বিজ্ঞাপন

দেশের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ বিদ্যালয়ে নেই শহিদ মিনার

November 19, 2022 | 10:31 am

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ বিদ্যালয়ে নেই শহিদ মিনার। এ বিষয়ে নেই কোন স্বতন্ত্র প্রকল্পও। বিভিন্ন সময় বিচ্ছিন্ন কিছু উদ্যোগ থাকলেও শেষ পর্যন্ত সেগুলো কার্যকর হয়নি। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ে বিরাজ করছে একই চিত্র। এ সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের কাছে। ফলে ভাষা শহিদদের প্রতি সম্মান জানানোর এবং একুশের চেতনা বিকাশে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সারাবাংলাকে বলেন, আমরা মনে করি সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার হওয়া দরকার। আমি আমার চত্বরে করেছি। যখন যেখানে যাই সেখানে দেখি বাঁশ ও কাঠসহ যে যা পারে তাই দিয়ে শহিদ মিনার বানিয়ে নেয়। তবে সরকার যদি সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে আমরা দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নির্মাণ করা হবে।

সূত্র জানায়, দেশের ৬৩ হাজার ৬০১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে শহিদ মিনার আছে মাত্র ২৩ হাজার ৬০০টিতে। বাকি ৪০ হাজারটি বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার নেই। অন্যদিকে, মাধ্যমিক স্তরের ৩৩ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র সাড়ে ১০ হাজার প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার আছে। বাকী সাড়ে ২২ হাজার প্রতিষ্ঠানেই শহিদ মিনার নেই।

এ অবস্থায় অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি ২০১৯ সালে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প নেওয়ার সুপারিশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে। কিন্তু সেই সুপারিশ আজও বাস্তবায়িত হয়নি। পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ এবং ভৌত অবকাঠামো বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এ সংক্রান্ত স্বতন্ত্র কোনো প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা সচিব মামুন-রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, আমার নজরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নির্মাণের কোনো প্রকল্প চোখে পড়েনি। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যদি এই ধরনের প্রকল্প পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠায় তাহলে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখবো।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে এক হাজার ২৪০টি। এর মধ্যে প্রায় ৩০০টি বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার আছে। বাকি ৯৪০টিতেই নেই শহিদ মিনার। নেত্রকোণার ১০ উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ১ হাজার ৩১৫টি। এর মধ্যে শহিদ মিনার আছে মাত্র ৩৯৪টিতে। বাকি ৯২১টিতেই শহিদ মিনার নেই। নওগাঁ জেলার ১১টি উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১ হাজার ৩৭৫টি। এর মধ্যে ৯০ ভাগ স্কুলে কোনো শহিদ মিনার নেই। দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলায় মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত মোট ১ হাজার ১৭৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯৭৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো শহিদ মিনার নেই। এছাড়া জেলার ৩১৯টি মাদরাসার কোনোটিতেই শহিদ মিনার নেই। নীলফামারীর জলঢাকায় শহিদ মিনার নেই প্রায় একশ’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ২৪৬টি বিদ্যালয়ের মধ্যে শহিদ মিনার নেই ৪৬টি বিদ্যালয়ে। অপরদিকে মাধ্যমিক স্তরের বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৯৮টি। এর মধ্যে শহিদ মিনার নেই প্রায় ৪০টি বিদ্যালয়ে। আরও জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলার ১ হাজার ৫২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৬৬৬টিতেই শহিদ মিনার নেই। এছাড়া মাদরাসা ও কিন্ডারগার্টেনগুলোর সিংহভাগেই নেই শহিদ মিনার।

এছাড়া নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার ১৪৯টি সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো শহিদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় ৮০টি সরকারি প্রাথমিক, ১৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৪টি কলেজ ও ৪টি মাদরাসা আছে। এছাড়া আছে প্রায় ৩০টি কিন্ডারগার্টেন। এর মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার রয়েছে। পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার ২২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভাষা শহিদদের জন্য নির্মিত হয়নি কোনো শহিদ মিনার। এ উপজেলার ২৩৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ১৬টি বিদ্যালয়ে রয়েছে শহিদ মিনার। বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় ২৮৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নেই। মাত্র ২৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার আছে।

বিজ্ঞাপন

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান সারাবাংলাকে বলেন, কতগুলো স্কুলে শহিদ মিনার নেই সেগুলোর তথ্য আমরা সংগ্রহ করছি। এখনো সব তথ্য আমরা হাতে পাইনি। সরকারের একটা গাইড লাইন আছে। সেই গাইড লাইন অনুযায়ী আমরা কাজ করব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শহিদ মিনার হওয়া দরকার।

সূত্র জানায়, গত বছরের জানুয়ারি মাসে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাসিক সমন্বয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল সারাদেশে অভিন্ন ডিজাইনের শহিদ মিনার নির্মাণ করা হবে। কিন্তু সেই উদ্যোগও পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি।

এদিকে, কয়েকমাস আগে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের আদলে দেশে-বিদেশে সর্বত্র একই ডিজাইনের শহিদ মিনার নির্মাণের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। এর আগে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের কাঠামো অনুসরণ করে সবখানে একই ডিজাইনের শহিদ মিনার নির্মাণের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে জনস্বার্থে রিট করেন আইনজীবী শহিদুল ইসলাম মিলন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেজে/রমু

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন