বিজ্ঞাপন

সমালোচিত দুদক, পরিস্থিতি ছিল ‘বিব্রতকর’

January 2, 2023 | 9:25 am

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সমালোচনা যেন পিছু ছাড়েনি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)। তাই ২০২২ সালেও সমালোচিত দুদক। এমনকি দুর্নীতি প্রতিরোধ নিয়েও দুদক প্রশ্নের মুখে পড়েছে। দুদক কর্মকর্তা ‘শরীফ কাণ্ডে’ও বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় কমিশনকে। এমনকি বছরের পর বছর দুদকে মামলা ঝুলে থাকায় আদালতেও সমালোচিত হয় দুদক। আবার বছর শেষে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট ও মামলা দায়ের করেও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে কমিশন।

বিজ্ঞাপন

দুদক সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে কমিশনে প্রায় ২০ হাজার অভিযোগ জমা পড়ে। যার মধ্যে কমিশন ৮৪০টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করে। এছাড়া ৩০৬০টি অভিযোগ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে ব্যবস্থা নিতে। আর ১৪ হাজার ১১৯টি অভিযোগ কিছুই করা হয়নি। হিসাবের খাতায় সংখ্যার পরিমাপে দুদক ২২ সালে মাত্র সাড়ে ৪ শতাংশ অভিযোগ আমলে নিয়েছে।

শুধু কি তাই, ২০২১ সালে দুদকে মোট অভিযোগ জমা পয়ে প্রায় ১২ হাজার, ২০২০ সালে ১৮ হাজার ৪৮৯। ফলে কমিশনে অভিযোগ জমার পরিমাণ বাড়ছে কিন্তু অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত কমছে। এছাড়া ২০২২ সালে ৩৫০টির বেশি অভিযোগ অনুসন্ধান করেছে কমিশন। একই অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে ৩ শতাধিক, মামলা দায়ের করা হয়েছে প্রায় ২৮০টি এবং চার্জশিট দেওয়া হয়েছে প্রায় ১৭০টি এবং চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে ৭৮টি। এছাড়া দুদকে বর্তমানে ৩ হাজার ৫৭৮টি অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে আর মামলা চলমান আছে ১৭০০টি।

কমিশনে এত এত অভিযোগ কিন্তু অনুসন্ধান কেন কম হচ্ছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনের সচিব মো. মাহবুব হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এখানে যে পরিমাণ অভিযোগ আসে আমরা সব অভিযোগ আমলে নিতে পারি না। বেশিরভাগই অভিযোগ আমাদের এখতিয়ারের বাইরে। সেক্ষেত্রে আমাদের হয়তো অন্যান্য দফতরে পাঠাতে হয়, নয়তো আর কিছুই করার থাকে না। তফসিলভূক্ত অপরাধ না হলে আমরা আমলে নিতে পারি না। অভিযোগ আসার বেশির ভাগ অভিযোগ দুদকের তফসিলভুক্ত নয়। তাহলে আমরা কিভাবে সেগুলো অনুসন্ধান করবো। তবুও আমরা চেষ্টা করছি। জনগণের সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ত করতে কাজ করছি।’

বিজ্ঞাপন

আলোচনায় পি কে হালদার
আর্থিকখাত থেকে অর্থ আত্মসাৎ করে ভারতে গ্রেফতার হওয়া পি কে হালদার নিয়ে বছর জুড়েই আলোচনা ছিলো তুঙ্গে। কখন কবে পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে সেটা নিয়ে সমালোচিতও হতে হয়েছে কমিশনকে।

শেষমেষ ২০২২ সালে পি কে হালদারকে আর দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। আদৌ কমিশন পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারবে কি না সেটা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনার কথা বললেও এখনও কোনো উদ্যোগ নিতেই পারেনি কমিশন।

আদালতে সমালোচিক দুদক
দুর্নীতি দমন, নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিরোধে ২০০৪ সালে যাত্রা শুরু করে দুদক। এরপর দুর্নীতি দমন ব্যুরো থেকে হয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কিন্তু দুদকে বছরের পর বছর মামলা ঝুলে থাকা এবং ‘চুনোপুঁটি’দের পেছনে বেশি সময় ব্যয় করা, একইসঙ্গে বছরের পর বছর বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির মামলার চার্জশিট শেষ না হওয়ায় আদালতে সমালোচিত হয় দুদক।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া এক ব্যাংক কর্মকর্তার জামিনের সময় দুদক নীরব ভূমিকা পালন করলে হাইকোর্ট কারণ জানতে চান। সেখানেও সমালোচিত হয় কমিশন।

বছর জুড়ে শরীফকাণ্ডে বিব্রত দুদক
চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারে একের পর এক সফল অভিযান চালিয়ে দুদক থেকে সততার পুরষ্কার পান দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন। কিন্তু বিধিমালা ভঙের অভিযোগ তুলে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি দুদক থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এর পরদিন ১৭ ফেব্রুয়ারি এ ঘটনায় মানববন্ধন করে ঢাকাসহ ২১ জেলার দুদক কর্মকর্তারা।

এমনকি ক্ষমা চেয়ে দুদকের চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করলেও তিনি আর চাকরি ফিরে পাননি। এই ঘটনায় বছর জুড়ে সমালোচিত হয় কমিশন। শরীফ কান্ডে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে দুদক।

বছর শেষে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা
বছর শেষের মুহূর্তে প্লট জালিয়াতি ও নকশা বহির্ভূতভাবে হোটেল সারিনা নির্মাণের অভিযোগ এনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও তার স্ত্রীসহ ৫ জনের নামে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসময় সাংবাদিকরা নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতাদের নামে মামলা করা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে দুদক সচিব বলেন, ‘না। অনুসন্ধান শেষে মামলা করা হয়েছে। এখানে রাজনৈতিক কোনো বিষয় নেই।’

বিজ্ঞাপন

বিএনপি নেতা আমির খসরুর মামলার রেশ না কাটতেই সাবেক মন্ত্রী ও ঢাকার সাবেক মেয়র বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাসের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কমিশন সূত্রে জানা যায়, আফরোজা আব্বাস একজন গৃহিণী। কিন্তু তার স্বামী মির্জা আব্বাসের বিভিন্ন খাতের টাকা স্ত্রীর নামে হস্তান্তর করেছেন। আফরোজা আব্বাস নিজেকে একজন হস্তশিল্প ব্যবসায়ী হিসেবে আয়কর নথিতে উল্লেখ করলেও তার নিজের আয়ের কোনো বৈধ উৎস নেই।

দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯১ সালের আগে মির্জা আব্বাসের উল্লেখযোগ্য কোনো আয় ছিল না। তিনি ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র ও পরে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী হওয়ার সুবাদে অর্থ অর্জন করেন। এরপর স্বামীর যোগসাজশে আফরোজা আব্বাস ২০ কোটি ৭৬ লাখ ৯২ হাজার টাকার সম্পদ অবৈধ পন্থায় অর্জন করেছেন।

সারাবাংলা/এসজে/এমও

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন