বিজ্ঞাপন

শেষ মুহূর্তে ব্যয় এবং মেয়াদ বাড়ছে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে

November 14, 2022 | 12:46 pm

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশের প্রথম কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের শেষ সময়ে ব্যয় ও মেয়াদ বাড়লো। এজন্য ‘কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহুলেন সড়ক টানেল নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব পাঠনো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। আগামী ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) সত্যজিত কর্মকার।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, টানেল নির্মাণের মূল প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা (এর মধ্যে সরকারি ৩ হাজার ৬৪৭ কোটি এবং প্রকল্প ঋণ ৪ হাজার ৭৯৯ কোটি ৪৪ লাখ)। এছাড়া ২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদেও নির্বাহী কমিটি) অনুমোদন দেওয়া হয় প্রকল্পটি। পরবর্তীতে এটির প্রথম সংশোধিত প্রস্তাব প্রায় ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়। তবে সে সময় মেয়াদ বাড়ানো হয়নি।

বর্তমানে বাস্তবায়ন পর্যায়ে ভেরিয়েশনের কারণে ব্যয় বৃদ্ধি, কিছু অঙ্গের কাজের পরিমাণ ও ব্যয় কমে যাওয়া বা বৃদ্ধি পাওয়া এবং ঋণ প্রদানকারী সংস্থার (চীনা এক্সিম ব্যাংক) দেওয়া অর্থের ডলারের সঙ্গে মূল্য অবমূল্যায়ন চুক্তি নবায়ন ইত্যাদি কারণে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে মেয়াদ এক বছর বাড়ানোও দরকার। এজন্য সেতু বিভাগ হতে মোট প্রকল্প ব্যয় ১০ হাজার ৫৪৩ কোটি ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রাক্কলন করে অর্থাৎ অনুমোদিত ব্যয় হতে ১৬৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা (১.৬৩ শতাংশ) বেশি ধরে দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি বাস্তবায়নকাল ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ অনুমোদিত মেয়াদকাল থেকে এক বছর বেশি প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়, চট্টগ্রাম শহর কর্ণফুলী নদী দিয়ে দুই ভাগে বিভক্ত। মূল শহর ও বন্দর এলাকা কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম পাশে অবস্থিত। অন্যদিকে ভারি শিল্প এলাকা পূর্ব পাশে অবস্থিত। বর্তমানে সচল দু’টি সেতুর মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান যান চলাচল সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও কর্ণফুলী নদীর তলায় পলি জমার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। পলি জমার সমস্যা সমাধানের জন্য কর্ণফুলী নদীতে নতুন সেতু নির্মাণের পরিবর্তে নদীর নিচ দিয়ে টানেল নির্মাণের প্রয়োজন।

বিজ্ঞাপন

প্রস্তাবিত এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়। এটি জি টু জি ভিত্তিতে নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরকালে ২০১৪ সালের জুনে চীন সরকারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়।

পরবর্তীতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ এবং এক্সিম ব্যাংক অব চায়নার সঙ্গে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর ৭০৫.৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ চুক্তি হয়েছে। প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ চলমান রয়েছে এবং প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। প্রস্তাবিত এ টানেলটি এশিয়ান হাইওয়ের মধ্যে অবস্থিত এবং এটি চট্টগ্রাম শহরের যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার পরিবর্তনের কারণে ব্যয় বৃদ্ধি এবং প্রকল্পের কার্যক্রমের পরিধি পরিবর্তন হয়েছে। এছাড়া সার্ভিস এরিয়ার তৈজসপত্র, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, আসবাবপত্র এবং গৃহসজ্জা সামগ্রী ক্রয়, নতুন অঙ্গ সংযোজন এবং বিনিময় হার কম বা বৃদ্ধি। আরও আছে ভ্যাট ও আইটি খাতে খরচ বৃদ্ধি বৃদ্ধিসহ নানা কারণে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাবের মেয়াদ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রকল্পটি সমাপ্ত করা সম্ভব হবে কি না সেটি জানতে চাওয়া হবে পিইসি সভায়। এছাড়া টানেল অ্যাপ্রোচ অঙ্গে প্রায় ৭২ কোটি ২৮ লাখ ১৩ হাজার টাকা বেশি প্রস্তাব করা হয়েছে। এ অঙ্গে ব্যয় বৃদ্ধির যৌক্তিকতা নিয়ে আলোচনা করা হবে। সংশোধনী প্রস্তাবে দু’টি পুলিশ স্টেশন (আনোয়ারা প্রান্তে ৪ তলা, পতেঙ্গা প্রান্তে ২ তলা বিশিষ্ট বিল্ডিং) এবং দু’টি ফায়ার স্টেশন (উভয় প্রান্তে ২ তলা বিল্ডিং) বাবদ ৩০ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ব্যয় প্রস্তাবে গণপূর্ত অধিদফতরের রেট সিডিউল অনুসরণ করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হবে সভায়।

এছাড়া টোল প্লাজায় ২৫ কোটি ৫৫ লাখ ৭৭ হাজার টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। ডিপিপিতে দেখা যায়, এই খাতে এখন পর্যন্ত কোন অর্থই ব্যয় হয়নি। ফলে এটি নিয়েও জানতে চাওয়া হবে সভায়।

পরিকল্পনা কমিশন থেকে আরও জানা যায়, প্রকল্প ঋণ খাতে ৪১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির নিয়ে ইআরডির প্রতিনিধি আলোচনা করতে পারেন।

পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটি এখনও সেক্টর পর্যায়ে থাকতে পারে। ব্যয় বা মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি আমার জানা নেই।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেজে/এমও

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন