বিজ্ঞাপন

‘রাজাকার হিল-রাজাকারের বাড়ি’ ফের ‘গুডস হিল-সাকার বাড়ি’

October 30, 2022 | 4:41 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: যুদ্ধাপরাধী ফজলুল কাদের চৌধুরী ও তার সন্তান সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর চট্টগ্রাম শহরের বাড়ির দেয়ালে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের লিখে দেওয়া ‘রাজাকারের বাড়ি’ কালো রঙ দিয়ে মুছে দেওয়া হয়েছে। সেই বাড়িটি যে পাহাড়ে, সেই গুডস হিলকে ‘রাজাকার হিল’ লিখে টানিয়ে দেওয়া হয়েছে ব্যানারও নামিয়ে ফেলা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা বলেছেন, শনিবার (২৯ অক্টোবর) ঘেরাও কর্মসূচি শেষ করে তারা চলে যাবার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ব্যানারটি নামিয়ে ফেলা হয় ও ‘রাজাকারের বাড়ি’ লেখা মুছে ফেলা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পাকিস্তানপন্থী রাজনীতির ভাবাদর্শের দোসররা এ কাজ করেছে বলে তাদের অভিযোগ।

জানতে চাইলে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা গুডস হিলের প্রধান ফটকের সামনে প্রায় চার ঘণ্টাব্যাপী সমাবেশ করি। সমাবেশ শেষ করে আমরা যার যার মতো ফিরে যাই। বিকেলে গুডস হিলের সামনে দিয়ে চেরাগির মোড়ে যাবার পথে দেখি, লেখাটি কালো কালিতে মুছে দেওয়া হয়েছে। ব্যানারটিও নামিয়ে ফেলা হয়েছে।’

গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী যুদ্ধাপরাধীদের ‘শহিদ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। বক্তব্যে তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘ক্ষমতা ছাড়ার পর একা বাড়ি ফিরতে পারবেন না। সকল শহিদদের কবরে গিয়ে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হবে।’ তিনি ‘নারায়ে তাকবীর’ স্লোগান দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন, যে স্লোগান বিএনপি দলীয়ভাবে ব্যবহার করে না।

বিজ্ঞাপন

হুম্মামের এই হুঙ্কার নিয়ে প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে চট্টগ্রাম। তাকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য সাতদিনের সময় বেঁধে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড গুডস হিল ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেন, পাহাড়ের ওপর যে বাড়িটিকে ১৯৭১ সালে তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতা যুদ্ধাপরাধী ফজলুল কাদের (ফকা) চৌধুরীর নির্দেশে ‘টর্চার ক্যাম্প বানানো হয়েছে। ফকাপুত্র সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ রাজাকার-আলবদররা পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মিলে বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং নিরস্ত্র বাঙালিদের ধরে ওই টর্চার ক্যাম্পে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করতো। সাকা চৌধুরীর মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় ওই টর্চার ক্যাম্পে নির্যাতিত কয়েকজন সাক্ষ্য দেন।

এদিকে হুম্মাম কাদের চৌধুরী ক্ষমা না চাওয়ায় শনিবার (২৯ অক্টোবর) সকাল থেকে নগরীর জামালখানে ‘গুডস হিলের’ মূল প্রবেশপথ অবরুদ্ধ করে সমাবেশ করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড। সমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য দেন। সমাবেশ থেকে হুম্মামকে চট্টগ্রামে অবাঞ্চিত ঘোষণাসহ পাঁচ দফা দাবি দেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

সমাবেশ চলাকালেই একদল মুক্তিযোদ্ধার সন্তান গুডস হিলের প্রবেশপথের দেয়ালে লিখে দেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর নির্যাতন কেন্দ্র, রাজাকারের বাড়ি’। একইসঙ্গে গাছে টানিয়ে দেওয়া হয়, ‘রাজাকার হিল’ লেখা ব্যানার।

এসব লেখা কালো রঙে মুছে ফেলা এবং ব্যানার খুলের ফেলা নিয়ে আবারও কর্মসূচি দেওয়ার কথা ভাবছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড।

সংগঠনের চট্টগ্রাম মহানগরের আহবায়ক শাহেদ মুরাদ সাকু সারাবাংলাকে বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের অনুসারীরা বর্তমানে যে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত তাদের কেউ কিংবা তাদের পরিবারের কেউ এই ধৃষ্ঠতা দেখিয়েছে বলে আমরা মনে করি। এর মধ্য দিয়ে রাজাকার-আলবদররা সরাসরি মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের চ্যালেঞ্জ করলো। শুধু আমরা নয়, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সকল শক্তিকেও চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দিয়েছে বলে আমরা মনে করি। আমরা আবার বৈঠকে বসব। সেখানে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী কর্মসুচি দেওয়া হবে।’

আরও পড়ুন: গুডস হিল ‘রাজাকার হিল’, সাকার বাড়ি ‘রাজাকারের বাড়ি’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরডি/ইআ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন