বিজ্ঞাপন

বিশ্বকাপের দল পরিচিতি: ওয়েলস

November 12, 2022 | 3:43 pm

মো. সাইফুল আলম তালুকদার

২০ হাজার ৭৭৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তন এবং ৩১ লাখ জনবসতির ওয়েলস এবারের বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছে নিজেদের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো। শেষ বার ১৯৫৮ সালের পর দীর্ঘ ৬৪ বছরের অপেক্ষা। ২০২২ সালে আবারও সুযোগ পেয়েছে বিশ্বকাপে। খেলবে গ্রুপ ‘বি’ থেকে।

বিজ্ঞাপন

১৯৫৮ সালের প্রথম বিশ্বকাপে ওয়েলস ৫টি ম্যাচ খেলে, ১টিতে জয়, ৩টিতে ড্র এবং ১টিতে পরাজিত হয়। কোয়ার্টার ফাইনালে সেই বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল তাদেরকে হারায় পেলের দেওয়া মাত্র ১-০ গোলের ব্যবধানে।‌‌

গত ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে কোয়ালিফাই করার পর কার্ডিফ ক্যাসেল থেকে ক্যারলিওন রোমান বাথ পর্যন্ত প্রত্যেক খেলোয়াড়ের নামে মনোলিথ বা প্রস্তরখন্ড স্থাপন করা হয়েছিল। ২০১৬ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের মতো এবারের বিশ্বকাপেও যদি সেমিফাইনাল বা তার কাছাকাছি যেতে পারে তাহলে বোধহয় এবার প্রত্যেক খেলোয়াড়ের মূর্তি পুরো ওয়েলস জুড়ে দেখা যেতে পারে!

ওয়েলস যেভাবে এবারের বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করল—

বিজ্ঞাপন

বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের প্রথম যাত্রায় বেলজিয়ামের পিছনে থেকে এবং চেক প্রজাতন্ত্র, এস্টোনিয়া ও বেলারুশকে পেছনে ফেলে গ্রুপ ‘ই’ থেকে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছিল। বেলজিয়াম তাদের চেয়ে ৫ পয়েন্টে এগিয়েছিল আর তৃতীয় স্থানে থাকা চেক প্রজাতন্ত্র তাদের চেয়ে মাত্র ১ পয়েন্টে পিছিয়েছিল। পরবর্তীতে দুই পর্বের প্লে অফে তারা অস্ট্রিয়াকে হারায় ২-১ গোলে এবং ইউক্রেনকে হারায়‌ ১-০ গোলে। গ্রুপ পর্ব এবং প্লে অফ মিলিয়ে বাছাই পর্বে তাদের খেলতে হয় মোট ১০টি ম্যাচ। যেখানে তাদের জয় ছিল ৬টিতে, ড্র করে ৩টিতে আর ১টি মাত্র ম্যাচে পরাজিত হয়েছিল বেলজিয়ামের কাছে। তারা গোল করেছিল ১৭টি এবং গোল হজম করেছিল ১০টি।

বিশ্বকাপের গ্রুপ সঙ্গী ও সময়সূচি—

তারা তাদের প্রথম ম্যাচ খেলবে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ২২শে নভেম্বর, দ্বিতীয় ম্যাচ ইরানের বিরুদ্ধে ২৫ নভেম্বর এবং শেষ ম্যাচটি খেলবে শক্তিশালী ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে নভেম্বরের ৩০ তারিখে। ‌

বিজ্ঞাপন

কোচ রব পেজ—

মাত্র ৪৮ বছরের পেজ ওয়েলস জাতীয় দলের দায়িত্ব নিয়েছেন ২০২০ সালে। সাবেক এই ডিফেন্ডার ওয়েলস জাতীয় দলে খেলেছেন ৪১টি ম্যাচ এবং এর পাশাপাশি ইংল্যান্ডে ৪৭৫টি ক্লাব ম্যাচ খেলেছেন। ক্লাব ফুটবলে তিনি শেফিল্ড ইউনাইটেডের হয়ে ২০০৩ সালে এফএ কাপ এবং লিগ কাপের সেমিফাইনালে খেলেন। জাতীয় দলে তিনি ২০০৫ সালে হাঙ্গেরির বিপক্ষে ২-০ গোলে ম্যাচে জয় পাওয়া ম্যাচটিতে অধিনায়কত্ব করেন।

দক্ষিণ ওয়েলসের রোন্ডদা উপত্যকার ‘টাইলরসটাউন’ নামক একটি পুরাতন খনি সমৃদ্ধ গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। যেখানে ১৯৫৮ সালের কোয়ার্টার ফাইনালে উত্তীর্ণ দলের সদস্য জিমি মারফিও জন্মগ্রহণ করেন।‌ পেজ তার ছেলেবেলার কথা স্মরণ করে বলেছেন, ‘আমরা ফুটবল খেলায় এতই মত্ত থাকতাম যে রাত ৯টার সময়ও রাস্তায় খেলতে থাকতাম যতক্ষণ পর্যন্ত মা রাতের খাবারের জন্য না ডাকতেন।’

তিনি ওয়েলস অনূর্ধ্ব-২১ দলের সঙ্গেও কাজ করেন এবং পরবর্তীতে রায়ান গিগসের সহকারী হিসেবে ২০১৯’র আগস্ট মাসে জাতীয় দলের সঙ্গে যুক্ত হন। গিগস বিদায়ের পর তিনি চার বছরের চুক্তিতে ওয়েলস দলের কোচ হন। রোন্ডদা উপত্যকা থেকে উঠে আসা এই কোচ দলের খেলোয়াড়, কর্মী সবার কাছেই বেশ সম্মানিত এবং অনুপ্রেরণামূলক নেতা হিসেবে কাজ করছেন। তার অধীনে ওয়েলস ২৮টি ম্যাচের ভেতরে ১০টিতে জয়, ৯টিতে ড্র আর ৯টিতে পরাজিত হয়েছে। পরাজয়ের হার অনেক বেশি কারণ সর্বশেষ নেশনস লিগে ৬টি ম্যাচের ৫টিতেই হেরেছে তারা পোল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস এবং বেলজিয়ামের কাছে।

বিজ্ঞাপন

যে ফর্মেশনে খেলবে ওয়েলস—

অক্টোবর ২০০১ থেকে ওয়েলস ৩-৫-২ পদ্ধতি অনুসরণ করে আসছে, যেটা ভেঙে তারা অনেক সময় ৩-৪-৩ বা ৪-২-৩-১ পদ্ধতিও ব্যবহার করে থাকে।‌‌ অর্থাৎ তিনজন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারের সাথে দুইজন ফুলব্যাক ডিফেন্সকে দুর্ভেদ্য রাখতে সহায়তা করে।

অনেক সময় তিনি ৫-২-২-১ পদ্ধতিতেও দলকে খেলান। যে পদ্ধতি তিনি বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বের শেষ প্লে অফ ম্যাচ ইউক্রেনের সঙ্গে ব্যবহার করেছেন। অর্থাৎ দলকে তিনি বিপক্ষ দলের শক্তিমত্তা অনুযায়ী ডিফেন্সিভ বা আক্রমণাত্মক দুই পন্থাতেই খেলানোর জন্য তৈরি রেখেছেন।

৪-৩-৩ পদ্ধতি তিনি পেপ গার্দিওলার ২০১৮-১২ সালের বার্সেলোনা দলের খেলা অনুসরণ করে গ্রহণ করেছেন। এই পদ্ধতিতে দুই উইঙ্গার মাঠের টাচ লাইন বরাবর অবস্থান করেন, যাতে করে তারা বিপক্ষের মার্কারকে এড়িয়ে দ্রুত আক্রমণ রচনা করতে পারেন।

পেজ মূলত তার দলে তিনজন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার রেখে দল সাজান। যেখানে ফাবিয়ান অ্যালেন এবং অ্যারন রামসের মতো দুজন সৃষ্টিশীল এবং পরিশ্রমী মিডফিল্ডারকে প্রতি ম্যাচে ১২ কি.মি দৌড়াতে হয়। অন্যদিকে ফরোয়ার্ড লাইনে গ্যারেথ বেল এবং ড্যান জেমস ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকবেন যারা প্রতি আক্রমণ থেকে আক্রমণের জন্য‌ অপেক্ষা করবেন।‌

দলের শক্তিমত্তা ও দুর্বলতা—

ওয়েলসের গোলরক্ষক এবং ডিফেন্স পজিশনে তেমন বিশ্বসেরা খেলোয়াড় নেই। এদের মধ্যে টটেনহামের লেফটব্যাক বেন ডেভিস ব্যতিক্রম। তাদের দুই সেরা খেলোয়াড় গ্যারেথ বেল এবং জো‌ অ্যালেন ইনজুরির সমস্যায় ভুগছেন। ৩৩ বছর বয়সী রাইটব্যাক ক্রিস গুন্টার ও মিডফিল্ডার জনি উইলিয়ামস ইউরো-২০১৬’তে দলকে সেমিফাইনালে তুললেও তারা বর্তমানে ইংল্যান্ডের চতুর্থ ডিভিশনে খেলছেন। দলের আরেকটি সমস্যা হচ্ছে তাদের তেমন কোনো ভালো ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার নেই।

মধ্যমাঠ বেশ শক্তিশালী যেখানে দলের মূল ভরসা হচ্ছেন অ্যারন রামসে। তবে বাকি বদলি খেলোয়াড়রা তেমন শক্তিশালী নয়। দলের আরেকটি শক্তিশালী জায়গা হলো তাদের উইংব্যাক এবং উইঙ্গাররা। আর স্ট্রাইকিং পজিশনে সবে ধন নীলমণি গ্যারেথ‌‌ বেল। যার আর আগের সেই ধার নেই, তবে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে সব সময় তিনি ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলেন।

বিশ্বকাপে তাদের সম্ভাবনা—

বিশ্বকাপ জেতার বাজির দর: ১০০/১! র‍্যাংকিং অনুযায়ী ওয়েলস গ্রুপ ‘বি’র তৃতীয় সেরা হলেও সত্যিকার অর্থে তাদের গ্রুপে ইংল্যান্ডের পরে দ্বিতীয় হয়ে পরবর্তী রাউন্ডে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এর কারণ প্রধানত দুটি একটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় অধিকাংশ খেলোয়াড়ই ইনজুরিতে ছিল এবং ফিটনেস সমস্যা নিয়ে লড়াই করছে। অন্যদিকে ওয়েলসের একটি উদ্দীপনা মূলক দিক হচ্ছে তারা প্রতিটি বড় প্রতিযোগিতায় বেশ ভালো খেলে। যার উদাহরণ হচ্ছে ২০১৬ ইউরোতে প্রথমবারের মতো খেলতে এসেই সেমিফাইনাল পর্যন্ত চলে গিয়েছিল। তবে গ্যারেথ বেল, জো‌ অ্যালেন ও অ্যারন রামসেরা ফর্মের তুঙ্গে নেই এবং সেই সঙ্গে তাদের সবারই বয়স ৩০ বছর ছাড়িয়ে গেছে আরও কয়েক বছর আগে।

তারা শেষ ১১টি ম্যাচে ১৪টি গোল হজম করেছে এবং সর্বশেষ ১০টি ম্যাচে মাত্র ২টি ম্যাচে জয়লাভ করেছে। তবে এসব চিন্তা তারা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারে কারণ ইউরোপিয়ান নেশনস লিগে তারা শক্তিশালী বেলজিয়াম এবং নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে ৪টি ম্যাচের ৩টিতে ন্যূনতম ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে।

ম্যাচে জয় পেতে, ওরা সেন্ট্রাল ডিফেন্সে তিনজন ডিফেন্ডার নিয়ে খেলবে সঙ্গে থাকবে দুইজন উইংব্যাক কনর রবার্টস এবং নিকো উইলিয়ামস, যারা আক্রমণে গ্যারেথ‌‌ বেলের সঙ্গে যোগ দিবেন।

বিশ্বকাপ স্কোয়াডে কারা কারা সুযোগ পেয়েছেন—

ওয়েলসের বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করা হয়েছে কয়লা খনির জন্য পরিচিত টাইলরসটাউন থেকে, যা খেটে খাওয়া মানুষের শহর বলে পরিচিত। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র দলের বিশ্বকাপ স্কোয়াড ঘোষণা করা হয়েছে আম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং থেকে লাল-নীল বাতির ঝলকানির মধ্যে।

রব পেজ হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে আক্রান্ত জো অ্যালেনকে দলে রেখেছেন। যিনি প্রায় গত দুই মাস প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল থেকে দূরে রয়েছেন। দলের মূল তারকা গ্যারেথ বেলের ফিটনেস নিয়েও রয়েছে শঙ্কা। বেল গত জুন মাসে মেজর লিগ সকারে যোগদান করার পর থেকে কোনো ম্যাচেই পুরো ৯০ মিনিট খেলতে পারেনি। তাই বিশ্বকাপে ৯ দিনের ব্যবধানে তিনটি ম্যাচ কতটুকু ভালো খেলতে পারবে সেটা নিয়েই কোচের চিন্তার অন্ত নেই।

ডিফেন্ডার টম লকিয়ার আরেক ইনজুরড ডিফেন্ডার রিস নরিংটন ডেভিসের পরিবর্তে সেপ্টেম্বর ২০২১-এর পর আবার জাতীয় দলের সুযোগ পেয়েছে।

ওয়েলসের বিশ্বকাপের ২৬ জনের স্কোয়াড—

গোলরক্ষক: ওয়েন হেনেসি (নটিংহাম ফরেস্ট), ড্যানি ওয়ার্ড (লেস্টার সিটি), অ্যাডাম ডেভিস (শেফিল্ড ইউনাইটেড)।

রাইটব্যাক: ক্রিস গুন্টার (এএফসি উইম্বলডন), কনর রবার্টস (বার্নলি)।

সেন্টারব্যাক: ইথান আমপাদু (স্পেজিয়া), জো রোডন (স্টেড রেনে), ক্রিস মেফাম (বোর্নমাউথ), টম লকিয়ার (লুটন টাউন), বেন কাবাঙ্গো (সোয়ানসি সিটি)।

লেফটব্যাক: বেন ডেভিস (টটেনহ্যাম), নেকো উইলিয়ামস (নটিংহাম ফরেস্ট)।

মিডফিল্ডার: জো মরেল (পোর্টসমাউথ), জো অ্যালেন (সোয়ানসি সিটি), অ্যারন রামসে (নিস), জনি উইলিয়ামস (সুইন্ডন টাউন), ম্যাথু স্মিথ (মিল্টন কেইনস), ডিলান লেভিট (ডান্ডি ইউনাইটেড)।

উইঙ্গার: হ্যারি উইলসন (ফুলহাম), রুবিন কলউইল (কার্ডিফ সিটি), সোর্বা টমাস (হাডার্সফিল্ড টাউন),

স্ট্রাইকার: গ্যারেথ বেল (লস অ্যাঞ্জেলেস এফসি), কিফার মুর (বোর্নমাউথ), ব্রেনান জনসন (নটিংহাম ফরেস্ট), ড্যান জেমস (ফুলহাম) এবং মার্ক হ্যারিস (পোর্ট ভ্যাল)

বিশ্বকাপের সম্ভাব্য একাদশ—

গোলরক্ষক: ওয়েন হেনেসি

রাইট-ব্যাক: কনর রবার্টস

সেন্টার-ব্যাক: ইথান আমপাদু, জো রোডন, ক্রিস মেফাম

লেফট-ব্যাক: বেন ডেভিস

মিডফিল্ডার: জো অ্যালেন, হ্যারি উইলসন, অ্যারন রামসে

স্ট্রাইকার: গ্যারেথ বেল এবং কিফার মুর।

যাদের দিকে চোখ রাখতে হবে—

গ্যারেথ বেল: তার সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। ৩৩ বছর বয়সী বেল এই মুহূর্তে ক্লাব দলে যেরকম ফর্মেই থাকুক না কেন, জাতীয় দলে তিনি নিশ্চয়ই শেষবারের মতো তার সেরাটা দিতে চাইবেন। জাতীয় দলের হয়ে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৪০টি গোল করেছেন। আর সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলায় ক্রিস গুন্টার তার চেয়ে মাত্র একটি ম্যাচে এগিয়ে আছে। বিশ্বকাপে জাতীয় দলের হয়ে দুটো রেকর্ডই নিজের করে নিতে চাইবেন, আর এটা করতে পারলে দলের দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার পথটাও কিছুটা সুগম হবে।

বেন ডেভিস: ইউরো-২০১৬ টুর্নামেন্টে সেমিফাইনালে যাওয়ার পথে প্রথম ম্যাচেই স্লোভাকিয়ার মারেক হামসিকের একটি গোল তিনি রক্ষা করেছিলেন গোল লাইন থেকে। সেই থেকে টটেনহামের এই ডিফেন্ডার ক্রমশ নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। তিনি জাতীয় দলে সেন্ট্রাল ডিফেন্স এবং লেফটব্যাক দুই পজিশনেই খেলতে পারেন। সর্বশেষ প্লে অফে ইউক্রেনের বিরুদ্ধেও বীরত্বপূর্ণ কিছু ব্লক করে দলকে বাঁচিয়েছেন। ২৯ বছরের এই ডিফেন্ডার ইতোমধ্যে জাতীয় দলের হয় ৭৪টি ম্যাচ খেলেছেন। তার মূল্য ৩০ মিলিয়ন ইউরো, যা তাকে ওয়েলস দলের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়ে পরিণত করেছে।

অ্যারন রামসে: ২০০৮ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত আর্সেনালের হয়ে ২৬৭টি ম্যাচ খেলা রামসে তার স্বর্ণালী সময় ফেলে এসেছেন। কিন্তু মিডফিল্ডে তিনি এখনও ওয়েলসের সেরা খেলোয়াড়। কারিগরি দক্ষতা ও আক্রমণাত্মক ক্ষমতা ছাড়াও শক্তি, দৃঢ়তা ও মাঠ জুড়ে কাজ করার জন্য তিনি সর্বজনবিদিত। তিনি গোল করানোর পাশাপাশি নিজেও গোল করাতে পটু। ৩১ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার এখন পর্যন্ত জাতীয় দলের হয়ে ২০টি গোল করেছেন। তবে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ক্যারিয়ার জুড়ে তাকে ইনজুরির সাথে লড়াই করতে হয়েছে। ২০১৩-১৪ মৌসুমে আর্সেনালের প্লেয়ার অফ দ্যা সিজন পুরস্কার পাওয়ার পথে তিনি ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ১০০০টি পাস দিয়েছিলেন, ইনজুরির জন্য মৌসুমের তিনটি মাস মিস করলেও সবচেয়ে বেশি ট্যাকল তিনিই করেছিলেন এবং এর পাশাপাশি দলের দ্বিতীয় শীর্ষ গোলদাতা (১৬টি গোল করেন) ও দ্বিতীয় সেরা গোল সহায়তাকারী ছিলেন।

জো অ্যালেন: ৩২ বছরের এ যুবক বর্তমানে ইনজুরিতে আক্রান্ত হওয়ার কারণে তার দলের কোচের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। শারীরিকভাবে তিনি শক্তিশালী না হলেও কঠোর পরিশ্রমী ও কৌশলগত ভাবে সুশৃংখল হবার কারণে দলকে রক্ষণাত্মক ও আক্রমণাত্মক দুই ভাবেই সাহায্য করতে পারেন। বল নিয়ন্ত্রণে রাখা, মাঠে জায়গা মতো স্পেস তৈরি করা এবং সুদক্ষ পাসিংয়ের কারণে লিভারপুলে খেলার সময় তৎকালীন কোচ ব্র্যান্ডন রজার্স তাকে ইতালির ‘পিরলো’ বলে অভিহিত করেছিলেন।

আমার দেখা ওয়েলসর সেরা ১৪ খেলোয়াড়—

এই দলে নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়দের আধিক্য বেশি (বর্তমান জাতীয় দলের ৬ জনই আছেন এই দলে এদের মধ্যে ৫ জনই আছেন সেরা একাদশে)। ওয়েলস দলের দুর্বলতা হচ্ছে তাদের ডিফেন্স।

গোলরক্ষক:- ওয়েন হেনেসি (ম্যাচ: ১০৬। বয়স: ৩৫ বছর। উলভারহ্যাম্পটন এবং ক্রিস্টাল প্যালেসে খেলেছেন ২৬২টি ম্যাচ। এখনো জাতীয় দলে খেলে যাচ্ছেন)।

রক্ষণভাগ:-

রাইটব্যাক: ক্রিস গুন্টার (ম্যাচ: ১০৯।‌‌ বয়স: ৩৩ বছর। ক্লাব লেভেলে সর্বোচ্চ ২৮০টি ম্যাচ খেলেছেন রিডিং ক্লাবের হয়ে। বর্তমান জাতীয় দলে আছেন)।

সেন্টারব্যাক: অ্যাশলে উইলিয়ামস (ম্যাচ: ৮৬, গোল: ২। এভারটন, স্টোক সিটি ছাড়াও সোয়ানসি সিটির হয়ে খেলেছেন ৩২২টি ম্যাচ)।

জেমস কলিন্স (ম্যাচ: ৫১, গোল: ৩। ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেডে খেলেছেন ১৮৮টি ম্যাচ আর অ্যাস্টন ভিলাতে ৯১টি)।

লেফটব্যাক: বেন ডেভিস (ম্যাচ: ৭৪  গোল: ১।‌‌ বয়স: ২৯ বছর। এখনো জাতীয় দলের খেলছেন। টটেনহ্যামে‌ অদ্যাবধি খেলেছেন ১৮২টি ম্যাচ)।

মধ্যমাঠ:- গ্যারি স্পিড (ম্যাচ: ৮৫, গোল: ৭।‌‌‌‌ তিনি ইংল্যান্ডে ৬৭৭টি ম্যাচ খেলেছেন লিডস ইউনাইটেড, এভারটন, নিউক্যাসল ইউনাইটেড, বোল্টন ওয়ান্ডারার্স এবং শেফিল্ড ইউনাইটেডে)।

অ্যারন রামসে (ম্যাচ: ৭৫, গোল: ২০।‌‌ বয়স:‌‌ ৩১ বছর। বর্তমান জাতীয় দলে এখনো খেলছেন। আর্সেনালে খেলেছেন ২৬২টি ম্যাচ এবং বর্তমানে ফ্রান্সের নিস দলে হয়ে খেলছেন)।

রায়ান গিগস (ম্যাচ: ৬৪। গোল: ১২। এই লেফট উইঙ্গার সারা জীবনে মাত্র ১টি ক্লাবে খেলেছেন, আর সেটি হচ্ছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, যাদের হয়ে ৬৭২টি ম্যাচ খেলেছেন আর গোল করেছেন ১১৪টি)।

গ্যারেথ বেল (ম্যাচ: ১০৮, গোল: ৪০। বয়স: ৩৩ বছর। রিয়াল মাদ্রিদ এবং টটেনহ্যামে যথাক্রমে ১৭৬টি ও ১৬৬টি ক্লাব ম্যাচ খেলেছেন। রিয়াল মাদ্রিদে গোল করেছেন ৮১টি। তিনি বর্তমানে জাতীয় দলের হয়ে অধিনায়কত্ব করছেন)।

স্ট্রাইকার: মার্ক হিউজ (ম্যাচ: ৭২, গোল: ১৬।‌‌ তিনি সবচেয়ে বেশি ৩৪৫টি ম্যাচ খেলেছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে এবং গোল করেছেন ১২০টি। এছাড়াও খেলেছেন বার্সেলোনা, বায়ার্ন মিউনিখ, চেলসি,‌‌ সাউদাম্পটন,‌ ব্ল্যাকবার্ন রোভারস প্রভৃতি দলের হয়ে)।

ইয়ান রাশ (ম্যাচ:‌‌‌‌‌‌‌ ৭৩, গোল: ২৮। শুধু লিভারপুলেই খেলেছেন ৪৬৯ ম্যাচ আর গোল করেছেন ২২৯টি)। গ্যারেথ বেলের মত খেলোয়াড় থাকা সত্ত্বেও ইয়ান রাশই হচ্ছেন আমার কাছে ওয়েলসের সবচেয়ে প্রিয় খেলোয়াড়, তাহলে বুঝুন উনি আমার ছোটবেলায় কতটুকু প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছিলেন।

অতিরিক্ত: ডিফেন্ডার, ড্যানি গ্যাবিডন (ম্যাচ: ৪৯। ক্লাবে কার্ডিফ সিটি ও ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেডে ১৯৩ এবং ৯৬টি ম্যাচ খেলেছেন)।

মিডফিল্ডার, জো অ্যালেন (ম্যাচ: ৭২, গোল: ২।‌‌ বয়স:‌‌ ৩২ বছর। বর্তমান জাতীয় দলে এখনো খেলছেন। ক্লাব দলে এখন খেলছেন সোয়ানসি সিটির হয়ে। তিনি এখন পর্যন্ত ক্লাবে সর্বমোট ৪৩৮টি ম্যাচ‌ খেলেছেন সোয়ানসি সিটি, লিভারপুল এবং স্টোক সিটির হয়ে)।

স্ট্রাইকার, ক্রেইগ বেলামি (ম্যাচ: ৭৮, গোল: ১৯। তিনি ১০টি ক্লাবের হয়ে ৪৫৮টি ম্যাচ খেলেছেন যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দলগুলো ছিল নিউক্যাসল, লিভারপুল, ম্যানচেস্টার সিটি ইত্যাদি)।

সারাবাংলা/এসআইটি/এসএস

Tags: , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন