন টক শোতে কথা বলেন তখন মনে হয় মোমেন সাহেব (পররাষ্ট্র মন্ত্রী) বলেছেন, বেহেশতে আছি- এটা অমূলক কোনো কথা নয়। তারা প্রমাণ করতে চান আসলেও মানুষ বেহেশতে আছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘এক কথায় বলা যায় এই সরকার একটা লুটেরা সরকার, এই সরকারের সঙ্গে মানুষের কোনো সম্পর্ক নেই। এই সরকার রাষ্ট্রকে ইতিমধ্যে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যখন বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে এবং নিজেদের স্বাধীন বলে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করে তখন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন যে, ভারত সরকার সাহায্য করবেন শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখার জন্য। অর্থাৎ তারা একথা বলতে চান যে, ভারত সরকারের আনুকুল্যে এই সরকার টিকে আছে। আমি কালকেও প্রশ্ন করেছিলাম এটা ব্যাখ্যা আমরা জানতে চাই।’

‘পররাষ্ট্র মন্ত্রী কিন্তু তার জায়গা থেকে সরে আসেননি। তিনি আবারও ওটাই এনসিউর করেছেন। সুতরাং আমাকে বুঝে নিতে হবে, বলতে হবে পরিষ্কার ভাষায় যে, যারা অন্যের আনুকূল্যে টিকে থাকে তাদেরকে এই দেশ শাসন করবার অধিকার নেই, তাদের সরকারে থাকার কোনো অধিকার নেই’— বলেন মির্জা ফখরুল।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের বিবৃতিতে সরকারের ‘মাথা খারাপ’ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একথা প্রমাণ হয়েছে যে, বাংলাদেশ একটা কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে, স্বৈরাচারী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের বড় অপরাধ তারা দেশের আত্মাকে ধবংস করে দিয়েছে। আমাদের আশা ছিল গণতান্ত্রিক আত্মা, আমাদের আশা ছিল একটা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, মুক্ত বাংলাদেশ, মুক্ত সমাজ। সেটকে তারা ধবংস করে দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট এমন একটা আইন, যে আইনের মাধ্যমে কারও কিছু লেখার সাহস থাকবে না। সরকারকে সেন্সর করতে হয় না। প্রত্যেকটা মিডিয়া হাউজে একজন করে দায়িত্বপ্রাপ্ত গোয়েন্দা আছে, যে গোয়েন্দা টেলিফোন করে বলে, নিউজটা এরকম গেল কেন? টক শোতে কে আসবে না আসবে সব কিছু তারা নির্ধারণ করে দেয়। এদেশ কি আপনারা বলবেন স্বাধীন দেশ? এখানে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে এই অবৈধ সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এটা কোনো দিন গণতান্ত্রিক দেশ হতে পারে না।’

ইউট্যাবের সভাপতি অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লুতফর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল আহসান, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডী, অধ্যাপক আবুল হাশেম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাসুদুল হাসান মুক্তা, অধ্যাপক মামুনুর রশীদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শের মাহমুদ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক সৈকত, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জাহাঙ্গীর সরকার, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মামুন উর রশীদ, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের পারভেজ রেজা কাকন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কাদের গনি চৌধুরী, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের মাহবুব আলম প্রমুখ।

সারাবাংলা/এজেড/এনএস

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন