বিজ্ঞাপন

শিশুদের নিরাপত্তা কোথাও নেই

November 28, 2022 | 6:08 pm

কবিতা রাণী মৃধা

একটি শিশু পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে স্নেহ, ভালোবাসা, আদর-সোহাগ, বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা আর সুন্দরের প্রত্যাশা নিয়ে। শিশুকে দেখলেই কোলে তুলে নিয়ে আদর করতে ইচ্ছে করে সবার। সেই শিশুর জীবনই যদি নিরাপদ না হয়, তাহলে গোটা সমাজই বিপদের সম্মুখীন হবে। আজ যারা শিশু, ভবিষ্যতে তারাই হবে দেশ গড়ার কারিগর। শিশুরাই জাতির মেরুদণ্ড এবং সেরা সম্পদ; অথচ সেই শিশুদেরকেই এখন নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে শিশুহত্যা অপ্রতিরোধ্য গতিতে বেড়েই চলেছে, কিছুতেই থামছে না। প্রতিদিন কোনো না কোনো শিশু হত্যার শিকার হয়ে মা-বাবার কোল খালি করে দিচ্ছে। শিশু হত্যাকাণ্ড বর্তমানে সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে, যা খুবই উদ্বেগজনক। বেশির ভাগ শিশুকে পারিবারিক কলহ, প্রতিহিংসা, লোভ-লালসা চরিতার্থ, জায়গা-জমি বা সম্পত্তি নিয়ে শত্রুতা বা বিরোধ, মুক্তিপণ ও স্বার্থ আদায়, সামাজিক অস্থিরতা এবং অবক্ষয়, মূল্যবোধের অভাব, মা-বাবার সম্পর্কের জটিলতা, ব্যক্তিগত আক্রোশ, মানসিক বিষাদ, হতাশা ইত্যাদি কারণে হত্যা করা হচ্ছে। শিশু হত্যাকাণ্ডগুলো খুবই মর্মান্তিক এবং দুঃখজনক, যা সবাইকে যেমন বেদনাহত ও ক্ষুব্ধ করে তোলে, তেমনি স্তম্ভিত না করে পারে না। এমন হূদয়বিদারক ঘটনায় আমাদের বিবেকবুদ্ধি হঠাত্ থমকে যায়। তবে মাঝে মাঝে নিজের পিতা-মাতার দ্বারাও শিশুসন্তান হত্যার শিকার হচ্ছে; যা শুনে আমরা হতবাক হয়ে যাই এবং বিচলিত হয়ে পড়ি। সন্তানহারা পিতা-মাতার কান্না আর আর্তনাদে সবার চোখ অশ্রুভারাক্রান্ত হয়ে হূদয়ে বেদনা জাগায়।

বিজ্ঞাপন

অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, সমাজে সবচেয়ে নিরীহ শিশুরা। সামাজিক অবক্ষয় এবং তুচ্ছ কারণেও শিশুহত্যার ঘটনা ঘটছে। শিশুদের টার্গেট করা খুব সহজ। তাই তাদের টার্গেট করে অপহরণ এবং হত্যা করা হচ্ছে। সমাজ ও রাষ্ট্রে যে কোনো অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হলে শিশুদের টার্গেট করা হয়। আজ ভাবতেও অবাক হতে হয়, মানুষ এখন কতটা নিষ্ঠুর হয়ে উঠেছে। পত্রিকার পাতায় যেসব লোমহর্ষক কাহিনী প্রতিদিন ছাপা হচ্ছে তা সব ব্যাখ্যাকে হার মানিয়েছে।

শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত এক হাজার ৯৭৪ শিশুর অধিকার হরণের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে হত্যা ও অপমৃত্যুর শিকার হয় ৫৬৬ শিশু, নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করে ৬৬, ধর্ষণের শিকার হয় ১৮২, গণধর্ষণ করা হয় ২৩ শিশুকে। সংগঠনগুলোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় ২০১৫-১৬ সালে শিশু নির্যাতনের ধরন ও পরিধি বেড়েছে। নির্যাতনের ক্ষেত্রে নৃশংসতার মাত্রাও বেড়েছে বহুগুণ। ২০১৪ সালে ২২ এবং ২০১৫ সালে ৯৯ শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। আর ২০১৭ সালের প্রথম পাঁচ মাসেই ২৩ শিশু ধর্ষণের মতো পাশাবিক নির্যাতনের শিকার হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, শিশু ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতরা তাদের নিকটাত্মীয় অথবা প্রতিবেশী। ২০২২ সালে এই ধরনের ঘটনা আরো বেশি বেড়েছে।

অনেক সময় অপরাধীরা প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকায় আইনপ্রক্রিয়া স্বাভাবিক গতি পায় না। আইনের ম্যারপ্যাঁচ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার কারণে অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। তাছাড়া অনেক সময় আইনের সঠিক প্রয়োগ ও ব্যবহার না-করা এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে আসামির শাস্তি নিশ্চিত করা যায় না। ফলে আসামিরা আইনকে বৃদ্ধাঙুলি প্রদর্শন করে দ্বিগুণ উত্সাহে অপরাধের পুনরাবৃত্তি করতে থাকে। দ্রুত বিচারের মাধ্যমে যদি অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়, তবে তাদের অপরাধ করার স্পৃহা কমে যাবে। অপরাধীদের ভয়াবহ দানবীয়তা শেষ হয়ে তাদের হূদয়ে মনুষত্বের জাগরণ এবং শুভবুদ্ধির উদয় হোক—এটা আমার, আপনারসহ প্রতিটি শান্তিপ্রিয় নাগরিকের একমাত্র কাম্য। জন রাসকিনের মতে, একটি শিশুকে যদি দাও সামান্য ভালোবাসা, তোমাকে সে ফিরিয়ে দেবে অনেকখানি।

বিজ্ঞাপন

শিশুহত্যার ঘটনার পুনরাবৃত্তি কখনই কারো কাম্য নয় (শিশু হত্যা কেন, কোনো হত্যাকান্ডই কাম্য নয়)। কারণ, আজকের শিশুরা আগামীদিনের কর্ণধার। শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভর না করে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশকে শিশুবান্ধবে পরিণত করতে হবে। যাতে এ দেশে শিশুদের বসবাস হয় ভাবনাহীন ও নিরাপদ। আর এটাই দেশবাসীর একমাত্র প্রত্যাশা। পাশাপাশি শিশুদের সুরক্ষার জন্য যে আইন প্রচলিত আছে, সেগুলোর যথাযথ প্রয়োগ ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। শিশুর বিষয়টি অনেক বেশি স্পর্শকাতর হওয়ার আরো একটি কারণ আছে। যে শিশুটি অপরাধের শিকার হয়, সে সঠিকভাবে ঘটনাবলীর বর্ণনা করতে পারে না। ফলে অনেক সময় আইনের ফাক গলে অপরাধীর বের হয়ে যাওয়ার সুয়োগ তৈরি হয়। এ কারণেও শিশুদের নিরাপত্তা ও নিরাপদ আশ্রয় অধিক প্রাসঙ্গিক।

লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

বিজ্ঞাপন
প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন