বিজ্ঞাপন

চলছে মেট্রোরেল উদ্বোধনের প্রস্তুতি, অপেক্ষায় রাজধানীবাসী

December 24, 2022 | 8:51 am

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সাধারণ ট্রেনের মতোই কী মেট্রো? সেখানে সবাই যাতায়াত করতে পারবে, নাকি বিশেষ কোনো শ্রেণির মানুষের জন্য? মেট্রোরেল চলবে কীভাবে, ধীরে নাকি দ্রুত— মেট্রোরেল নিয়ে এমন শত প্রশ্ন তাদের মনের মধ্যে। দেশের সাধারণ মানুষের কাছে মেট্রোরেল একটি সম্পূর্ণ নতুন পরিবহন। এতোদিন সিনেমায় কিংবা লোকমুখে মেট্রোরেলের কথা যারা শুনেছেন, এবার তারা তা নিজ চোখে দেখতে চলেছেন। যাতায়াত করার সুযোগ হচ্ছে। সেজন্য মেট্রোরেল নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহের যেন সীমা নেই। এদিকে আগামী ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। লাইন, ট্রাক, কন্ট্রোল সেন্টার থেকে শুরু করে সবর্ত্রই চলছে শেষ সময়ের পরীক্ষা।

বিজ্ঞাপন

দিনের হিসাব করলে আর মাত্র ৪ দিন বাকি। এরপরই রাজধানীর বুক চিরে যাত্রী নিয়ে ছুঁটবে উন্নত দেশের মতো স্বপ্নের মেট্রোরেল। বাণিজ্যিকভাবে মেট্রোরেল পরিচালনার জন্য এখন চলছে সিমিউলিটর টেস্ট অর্থাৎ কোন স্টেশনে কতক্ষণ ট্রেন থামবে, ট্রাকের বিভিন্ন বাঁকে কিভাবে ট্রেন নিয়ন্ত্রণ করা যাবে এসব বিষয়ে চূড়ান্ত টেস্ট চলছে। বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু হলে কীভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করা হবে সে হোমওয়ার্কও চলছে কন্ট্রোল সেন্টারে। কীভাবে সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, কমিউনিকেশন প্রক্রিয়া, রেলের ট্রাক সব মনিটর করা যাবে এখান থেকে। এমনকি কোনো যাত্রীর কারণে ট্রেনের দরজা বন্ধ করা না গেলে এখান থেকে মনিটর করে ব্যবস্থা নিতে পারবে।

ডিএমটিসিএলে’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক বলেন, ‘মেট্রোরেল চব্বিশ ঘণ্টা চলাচলের যানবাহন। যতক্ষণ চলবে এর বাইরে মেইনটেইনেন্স করতে হবে। যেহেতু এটা ৩৬৫ দিনই চলবে, সে হিসাব করেই আমাদের পর্যাপ্ত জনবল নেওয়া হয়েছে এবং তারা প্রশিক্ষিত।’

স্টেশনের ভেতরের পাশাপাশি রাস্তা আর ফুটপাতে চলছে শেষ সময়ের কাজ। আর এতেই স্বস্তি পাচ্ছেন নগরবাসী। প্রহর গুণছেন চালু হওয়ার। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মেট্রোরেল স্টেশন সড়কে কথা হয় ব্যবসায়ী মনসুর আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেল আমাদের জন্য স্বপ্নের মতো। এতোদিন কোনো কোনো সিনেমায় দেখেছি আবার যারা বিদেশ থেকে ঘুরে আসতেন তারা মেট্রোরেল নিয়ে গল্প করতেন, যে কীভাবে মাটির নিচ দিয়ে মেট্রো দ্রুত চলাচল করে। যদিও আমাদের দেশে মেট্রোরেল চলবে উপর দিয়ে। যেভাবেই চলুক চালু হচ্ছে, এতে আমরা ভীষণ খুশি।’

বিজ্ঞাপন

তবে রিকশাচালক মুজিবুরের মনে অনেক প্রশ্ন। তার চিন্তা মেট্রোতে সে উঠতে পারবে কি না, যদি উঠতে হয় তাহলে তাকে প্যান্ট-শার্ট পড়ে উঠতে হবে কিনা। মুজিবুর বলেন, ‘শুনেছি এই ট্রেন দ্রুত চলবে। বিদ্যুতের দরজা। মুহূর্তেই বন্ধ হয়। টিকিট নাকি মেশিন দেবে। সেখানে পড়াশোনা না জানা মানুষ কি করে মেট্রোতে উঠবে?’

জীবনের অর্ধেক বাস চালিয়ে শেষ করা খালেক সর্দারও মেট্রোর যাত্রী হতে চান। তিনি বলেন, ‘আমার বাসা উত্তরা, সেখান থেকে প্রতিদিন মিরপুর ১৪ নম্বর এসে বাস নিয়ে ঢাকার পথে নামতে হয়। প্রতিদিন যাত্রাবাড়ী থেকে মিরপুর ১৪ পর্যন্ত যেতে আসতেই দিন পার। এখন আর ভোররাতে উঠে রওয়ানা দিতে হবে না। মেট্রোতে ১৫ মিনিটেই পৌঁছে যেতে পারবো।’

সমীক্ষা বলছে, এই নগরে প্রতি বছর ৩৬ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয় শুধু যানজটের কারনে। যানজটে ঠেঁসে থাকা এই নগরীকে নি:শ্বাস দিতে ২০১২ সালে মেট্রোরেল নির্মাণের অনুমোদন দেয় সরকার। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী মোট ৬ ধাপে মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। সে পরিকল্পনার প্রথম ধাপে গঠন করা হয় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। উড়াল ও পাতাল রেলপথ মিলিয়ে ৬ ধাপে রয়েছে, এমআরটি লাইন-৬, এমআরটি লাইন-১, এমআরটি লাইন-৫ এ দুই রুট রয়েছে নর্দান ও সাউদার্ন, এমআরটি লাইন-২, এমআরটি লাইন-৪। এরমধ্যে এমআরটি লাইন-৬ এর হাত ধরেই শুরু হয় মেট্রোরেলের কাজ।

বিজ্ঞাপন

এমআরটি লাইন-৬ এর আওতায় উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত নির্মাণ হবে ২১.২৬ কিলোমিটার উড়াল রেলপথ। এরমধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১.৭৩ কিলোমিটার পথ চালু হচ্ছে ২৮ ডিসেম্বর। আর এর মধ্য দিয়ে বৈদ্যুতিক ট্রেনের যুগে পা রাখতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। পরের ধাপে নির্মাণ হবে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত। এরপর তৃতীয় ধাপে নির্মাণ হবে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১.১৬ কিলোমিটার রেলপথ।

উল্লেখ্য, মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল স্থাপনে চলমান এ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিলো ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এরপর কমলাপুর পর্যন্ত যুক্ত হওয়ায় এর ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকায়। এরমধ্যে জাইকা ১৯ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা দিচ্ছে আর সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করবে ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা।

 

মেট্রোরেল সংক্রান্ত আরও সংবাদ:

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেআর/এমও

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন